দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোতে দুই শতাংশ ডাউন পেমেন্ট দিয়ে বিশেষ নীতিমালার আওতায় ৪৫ হাজার ৩৪৭ কোটি টাকার ঋণ পুনঃতফসিল চেয়েছেন খেলাপিরা। গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৮০৩টি আবেদন নিষ্পত্তি করেছে ব্যাংকগুলো। যার বিপরীতে পুনঃতফসিল করা হয়েছে ১৩ হাজার ৪৭২ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ। সম্প্রতি উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলের শর্ত শিথিল করায় নতুন করে অনেকে এ সুবিধা নিতে আগ্রহী হবেন বলে জানান সংশ্নিষ্টরা।
পূবালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এম এ হালিম চৌধুরী এ বিষয়ে বলেন, আমরা কল্পনা করিনি, এমন অনেক পুরাতন খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিলের আবেদন এসেছে। কখনও হয়তো ফেরত আসত না, এমন কিছু টাকা আদায় হচ্ছে। সব মিলিয়ে পূবালী ব্যাংকে প্রায় চারশ’ কোটি টাকার মন্দমানের খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল হবে বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বিশেষ নীতিমালায় চলতি বছরের প্রথম ৬ মাসে ২১ হাজার ৩০৫ কোটি টাকার খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল হয়েছে। এর পরও জুন শেষে অবলোপনসহ খেলাপি ঋণের পরিমাণ বেড়ে এক লাখ ৫২ হাজার ৮৫২ কোটি টাকা হয়েছে। অবলোপন করা খেলাপি ঋণের পরিমাণ ছিল ৪০ হাজার ৪২৭ কোটি টাকা। শুধু গত ডিসেম্বর পর্যন্ত মন্দমানের খেলাপি ঋণ পুনঃতফসিল করা যাবে বলে বলা হয়। ডিসেম্বর পর্যন্ত ব্যাংকগুলোতে অবলোপনসহ মোট খেলাপি ঋণ ছিল এক লাখ ৩১ হাজার ৭৭৮ কোটি টাকা। এর মধ্যে মন্দমানের খেলাপি ঋণ ছিল ৮০ হাজার ৬৯৬ কোটি টাকা।
ব্যাংকখাত সংশ্নিষ্টরা জানান, সময়স্বল্পতার কারণে সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে অনেক আবেদন নিষ্পত্তি করতে পারেনি ব্যাংকগুলো। আবার নানান শর্তের কারণে অনেক খেলাপি এ সুবিধার জন্য আবেদন করেননি। এতে জুনের মতো সেপ্টেম্বর প্রান্তিকেও খেলাপি ঋণ কমেনি। তবে গত ৩ নভেম্বর উচ্চ আদালতের নতুন আদেশের মাধ্যমে বিশেষ নীতিমালার শর্ত শিথিল করায় এখন অনেকে নতুন করে আগ্রহ দেখাচ্ছেন। ওই আদেশের মাধ্যমে বিশেষ নীতিমালায় পুনঃতফসিলের আবেদনের সময় আরও তিন মাস বাড়ানো হয়েছে। পুনঃতফসিল করার পর নতুন করে ঋণ নেওয়ার সুযোগ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া বিশেষ নিরীক্ষা ছাড়াই টেক্সটাইল ও তৈরি পোশাক খাতের উদ্যোক্তাদের ঋণ পুনঃতফসিলের সুযোগ দেওয়া হয়েছে।
অগ্রণী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ শামস-উল ইসলাম বলেন, বিশেষ নীতিমালায় তাদের ব্যাংকে এখন পর্যন্ত ৭শ’ আবেদন পড়েছে। এর মধ্যে গত সেপ্টেম্বর পর্যন্ত খুব বেশি ঋণ পুনঃতফসিল হয়নি। সাম্প্রতিক সময়ে পরিচালনা পর্ষদের প্রতি বৈঠকে গড়ে ২০ থেকে ২৫টি আবেদন পাঠানো হচ্ছে। ফলে ডিসেম্বর শেষে খেলাপি ঋণ অনেক কমবে বলে তিনি আশা করেন।
জানা গেছে, ব্যাংক খাতের আলোচিত খেলাপিদের মধ্যে অ্যাননটেক্স গ্রুপ ঋণের একটি অংশ পুনঃতফসিল করেছে। তবে এ পুনঃতফসিল কার্যকর হয়েছে সেপ্টেম্বরের পর। জনতা ব্যাংকে গ্রুপটির ৬ হাজার ২০০ কোটি টাকার খেলাপি ঋণের মধ্যে ২০১৮ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত মন্দমানে খেলাপি ছিল তিন হাজার কোটি টাকা। এই অংশই বিশেষ সুবিধায় পুনঃতফসিল করা হয়েছে। বাকি ঋণও নিয়মিত প্রক্রিয়ায় পুনঃতফসিলের প্রক্রিয়া চলছে।
গত ১৬ মে ঋণ পুনঃতফসিল ও এককালীন এক্সিট সংক্রান্ত বিশেষ নীতিমালা জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এতে বলা হয়, গত ডিসেম্বর পর্যন্ত মন্দমানে শ্রেণিকৃত খেলাপি ঋণ মাত্র ২ শতাংশ ডাউন পেমেন্টের বিপরীতে ১০ বছরের জন্য পুনঃতফসিল করা যাবে। এ ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলো সর্বোচ্চ সুদ নিতে পারবে ৯ শতাংশ। এ সুবিধার জন্য প্রথমে বলা হয়, সার্কুলার জারির তারিখ থেকে ৯০ দিনের মধ্যে আবেদন করতে হবে। তবে সার্কুলারের ওপর উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশের কারণে আবেদন কার্যক্রম অনেক দিন বন্ধ ছিল। পরে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আপিলের পরিপ্রেক্ষিতে সময় বাড়িয়ে আবেদনের শেষ দিন নির্ধারণ করা হয় ২০ অক্টোবর। এর পর গত ৩ নভেম্বর আবার উচ্চ আদালতের এক আদেশের মাধ্যমে আবেদন নেওয়ার সময় আরও তিন মাস বাড়ানো হয়।
শেয়ারবার্তা / হামিদ