পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত জীবন বীমা কোম্পানি ‘প্রগতি লাইফ ইন্স্যুরেন্স’ তুলনামূলক বেশি দরে জমি কিনছে বলে অভিযোগ উঠেছে। সম্প্রতি গুলশানে ৬৫ কোটি টাকা দিয়ে ৮ দশমিক ০৬ কাঠা জমি কিনবে বলে ঘোষণা দিয়েছে প্রগতি লাইফ ইনস্যুরেন্স। নিয়ন্ত্রক সংস্থা ‘বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন’ (বিএসইসি) বিষয়টি খতিয়ে দেখতে চায়। এ জন্য প্রতিষ্ঠানটির কাছে এ সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য চাওয়া হয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
জানা যায়, কোম্পানিটি গুলশানে যে জমি কেনার ঘোষণা দিয়েছে; সেটি অতিমূল্যে কেনা হচ্ছে এমন অভিযোগ রয়েছে। এর পরিপেক্ষিতে বিএসইসি বিষয়টি খতিয়ে দেখতে চায়। এ জন্য জমি কেনা সংক্রান্ত বিস্তারিত তথ্য চাওয়া হয়েছে। কোম্পানিটি তার নিজস্ব ভবন তৈরির জন্য গুলশান-১, ১৮ ও ২১ নাম্বার রোডের ১৩ নাম্বার প্লটটি কিনবে। মোট ৮ দশমিক ০৬ শতাংশ বাণিজ্যিক প্লট কিনতে কোম্পানিটির ৬৫ কোটি টাকা খরচ হবে। এ জমি অতিমূল্যে কেনা হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে এক শেয়ারহোল্ডারের পক্ষ থেকে। সম্প্রতি ওই শেয়ারহোল্ডার বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) এবং বিএসইসির কাছে অভিযোগ করেছেন।
এ বিষয়ে প্রগতি লাইফের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মো. জালালুল আজিমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, ‘এ বিষয়ে আমি কিছু জানি না। তাই এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করবো না। আমি ঢাকার বাইরে একটা মিটিংয়ে আছি।’
অভিযোগে বলা হয়েছে, গুলশানে ৬৫ কোটি টাকা দিয়ে ৮ দশমিক ০৬ কাঠা জমি কিনবে বলে ঘোষণা দিয়েছে প্রগতি লাইফ ইনস্যুরেন্স। তবে এ জমি কেনা হলে কোম্পানিটির আর্থিক ভীত দুর্বল হবে। কতিপয় প্রভাবশালী পরিচালক ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হতেই জমি কেনার উদ্যোগ নিয়েছে।
অভিযোগপত্রে উল্লেখ করা হয়, জমির মালিক সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোরশেদ আলম। তিনি প্রগতি লাইফ ইনস্যুরেন্সের প্রভাবশালী পরিচালক আবদুল আউয়াল মিন্টুর ঘনিষ্ঠ। বিশেষভাবে লাভবান হওয়ার জন্যই আবদুল আউয়াল মিন্টু প্রগতি লাইফের গ্রাহকের টাকায় এ জমি কিনতে চান। এ জমি কেনা হলে বছরে কোম্পানিটির বিনিয়োগ থেকে আয় কমে যাবে প্রায় ৮-১০ কোটি টাকা। ফলে কোম্পানিটির আর্থিক ভীত দুর্বল হয়ে পড়বে। কোম্পানির শেয়ারহোল্ডার ও পলিসিহোল্ডারে স্বার্থ ক্ষুণ্ন হবে। কোম্পানিটির জীবন বীমা তহবিলে রয়েছে ৫৫৪ কোটি টাকা। এর মধ্যে গত বছর শেয়ার বাজারের বিনিয়োগে লোকসান হয়েছে প্রায় ৩০ কোটি টাকা। এই হিসাবে কোম্পানির প্রকৃত পক্ষে লাইফ ফান্ড রয়েছে ৫২৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি সিকিউরিটিজ বন্ড, বন্ড, শেয়ার বাজার ও অন্য খাতে মোট বিনিয়োগ রয়েছে প্রায় ৪৮৩ কোটি টাকা।
গত ২০১৮ সালে বিনিয়োগ থেকে আয় হয়েছে ৩৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা। যা লাইফ ফান্ডের ৭ দশমিক ৬৪ শতাংশ। গুলশানের ওই জমি কেনা হলে জমির দাম ও অন্য খরচসহ মোট ব্যয় হবে প্রায় ১০০ কোটি টাকা। এই হিসাবে লাইফ ফান্ড ১০০ কোটি টাকা কমে গেলে বিনিয়োগ আয় কমে যাবে বছরে ৭-৮ কোটি টাকা। অথচ জমির ওই বিনিয়োগ থেকে বছরে ৭ থেকে সাড়ে ৭ শতাংশ আয় হবে এর কোনো নিশ্চয়তা নেই।
এছাড়া বেশিরভাগ জীবন বীমা কোম্পানি জমিতে বিনিয়োগ করে লোকাসানে রয়েছে। ফলে তারা মেয়াদ শেষে সময়মতো গ্রাহকদের টাকা দিতে পারছে না। এ অবস্থায় জমি বিক্রি করে গ্রাহকদের টাকা দেয়ার নির্দেশ দিয়েছে নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ। এরপরও তারা জমি বিক্রি করতে পারছে না। এমন অবস্থায় জমি কেনার অনুমোদন না দিতে নিয়ন্ত্রক সংস্থাকে অনুরোধ করেছেন ওই শেয়ারহোল্ডার।
এ ক্যাটাগরির কোম্পানিটি ২০০৬ সালে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়। কোম্পানিটির মোট শেয়ারের ৪১ দশমিক ৩২ শতাংশ শেয়ার রয়েছে উদ্যোক্তা পরিচালকের হাতে। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে রয়েছে ২২ দশমিক ৭১ শতাংশ এবং ৩৫ দশমিক ৯৭ শতাংশ শেয়ার রয়েছে সাধারণ বিনিয়োগকারীর কাছে।
শেয়ারবার্তা/ সাইফুল ইসলাম