দেশীয় বা যৌথ বিনিয়োগে নির্মিত বিদ্যুৎকেন্দ্র ছাড়াও দেশের বড় বড় প্রায় সব প্রকল্পের বীমাই রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান ‘সাধারণ বীমা করপোরেশন’ (এসবিসি) করছে। কিন্তু এরপরও দেশে ব্যবসারত বিদেশি কোম্পানিগুলো বাংলাদেশের মাটিতে নির্মিত তাদের বড় প্রকল্পের বীমা কভারেজ এসবিসি থেকে নিচ্ছে না। এবার বিদেশি কোম্পানিগুলোর এ প্রবণতা বন্ধে কঠোর হয়েছে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা ‘বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ’ (আইডিআরএ)।
জানা যায়, সম্পূর্ণ বিদেশি অর্থায়নে মেঘনা ঘাটে ৭৫০ মেগাওয়াটের একটি বিদ্যুৎকেন্দ্র নির্মাণ করবে ভারতীয় প্রতিষ্ঠান ‘রিল্যায়েন্স গ্রুপ’। তবে সম্পূর্ণ বিদেশি বিনিয়োগের এ বিদ্যুৎ কেন্দ্রের বীমা ভারতে করতে চায় প্রতিষ্ঠানটি। এ নিয়ে গত ২৪ নভেম্বর আইডিআরএ’র সঙ্গে বৈঠকেও বসে প্রতিষ্ঠানটি। তবে নিয়ন্ত্রণ সংস্থা জানিয়ে দিয়েছে সম্পূর্ণ বিদেশি বিনিয়োগ থাকলেও তা যদি বাংলাদেশের মাটিতে হয়, তাহলে তার বীমা করতে হবে এ দেশেই।
জানা যায়, ‘বীমা আইন ২০১০’-এর ১৯ ধারা অনুযায়ী বাংলাদেশের মাটিতে অবস্থিত কোন সম্পত্তি বা স্বার্থের বীমা কর্র্তৃপক্ষের সনদপত্র ছাড়া দেশের বাইরে করা যাবে না। কর্তৃপক্ষ যদি সমীচীন মনে করে তবেই এই ধারার বিধান হতে অব্যাহতি দেয়া যাবে।
কর্তৃপক্ষের বক্তব্য হলো- আইনে এক্ষেত্রে দেশের বাইরে বীমা করার বিষয়ে শর্ত দেয়া হয়েছে। কিন্তু সে শর্তের মধ্যে রিল্যায়েন্স গ্রুপ পড়ছে না। কারণ বাংলাদেশের মাটিতে নির্মিত দেশি-বিদেশি অর্থায়নের বহু বড় বড় প্রকল্প বা বিদ্যুৎকেন্দ্রের বীমা করছে এসবিসি। সেই সামর্থ্য আমাদের রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানটির আছে। তাই এক্ষেত্রে রিল্যায়েন্স গ্রুপের বিনিয়োগ পুরোটা বিদেশি হলেও ব্যতিক্রম হবার সুযোগ নেই।
এ প্রসঙ্গে আইডিআরএ’র সদস্য বোরহান উদ্দীন আহমেদ বলেন, ‘রিল্যায়েন্স গ্রুপের প্রতিনিধিরা আমাদের সঙ্গে আলোচনা করেছে। তবে আমরা জানিয়ে দিয়েছি বিনিয়োগ সম্পূর্ণ বিদেশি হলেও যদি বাংলাদেশের মাটিতে হয় এবং তার ঝুঁকি নেয়ার সামর্থ্য যদি আমাদের থাকে, তাহলে এর বীমা দেশের বাইরে করার সুযোগ নেই।’
সাধারণ বীমা করপোরেশনের পুনঃবীমা বিভাগের উপ-মহাব্যবস্থাপক বলেন, ‘যেসব বিদেশি কোম্পানি এ দেশে ব্যবসা করছে তারা তাদের বীমা আমাদের সঙ্গে করতে চায় না। যদিও আমাদের সে সামর্থ্য আছে। সম্প্রতি রিল্যায়েন্স গ্রুপের বিষয়টি নিয়েও আইডিআরএ থেকে আমাদেরকে ডাকা হয়েছিল। আমরা জানিয়েছি অনেক বড় বড় প্রকল্পের বীমা কাভারেজ এসবিসি দিচ্ছে। তাই এক্ষেত্রেও কোন সমস্যা হবে না।’
জানা যায়, অনেক চেষ্টার পর বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটের বীমা ঝুঁকি গ্রহণ করে সাধারণ বীমা কর্পোরেশন। এ বীমা অংক বাংলাদেশি টাকায় ১৩৪ কোটি ২৮৮ লাখ টাকা। বীমার প্রিমিয়াম ধরা হয়েছে বাংলাদেশি টাকায় ৫ কোটি ৬৮ লাখ ২৭ হাজার টাকা। ভ্যাট হিসেবে সরকারি কোষাগারে জমা হচ্ছে বাংলাদেশি টাকায় ৮৫ লাখ ২৪ হাজার টাকা। এ বছরের ১১ জুলাই থেকে ২০২০ সালের ১০ জুলাই পর্যন্ত এক বছরের জন্য ফ্রান্সের কোম্পানি ‘থ্যালাস অ্যালেনিয়া’-কে বাদ দিয়ে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান ‘সাধারণ বীমা কর্পোরেশন’-এর সঙ্গে করা হয়েছে এ বীমা পলিসিটি।
এছাড়াও সরকারের গৃহীত মেগা প্রকল্পসমূহ যেমন মাতারবাড়ী কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎকেন্দ্র, সিঙ্গেল লাইন ডুয়েলগেজ রেলপথ দোহাজারী থেকে কক্সবাজার, পদ্মা সেতু রেল লিঙ্ক, রূপপুর নিউক্লিয়ার পাওয়ার প্ল্যান্ট, বঙ্গবন্ধু টানেল ও মেট্রোরেল প্রকল্পগুলোর বীমা ঝুঁকি গ্রহণ করে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে এসবিসি।
এসবিসি বলছে, দেশের সম্পদ দেশে রাখতেই এই উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়েছে। এতে দেশের বীমার প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা বাড়বে এবং সাধারণ বীমা কর্পোরেশন-এর সঙ্গে বিদেশি বীমা কোম্পানিগুলোও বীমা করতে উৎসাহিত হবে।
শেয়ারবার্তা/ সাইফুল ইসলাম