পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড পুঁজিবাজারের আরেক কোম্পানি বর্তমানে অবসায়নের পথে থাকা পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডে আমানত রেখে বেকায়দায়। সম্পদের চেয়ে দায় বেশি থাকা পিপলস লিজিং এর আমানতকারীরা শেষ পর্যন্ত তাদের আমানতের অর্থ ফেরত পাবে কি-না তা নিয়ে যথেষ্ট সন্দেহ আছে। একই কারণে খান ব্রাদার্সের আমানতের টাকা ফেরত পাওয়ার বিষয়টিও অনিশ্চিত। খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজের নীরিক্ষক ও ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এই তথ্য জানা গেছে।
সূত্র জানিয়েছে, খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগ ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড নন-ব্যাংকিং আর্থিক প্রতিষ্ঠান পিপলস লিজিংয়ে ৯ কোটি ৮০ লাখ টাকা মেয়াদি আমানত (এফডিআর) রেখেছিল। কিন্তু টানা লোকসান ও নানা অনিয়মের কারণে অবসায়নের পথে থাকা পিপলস লিজিংয়ে জমা রাখা টাকা ফেরত পাওয়ার বিষয়ে যথেষ্ট সংশয় রয়েছে। বিষয়টি কোম্পানির অস্তিত্ব নিয়ে বড় ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে বলে মনে করছে এর নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠান।
পিপলস লিজিংয়ে থাকা আমানতের টাকা ফেরত না পেলে খান ব্রাদার্সের উদ্যোক্তাদের চেয়ে কোম্পানিটির শেয়ারহোল্ডারদেরকে বেশি ক্ষতির মুখে পড়তে হবে। কারণ ৯৮ কোটি টাকা মূলধনধারী এই কোম্পানির ৭০ ভাগ শেয়ারই সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের হাতে। উদ্যোক্তাদের হাতে আছে মাত্র ৩০ শতাংশ শেয়ার। কোম্পানিটির চতুর উদ্যোক্তারা বিভিন্ন সময়ে নিজেদের শেয়ার বিক্রি করে দিয়ে ন্যুনতম পর্যায় নামিয়ে এনেছেন। ২০১৪ সালে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে বাজারে আসার পর পর কোম্পানিটির উদ্যোক্তাদের হাতে ৬৮ ভাগ শেয়ার ছিল। কিন্তু মাত্র ৫ বছরের ব্যবধানে তা ৩০ শতাংশে নেমে আসে।
উদ্যোক্তাদের শেয়ার করার পাশাপাশি খারাপ হয়েছে খান ব্রাদার্স পিপি ওভেন ব্যাগের পারফরম্যান্স। ২০১৫ সালে কোম্পানিটি সর্বোচ্চ ১৫ শতাংশ লভ্যাংশ দিয়েছিল। তা-ও আবার বোনাস লভ্যাংশ। পরের বছর লভ্যাংশ কমে হয় ১১ শতাংশ। সেটিও বোনাস। তার পরের বছর তথা ২০১৭ সালে কোম্পানিটি ১০ শতাংশ বোনাস দেয়। ২০১৮ সালে নগদ লভ্যাংশ দিলেও তা নেমে আসে ২ শতাংশে। আর ২০১৯ সালে কোম্পানিটি কোনো লভ্যাংশই দেয়নি।
এদিকে ঝুঁকিপূর্ণ জেনেও পিপলস লিজিংয়ের মত বিতর্কিত প্রতিষ্ঠানে এত বড় অংকের অর্থ আমানত রাখার বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। অনেকেই এর পেছনে নানা রহস্যের গন্ধ পাচ্ছেন। কেউ এটিকে খান ব্রাদার্সের উদ্যোক্তা ও ম্যানেজমেন্টের খামখেয়ালি ও দায়িত্বহীনতা মনে করছেন। কেউ-বা আবার সন্দেহ করছেন, এর পেছনে উদ্যোক্তাদের অন্যায্য কোনো সুযোগ-সুবিধার বিষয় থেকে থাকতে পারে।
খান ব্রাদার্সের নিরীক্ষক জানিয়েছে, পিপলস লিজিংয়ে আমানতকৃত টাকা কোম্পানিটি না পাওয়ার সম্ভাবনাই বেশি। তবে এতে কোম্পানির চলমান হিসাব চালিয়ে যাওয়ায় সন্দেহ তৈরি হলেও কোনো সমস্যা হবে না। কোম্পানি তাদের দীর্ঘ মেয়াদে ব্যবসা এগিয়ে নিয়ে যেতে সক্ষম। কারণ তাদের যে নগদ অর্থ আছে তা গত বছরের তুলনায় এ বছর বেড়েছে।
তথ্য মতে, গত ৩০ জুন,১৯ শেষ হওয়া আর্থিক প্রতিবেদন অনুযায়ী কোম্পানির কাছে নগদ অর্থ রয়েছে ১৩ কোটি ৪০ লাখ ৭০ হাজার ৬৫২ টাকা। যা গত বছর একই সময় ছিল ১২ কোটি ৯৩ লাখ ২১ হাজার ৯২৯ টাকা।
এবং কোম্পানিটি তাদের ব্যবসা পরিচালনার জন্য তাদের পর্যাপ্ত তহবিল এবং সম্পদ রয়েছে। তা থেকে তারা তাদের ব্যবসার বর্তমান প্রয়োজনীয়তাগুলি পূরণ করতে সক্ষম।
উল্লেখ্য, কোম্পানিটি গত ৩০ জুন ২০১৯ তারিখে সমাপ্ত হিসাববছরে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের জন্য কোনো লভ্যাংশ ঘোষণা করেনি।
সর্বশেষ অর্থবছরে (২০১৮-২০১৯) কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি আয় (ইপিএস) করেছে ২৫ পয়সা। একই সময়ে কোম্পানিটির শেয়ার প্রতি সম্পদমূল্য হয়েছে ১২ টাকা ৬৪ পয়সা। আগামী ২১ ডিসেম্বর কোম্পানিটির বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) অনুষ্ঠিত হবে।
প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর’১৯) কোম্পানির শেয়ার প্রতি লোকসান হয়েছে ০৫ পয়সা। আগের বছরের একই সময়ে ছিলো ১০ পয়সা। এবং আলোচ্য সময়ে সমন্বিত শেয়ার প্রতি সম্পদ মূল্য দাঁড়িয়েছে ১২ টাকা ৫৯ পয়সা।
শেয়ারবার্তা / হামিদ