বন্ড মার্কেটের অচলাবস্থা দূর করতে কাজ করছে একটি ত্রিপক্ষীয় কমিটি। সেন্ট্রাল ডিপজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) বাইরে বাংলাদেশ ব্যাংকের (এমআই মডিউল) সার্ভার থেকে সরাসরি ব্রোকারেজ হাউজে লেনদেনের চিন্তা করা হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সংশ্লিষ্ট সূত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।
জানা যায়, এ বিষয়টি চূড়ান্ত করতে বাংলাদেশ ব্যাংক, বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জের (ডিএসই) প্রতিনিধি নিয়ে ত্রিপক্ষীয় কমিটি কাজ করছে। সেকেন্ডারি মার্কেটে ট্রেজারি বন্ডের লেনদেন চালু করার উপায় খুঁজছে এ কমিটি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেট ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মো. খুরশীদ আলমকে আহ্বায়ক করে ওই ত্রিপক্ষীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। বিএসইসির দুইজন উপপরিচালক ও ডিএসইর মার্কেট ডেভেলপমেন্ট এবং আইটি বিভাগের প্রতিনিধি রয়েছে কমিটিতে।
এক্ষেত্রে লেনদেন ফি বা ব্রোকারেজ কমিশন নিয়ে যে বাধা রয়েছে সেটি নিরসনের জন্য অনেকটা একমত হয়েছে কমিটি। প্রতিটি লেনদেনে ক্রেতা ও বিক্রেতা উভয় ৫০ টাকা করে একশ’ টাকা ফি দিবে বলে প্রাথমিক আলোচনা হয়েছে। এ বিষয়ে চূড়ান্ত করতে আরও কিছু দিন সময় লেগে যেতে পারে।
জানা গেছে, ২০০৫ সালের ১ জানুয়ারিতে ২২১টি ট্রেজারি বন্ড ডিএসইতে তালিকাভুক্ত হয়। কিন্তু তালিকাভুক্তির পর কোনো লেনদেন হয়নি। লেনদেন না হওয়ার পেছনে মূল কারণ ছিল কমিশন বা ফি। বর্তমানে বিনিয়োকারীদের কাছ থেকে ব্রোকারেজ হাউজগুলো শেয়ার কেনাবেচায় শতকরা ০.৫ শতাংশ পর্যন্ত সর্বোচ্চ ফি নিয়ে থাকে।
ক্রেতা-বিক্রেতা উভয়ই সমান ফি দেয়। সাধারণত শেয়ার অল্প টাকার ক্রয়-বিক্রয় হয়। কিন্তু বন্ড মার্কেটে অনেক বড় বড় লেনদেন হয়। সর্বনিন্ম ১০ লাখ টাকার লেনদেন হয়ে থাকে। তাই শতকরা হিসেবে অনেক কমিশন আসে। সেজন্য প্রতিটি লেনদেনে নির্ধারিত ফি নেয়ার প্রস্তাব করা হচ্ছে।
২০০৫ সালের ১ জানুয়ারিতে ২২১টি ট্রেজারি বন্ড ডিএসইতে তালিকাভুক্ত হয়। কিন্তু তালিকাভুক্তির পর কোনো লেনদেন হয়নি। এছাড়া ডিএসইর পক্ষ থেকেও বন্ড মার্কেট চালুর জন্য আবেদন ছিল। বিভিন্ন সময়ই বলাও হয়েছিল শিগগিরই বন্ড মার্কেট চালু হবে।
দীর্ঘদিন অকার্যকর অবস্থায় থাকায় বিষয়টি আলোচনায় ওঠে আসে। পরবর্তীতে বিষয়টি বিএসইসির নজরে আসে। বিএসইসির চেয়ারম্যান ড. এম খাইরুল হোসেন বন্ড মার্কেট সচল করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দেন। এরপর বিষয়টি নিয়ে কাজ শুরু হয়।
জানা গেছে, বাংলাদেশ ব্যাংক ‘এমআই মডিউল’ নামে নিজস্ব একটি বন্ড মার্কেট রয়েছে। বর্তমানে ওই মার্কেটে নিয়মিত সরকারি ট্রেজারি বন্ড লেনদেন হচ্ছে। এমআই মডিউলে বন্ডের বাজার মূলধন ২ লাখ ২০ হাজার কোটি টাকারও বেশি। জনপ্রিয়তা বাড়াতে বর্তমানে লেনদেনে কোনো ফি নিচ্ছে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক।
স্টক এক্সচেঞ্জে বন্ড লেনদেন হলেও সিডিবিএলে বন্ড ডিপোজিট বা জমা করবে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। তাদের সার্ভার থেকে সরাসরি ব্রোকারেজ হাউজে লেনদেন হবে। সাধারণত কোম্পানির শেয়ারগুলো সিডিবিএলে জমা রাখা হয়। এক্ষেত্রে বন্ডের ডিপজিটরি বাংলাদেশ ব্যাংক নিজেই।
এ বিষয়ে ডিএসইর পরিচালক রকিবুর রহমান বলেন, বন্ড মার্কেট চালু করার জন্য বিএসইসি ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সঙ্গে কাজ করছে ডিএসই। আশা করা যায় শিগগিরই একটি সহজ সমাধান আসবে। কমিটির আহ্বায়ক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেট ম্যানেজমেন্ট বিভাগের মহাব্যবস্থাপক মো. খুরশীদ আলম বলেন, কমিটি কাজ করছে। শিগগিরই লেনদেন চালুর বিষয়টি চূড়ান্ত করা হবে। কমিটি অত্যন্ত গুরুত্বসহকারে কাজ করছে।
শেয়ারবার্তা/ সাইফুল ইসলাম