সার্বিক পরিস্থিতি ভালো না থাকায় পুঁজিবাজার নিয়ে নতুন বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ তলানিতে নেমেছে। নাজুক পরিস্থিতি থাকায় এই বাজারের সঙ্গে যুক্ত হতে চাচ্ছেন না তারা, যার ফলে আশঙ্কাজনকহারে কমে গেছে বিও অ্যাকাউন্ট।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, মার্চে পুঁজিবাজারে নতুন বিও অ্যাকাউন্ট বেড়েছে মাত্র তিন হাজার ৭০২টি। অথচ এর আগের মাসেও নতুন বিও অ্যাকাউন্ট খোলেন ২৮ হাজারের বেশি বিনিয়োগকারী। মাসের ব্যবধানে আশঙ্কাজনকহারে বিও কমে যাওয়ার জন্য বর্তমান বাজার পরিস্থিতিকে দায়ী করছেন পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, বাজার পরিস্থিতি অনুকূলে না থাকার কারণে এর সঙ্গে যুক্ত হতে আগ্রহ দেখাচ্ছে না সাধারণ মানুষ, যার প্রভাব পড়েছে বিও অ্যাকাউন্টে।
গত বছরের মাঝামাঝি সময়ে পুঁজিবাজার পরিস্থিতি ভালো হলে অনেকেই এর সঙ্গে যুক্ত হওয়ার আগ্রহ দেখান। ফলে তখন বিও অ্যাকাউন্ট বৃদ্ধি পায়। পরে বাজার পরিস্থিতি পাল্টে গেলে কমে যায় নতুন বিওধারীর সংখ্যা।
করোনার ছুটি-পরবর্তী সময়ে বেশ ভালো অবস্থানে ছিল পুঁজিবাজার। ছয় মাসেরও বেশি সময় ধরে বাজারে ছিল স্থিতিশীল পরিবেশ। ফলে পুঁজিবাজারে সব শ্রেণির মানুষের অংশগ্রহণ বাড়ে। গত বছর নভেম্বরে শুধু বহুজাতিক কোম্পানি রবি আজিয়াটার তালিকাভুক্তির খবরে পুঁজিবাজারে আসে দেড় লাখ বিনিয়োগকারী। এরপর পুঁজিবাজারের অবস্থান নাজুক হতে শুরু করে। ফলে বাজারে নতুন বিনিয়োগকারী প্রবেশে ভাটা পরিলক্ষিত হচ্ছে।
সেন্ট্রাল ডিপোজেটরি বাংলাদেশ লিমিটেডের (সিডিবিএল) তথ্যমতে, জানুয়ারি শেষে পুঁজিবাজারে বিও অ্যাকাউন্ট ছিল ২৬ লাখ ৩৩ হাজার। ফেব্রুয়ারি শেষে তা দাঁড়িয়েছে ২৬ লাখ ৬২ হাজার ৩৫৭টিতে। অর্থাৎ এই সময়ের মধ্যে বিও অ্যাকাউন্ট বেড়েছে ২৮ হাজার ৩৬০টির। সর্বশেষ মার্চ মাসে বিও অ্যাকাউন্ট বৃদ্ধি পায় তিন হাজার ৭০২টি। এ-সংখ্যক বিও অ্যাকাউন্ট বেড়ে বর্তমানে বিও দাঁড়িয়েছে ২৬ লাখ ৬৬ হাজার ২৭৮টি। পুরুষদের ১৯ লাখ ৬৪ হাজার ৩০৩টি এবং নারীদের বিওসংখ্যা ছয় লাখ ৮৭ হাজার ৬৭০টি। এছাড়া কোম্পানির বিও রয়েছে ১৪ হাজার ৩০৫টি।
একই প্রসঙ্গে জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডিএসইর এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বর্তমান পুঁজিবাজার পরিস্থিতি মোটেও ভালো নেই। যারা মার্কেটে রয়েছে তাদের বেশিরভাগ ক্ষতিগ্রস্ত, যে কারণে নতুনরা পুঁজিবাজারে আসতে অনাগ্রহী হয়ে উঠছেন। তিনি বলেন, অনেক বিনিয়োগকারী আছেন, যারা পুঁজিবাজারে প্রাইমারি মার্কেটে বিনিয়োগ করতে ভালোবাসেন। তারা অনেকেই বছর শেষে অ্যাকাউন্ট নবায়ন করেন না। নতুন আইপিও এলে তারা আবারও নতুন অ্যাকাউন্ট খোলেন। আবার বাজার ভালো থাকলে তারা এর সঙ্গে যুক্ত হতে চান। এখন বাজার খারাপ দেখে তাদের আগ্রহ নেই। এটা খুবই স্বাভাবিক বিষয়।
একই বিষয়ে জানতে চাইলে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, যারা পুঁজিবাজারে আসেন তারা বাজার পরিস্থিতি লক্ষ করেই আসেন। বাজার পরিস্থিতি ভালো থাকলে তারা এর সঙ্গে যুক্ত হতে চান। আবার পরিস্থিতি ভালো না থাকলে অনাগ্রহ তৈরি হয়। বাজার ভালো না থাকলে নতুন বিনিয়োগকারীরা আসবেন না, এটা স্বাভাবিক বিষয়।
স্মরণকালের (২০১০ সালের) ভয়াবহ ধসের পর আর স্বরূপে ফিরতে পারেনি পুঁজিবাজার। মাঝেমধ্যে ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করলেও আবারও পতনের ধাক্কা লেগেছে বাজারে। ফলে বাজারবিমুখ হয়ে পড়েছেন সাধারণ বিনিয়োগকারীরা, যার ধারাবাহিক ধাক্কা লেগেছে বিও অ্যাকাউন্টে। গত ছয় বছরে নবায়ন না করায় বন্ধ হয়ে গেছে প্রায় ৯ লাখ বিও অ্যাকাউন্ট। বর্তমানে বাজারচিত্র বদলে যাওয়ায় আবারও পুঁজিবাজারে ফিরছেন বিনিয়োগকারীরা।
নিয়মানুযায়ী, জুনে বিও ফি পরিশোধ না করলে সেসব অ্যাকাউন্ট এমনিতেই বন্ধ হয়ে যায়। কিন্তু যেসব হিসাবে শেয়ার কিংবা টাকা থাকে, সেসব হিসাব বন্ধ হয় না। সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (এসইসি) ডিপোজিটরি (ব্যবহারিক) প্রবিধানমালা, ২০০৩-এর তফসিল-৪ অনুযায়ী, বিও হিসাব পরিচালনার জন্য ডিপোজিটরি অংশগ্রহণকারী বা বিনিয়োগকারীকে নির্ধারিত হারে বার্ষিক হিসাবরক্ষণ ফি দিয়ে হিসাব নবায়ন করতে হয়। এর আগে পঞ্জিকাবর্ষ হিসেবে প্রতি বছর ডিসেম্বরে এ ফি জমা নেয়া হতো। তবে ২০১০ সালের জুনে বিএসইসি বিও হিসাব নবায়নের সময় পরিবর্তন করে বার্ষিক ফি প্রদানের সময় জুন মাস নির্ধারণ করে। এ সময়ে বিও নবায়ন ফি ৩০০ থেকে বাড়িয়ে ৫০০ টাকা করা হয়। এরপর বিএসইসির জারি করা ২০১১ সালের ১৮ এপ্রিল এক সার্কুলারে ৩০ জুনের মধ্যে বিও হিসাব নবায়নের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা হয়। না হলে তা বাতিল করা হবে বলে ওই সার্কুলারে বলা হয়েছিল। বর্তমানে বিও নবায়ন ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৪৫০ টাকা।