পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রয়েছে ৩০ ব্যাংক। মন্দঋণের কারণে গত বছর এসব ব্যাংকের বেশিরভাগই মুনাফায় পিছিয়ে পড়েছিল। তবে চলতি বছরের তিন প্রান্তিক শেষে (জানুয়ারি-সেপ্টেম্বর) তালিকাভুক্ত ২১ ব্যাংকের শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) বৃদ্ধি পেয়েছে। আর কমেছে আটটির। এছাড়া অপরটি লোকসান থাকলেও লোকসানের মাত্রা কিছুটা কমেছে। ২০১৯ সালের তিন প্রান্তিকের তথ্য বিশ্লেষণে এ চিত্র পাওয়া গেছে।
ব্যাংকগুলোর প্রকাশিত তৃতীয় প্রান্তিকের আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী, ইপিএস বৃদ্ধির দৌড়ে এগিয়ে রয়েছে ডাচ্-বাংলা ব্যাংক। তিন প্রান্তিক শেষে এ ব্যাংকটির ইপিএস দাঁড়িয়েছে ছয় টাকা ৭৩ পয়সা। আগের বছর একই সময় প্রতিষ্ঠানটির ইপিএস ছিল পাঁচ টাকা ৫২ পয়সা। পরের অবস্থানে রয়েছে উত্তরা ব্যাংক। এ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারপ্রতি আয় দাঁড়িয়েছে তিন টাকা ১২ পয়সা, গত বছর যা ছিল ছিল দুই টাকা ৫৬ পয়সা। তৃতীয় অবস্থানে থাকা যমুনা ব্যাংকের ইপিএস দুই টাকা ১২ পয়সা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে দুই টাকা ৮৮ পয়সা।
একই সময়ে ইস্টার্ন ব্যাংকের (ইবিএল) ইপিএস হয়েছে দুই টাকা ৮৩ পয়সা, আগের বছর যার পরিমাণ ছিল দুই টাকা ৪৬ পয়সা। একই সময় তালিকায় থাকা অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের মধ্যে তৃতীয় প্রান্তিক শেষে সিটি ব্যাংকের ইপিএস হয়েছে দুই টাকা ৫৮ পয়সা। আগের বছর তৃতীয় প্রান্তিক শেষে যার পরিমাণ ছিল দুই টাকা ২১ পয়সা।
এছাড়া বেড়েছে মার্কেন্টাইল ব্যাংকের ইপিএসও। তৃতীয় প্রান্তিক শেষে এ প্রতিষ্ঠানের ইপিএস হয়েছে দুই টাকা ৩৬ পয়সা, আগের বছর একই সময়ে যার পরিমাণ ছিল দুই টাকা ২৫ পয়সা।
অন্যান্য ব্যাংকের মধ্যে ট্রাস্ট ব্যাংকের ইপিএস দাঁড়িয়েছে দুই টাকা ৭০ পয়সা, আগের বছর একই সময় যার পরিমাণ ছিল এক টাকা ৬৬ পয়সা। একইভাবে বৃদ্ধি পেতে দেখা গেছে ব্যাংক এশিয়ার ইপিএস। সেপ্টেম্বর শেষে এ ব্যাংকটির ইপিএস হয়েছে এক টাকা ৯৪ পয়সা, গত বছর যার পরিমাণ ছিল এক টাকা ৭৩ পয়সা। একই সময়ের ব্যবধানে ঢাকা ব্যাংকের ইপিএস এক টাকা ২০ পয়সা থেকে বেড়ে এক টাকা ২৪ পয়সায় দাঁড়িয়েছে।
অন্যদিকে তৃতীয় প্রান্তিক শেষে এক্সিম ব্যাংকের ইপিএস হয়েছে ৪৪ পয়সা। গত বছর তৃতীয় প্রান্তিক শেষে যার পরিমাণ ছিল ১১ পয়সা। এ সময়ে তালিকাভুক্ত ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের ইপিএস ৫৩ পয়সা থেকে বেড়ে এক টাকা ৩০ পয়সায় দাঁড়িয়েছে। এ-ছাড়া আইএফআইসি ব্যাংকের ইপিএস ৫৪ পয়সা থেকে বেড়ে হয়েছে এক টাকা ৪৫ পয়সা। বেড়েছে মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংকের ইপিএসও। চলতি বছর তৃতীয় প্রান্তিক শেষে এ ব্যাংকের ইপিএস হয়েছে এক টাকা ৯০ পয়সা, আগের বছর যার পরিমাণ ছিল এক টাকা ৭৭ পয়সা। অন্যান্য ব্যাংকের মধ্যে এনসিসি ব্যাংকের ইপিএস দুই টাকা সাত পয়সা, প্রিমিয়ার ব্যাংকের এক টাকা ৭৪ পয়সা, পূবালী ব্যাংকের দুই টাকা ৭২ পয়সা, শাহ্জালাল ব্যাংকের এক টাকা ৪২ পয়সা, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের ৪৫ পয়সা এবং ইউসিবিএলের ইপিএস বেড়েছে এক টাকা ৭৬ পয়সা।
এদিকে ইপিএস হ্রাস পাওয়া ব্যাংকগুলোর মধ্যে ব্র্যাক ব্যাংকের ইপিএস হয়েছে দুই টাকা ৭৬ পয়সা, আগের বছর তিন প্রান্তিক শেষে এ প্রতিষ্ঠানটির ইপিএস ছিল তিন টাকা ২৩ পয়সা। একইভাবে আল-আরাফাহ্ ইসলামী ব্যাংকের ইপিএস ৭২ পয়সা থেকে কমে ২৪ পয়সা হয়েছে। কমেছে এবি ব্যাংকের ইপিএস। এ বছর তিন প্রান্তিক শেষে এ প্রতিষ্ঠানের ইপিএস হয়েছে ২৪ পয়সা, আগের বছর যার পরিমাণ ছিল ৪১ পয়সা। অন্যদিকে এ সময়ে এনবিএলের ইপিএস দাঁড়িয়েছে ৬৫ পয়সা, গত বছর একই সময় যার পরিমাণ ছিল ৮২ পয়সা। এছাড়া তৃতীয় প্রান্তিক শেষে রূপালী ব্যাংকের ইপিএস দাঁড়িয়েছে ৪০ পয়সা, আগের বছর যার পরিমাণ ছিল ৪৬ পয়সা। অন্য কোম্পানি এসআইবিএলের বর্তমান ইপিএস দাঁড়িয়েছে ৭৪ পয়সা, আগের বছর যার পরিমাণ ছিল ৭৮ পয়সা।
এদিকে চলতি বছরের ৯ মাসে কিছুটা লোকসান কমতে দেখা গেছে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকের। এ বছর তিন প্রান্তিক শেষে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারপ্রতি লোকসান দাঁড়িয়েছে ৪৯ পয়সা, আগের বছর যার পরিমাণ ছিল ৫৪ পয়সা।
যদিও ব্যাংকগুলোর ইপিএস বছর শেষে অব্যাহত থাকবে কি না, তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা। তাদের অভিমত, কর প্রদানসহ সব খরচ মিটিয়ে ও মন্দঋণের বিপরীতে প্রভিশন সংরক্ষণের পর ব্যাংকগুলোর এই ইপিএস ধরে রাখতে বেগ পেতে হবে। গত কয়েক বছর ধরে তেমনটিই দেখা যাচ্ছে।
এ প্রসঙ্গে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ব্যাংক খাত পুঁজিবাজারের একটি শক্তিশালী খাত। এ খাতের কোনো ভালো খবর বিনিয়োগকারী তথা পুঁজিবাজারের জন্য ভালো। বছর শেষে সব খরচ মিটিয়ে যদি ব্যাংকগুলো এই ইপিএস ধরে রাখতে পারে, তাহলেই বোঝা যাবে এ খাতটি আরও এগিয়েছে। প্রান্তিক প্রতিবেদন দেখে সবকিছু বলা সম্ভব নয়।
শেয়াবার্তা / মিলন