করোনা পরিস্থিতিতে সরকারের নির্দেশনার সঙ্গে সঙ্গতি রেখে পুঁজিবাজারের কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য সুরক্ষার ওপর গুরুত্বারোপ করেছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি), ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ, ব্রোকারেজ হাউজ ও মার্চেন্ট ব্যাংক। এসব প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। করোনা পরিস্থিতিতে পুঁজিবাজার কোনোভাবেই বন্ধ থাকবে না বিএসইসি জানিয়েছে।
একইসঙ্গে বিনিয়োগকারীরা স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করতে সব ব্রোকারেজ হাউজে সতর্কতার বিষয়ে পরামর্শ দেবে উভয় স্টক এক্সচেঞ্জসহ ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ। একইভাবে সব মার্চেন্ট ব্যাংকে স্বার্থ সুরক্ষার বিষয়ে পরামর্শ দেবে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ)।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, সরকারে কর্তৃক নির্দেশিত স্বাস্থ্যবিধি মেনে স্টক এক্সচেঞ্জের কর্মকর্তা কর্মচারী ও বিনিয়োগকারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় জনসমাগম নিরুৎসাহিত করা, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, থার্মাল স্ক্যানার ও অন্যান্য স্বাস্থ্য সুরক্ষা নিশ্চিত করা হবে। ইতোমধ্যে ডিএসই বিষয়টি নিয়ে কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছে। এজন্য সব ধরনের প্রস্তুতিও নেওয়া হচ্ছে। আর কর্মক্ষেত্রে রোস্টারভিত্তিক কর্মীদের দায়িত্ব পালনের বিষয়টিও গুরুত্ব দেবে ডিএসই। আগামী ১ এপ্রিল থেকে সরকারের এ নির্দেশনা কার্যকর করা হবে।
একইভাবে সিএসই স্বাস্থ্যবিধি মেনে কর্মকর্তা কর্মচারী ও বিনিয়োগকারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেবে। পাশাপাশি প্রবেশাধিকার সংরক্ষিত করে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র অনলাইনে পাঠানোর বিষয়ে সব পক্ষকে উৎসাহিত করবে সিএসই। তবে, ৫০ শতাংশ জনবল দিয়ে কাজ করার বিষয়ে এখনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।
এদিকে বিনিয়োগকারীদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় ব্রোকারেজ হাউজতে করোনা পরিস্থিতিতে হ্যান্ডশেক বা আলিঙ্গন না করা, পরিমিত দূরত্ব বজায় রাখা, কর্মকর্তা-কর্মচারী ও ক্লায়েন্টের হাঁচি-কাশি বা সন্দেহজনক লক্ষণ থাকলে তাদের শনাক্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া, অফিস প্রাঙ্গণে প্রবেশের জন্য প্রতিবার হ্যান্ড স্যানিটাইজারের ব্যবস্থা করা, ব্রোকারেজ হাউজে কর্মচারী এবং ক্লায়েন্টদের মাস্ক সরবরাহ করা, দর্শনার্থীদের অফিসে প্রবেশ করতে নিরুৎসাহিতকরণ, কর্মীদের শিফটভিত্তিক কাজের ব্যবস্থা করার বিষয়ে পরামর্শ দিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির কমিশনার অধ্যাপক ড. শেখ শামসুদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে পুঁজিবাজার কোনোভাবেই বন্ধ থাকবে না। তাই বিএসইসির কার্যক্রম যথাযথভাবে চলবে। পাশাপাশি সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মেনে বিএসইসিসহ স্টক এক্সচেঞ্জ, ব্রোকারেজ হাউজ, মার্চেন্ট ব্যাংকের কার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। একইসঙ্গে বিনিয়োগকারীদের স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলতে হবে।’
এ বিষয়ে ডিএসই’র ব্যবস্থাপনা পরিচালক (চলতি দায়িত্বে) ও প্রধান অর্থ কর্মকর্তা মো. আব্দুল মতিন পাটোয়ারী বলেন, ‘করোনা পরিস্থিতিতে স্টক এক্সচেঞ্জের হিউম্যান রিসোর্স ম্যানেজমেন্টে পরিবর্তন আনা হবে। পাশাপাশি স্টক এক্সচেঞ্জে জনসমাগম নিরুৎসাহিত করে স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, বাসায় বসে কাজ করা, অনলাইনে সেমিনার সিম্পোজিয়াম করা হবে। এছাড়া ব্রোকারে হাউজগুলোতে এসব বিষয় পরিপালনের ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে। একইসঙ্গে বিনিয়োগকারীরা যেন ঘরে বসেই লেনদেন করতে পারেন, সে বিষয়ের ওপর গুরুত্ব দেওয়া হবে।’
সিএসই’র চেয়ারম্যান আসিফ ইব্রাহীম বলেন, ‘মহামারির শুরুর দিকে শেয়ারবাজার বন্ধ ছিল, এবার তা আমরা চাই না। করোনা পরিস্থিতিতে স্বাস্থ্যবিধি মেনে শেয়ারবাজারের সব কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। তবে ৫০ শতাংশ জনবল দিয়ে কাজ করার বিষয়ে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। তবে শেয়ারবাজার যেন বন্ধ না হয় এবং স্টক এক্সচেঞ্জের কার্যক্রম যেন চালু থাকে, সেভাবে কাজ করবো।’
ডিবিএ’র সভাপতি শরীফ আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘করোনো পরিস্থিতি মোকাবিলায় সরকারের নির্দেশনা সব ব্রোকারেজ হাউজকে পারিপালন করতে হবে। এ ক্ষেত্রে ব্রোকারেজ হাউজগুলো ও বিনিয়োগকারীদের সহায়তা প্রয়োজন।’
বিএমবিএ’র সভাপতি সায়েদুর রহমান বলেন, ‘সরকারের নির্দেশনা পরিপালন করা হবে। সবার স্বার্থেই এই নির্দেশনা পালন করা অত্যন্ত জরুরি। সরকারের নির্দেশনা পরিপালনের বিষয়ে সব মার্চেন্ট ব্যাংকে পরামর্শ দেওয়া হবে।’
প্রসঙ্গত, সোমবার (২৯ মার্চ) করোনাভাইরাস সংক্রামনের প্রভাব মোকাবিলায় সরকার ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করেছে। এর মধ্যে কর্মক্ষেত্রে সর্বদা বাধ্যতামূলক মাস্ক পরিধানসহ স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা, ৫০ ভাগ জনবলে অফিস পরিচালনা, অসুস্থ বা পঞ্চান্নোর্ধ বয়সের কর্মীদের বাসায় থেকে কাজ করাসহ সভা-সেমিনার অনলাইনে করার নির্দেশনা রয়েছে।