পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের সাবেক ভাইস প্রেসিডেন্ট নাহিদ রুনাইয়ের ব্যাংক হিসাবের তথ্য চেয়ে পাঠিয়েছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। বড় ধরনের আর্থিক কেলেঙ্কারির অভিযোগে অভিযুক্ত প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারের ঘনিষ্ঠ বান্ধবী হিসেবে পরিচিত তিনি।
মঙ্গলবার দেশের সব ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে পৃথক চিঠি পাঠায় এনবিআরের কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সেল (সিআইসি)। চিঠিতে নাহিদ রুনাইয়ের নামে থাকা ব্যাংক হিসাবে সব ধরনের লেনদেনের তথ্য চাওয়া হয়।
চিঠি পাওয়ার সাত কর্মদিবসের মধ্যে তথ্য সরবরাহে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্তৃপক্ষকে নির্দেশ দিয়েছে এনবিআর। এনবিআরের জ্যেষ্ঠ এক সিআইসি কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
এনবিআরের গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের ধারণা, নাহিদ রুনাইয়ের জ্ঞাত আয়-বহির্ভূত অনেক সম্পদ রয়েছে, যা তিনি আয়কর রিটার্নে দেখাননি। এ জন্য বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তার যাবতীয় হিসাব ও লেনদেনের তথ্য জানতে চিঠি দেয়া হয়েছে।
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ নির্বাহীদের কাছে লেখা চিঠিতে নাহিদা রুনাইয়ের চলতি হিসাব, সঞ্চয়ী হিসাব, ঋণ হিসাব ও বিদেশি মুদ্রার হিসাব, ক্রেডিট কার্ড, ভল্ট, সঞ্চয়পত্র, ডিপোজিট স্কিম ও বিও (বেনিফিসিয়ারি ওনার্স) অ্যাকাউন্টসহ সব ধরনের হিসাবের তথ্য চাওয়া হয়েছে।
২০১৩ সালের ১ জুলাই থেকে হালনাগাদ তথ্য বিবরণী এবং আগে বন্ধ হয়ে যাওয়া হিসাবেরও তথ্যও চাওয়া হয়েছে চিঠিতে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এনবিআর কর্মকর্তা আরো বলেন, নাহিদ রুনাইয়ের রিটার্নে যে আয় দেখানো হয়েছে, এর বাইরে আর কী সম্পদ আছে তার- তা খতিয়ে দেখা হবে।
এ জন্য রিটার্নে দেয়া তথ্যের সঙ্গে ব্যাংক অ্যাকাউন্টের তথ্য মিলিয়ে দেখা হবে। এ ছাড়া তার নামে থাকা সব ধরনের স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তি খুঁজে দেখা হবে। আয়ের সঙ্গে ব্যয়ের অসঙ্গতি পাওয়া গেলে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা নেয়া হবে। একই সঙ্গে কর ফাঁকির ঘটনাও খতিয়ে দেখা হবে।
এনবিআর সিআইসির এক কর্মকর্তা বলেন, নাহিদ রুনাই কর ফাঁকির মাধ্যমে দেশ থেকে অর্থপাচারের সাথে যুক্ত কিনা, তাও খতিয়ে দেখা হবে।
আইন অনুযায়ী কর ফাঁকির ঘটনা প্রমাণ হলে সর্বনিম্ন তিন মাস থেকে সর্বোচ্চ পাঁচ বছর পর্যন্ত কারাদণ্ড ও জরিমানা হতে পারে তার।
প্রভাবশালী নাহিদ রুনাইয়ের অসীম ক্ষমতার উৎস ছিলেন পি কে হালদার। তার বিভিন্ন ব্যাংক হিসাবে কোটি কোটি টাকা লেনদেনের তথ্য রয়েছে।
দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) হাতে গ্রেপ্তার হওয়া পিপলস লিজিংয়ের চেয়ারম্যান উজ্জ্বল কুমার নন্দী গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ১৬৪ ধারায় যে জবানবন্দি দিয়েছেন, তাতে এমন তথ্য মিলেছে।
উজ্জ্বল কুমার নন্দীর বক্তব্যে উঠে এসেছে, পি কে হালদারের ঘনিষ্ঠ বান্ধবী ছিলেন অবন্তিকা বড়াল ও নাহিদ রুনাই। অবন্তিকা ও রুনাইয়ের সঙ্গে আলাদাভাবে কয়েক দফা সিঙ্গাপুর ও থাইল্যান্ডে ভ্রমণ করেছেন পি কে হালদার।
ঢাকার বিভিন্ন ক্লাবে রুনাই ও অবন্তিকার সঙ্গে পি কে হালদার আলাদাভাবে সময় কাটাতেন। অল্প সময়ে কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন রুনাই।
নাহিদ রুনাইকে গত ২৫ জানুয়ারি দুদকের দায়েরকৃত পাঁচটি মামলায় অন্যতম আসামি করা হয়েছে। পি কে হালদার কেলেঙ্কারিতে ৩৫০ কোটি ৯৯ লাখ টাকা আত্মসাতের অভিযোগে মোট ৩৩ জনের বিরুদ্ধে মামলাগুলো করা হয়।
অভিযোগ রয়েছে, পিপলস লিজিং, ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, পিপলস লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস, এফএএস ফাইন্যান্স অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ও বাংলাদেশ ইন্ডাস্ট্রিয়াল ফাইন্যান্স কোম্পানির (বিআইএফসি) দায়িত্ব পালনের সময় পি কে হালদার প্রায় ৩ হাজার ৬০০ কোটি টাকা আত্মসাৎ ও পাচার করেছেন।
ক্যাসিনো অভিযানের ধারাবাহিকতায় প্রায় ২৭৫ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জনের অভিযোগে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। ক্যাসিনোবিরোধী শুদ্ধি অভিযানের পরপরই তার নাম উঠে আসে। গত ৮ জানুয়ারি দুদকের অনুরোধে পি কে হালদারের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা দিয়ে রেড অ্যালার্ট জারি করে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা (ইন্টারপোল)।
এ ছাড়া ৯ ফেব্রুয়ারি সাড়ে ২০ কোটি টাকার অবৈধ সম্পদ অর্জন ও পাচারের সম্পৃক্ততায় পি কে হালদারের পাঁচ সহযোগীর বিরুদ্ধে মামলা করে দুদক। সর্বশেষ গত ৯ মার্চ কাগুজে প্রতিষ্ঠান দেখিয়ে ৮০০ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে আলোচিত পি কে হালদারসহ ৩৭ জনের বিরুদ্ধে ১০টি মামলা অনুমোদন দেয় সংস্থাটি।
এ কেলেঙ্কারিতে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার হয়েছেন সাতজন। যাদের মধ্যে উজ্জ্বল কুমার নন্দী ছাড়াও পিকে হালদারের সহযোগী শংখ বেপারী ও রাশেদুল হক আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন।