দেশে অবকাঠামোগত উন্নয়ন প্রকল্পে প্রতিনিয়ত বেড়েছে ইস্পাতের ব্যবহার ও চাহিদা। আর চাহিদা পূরণে বিদ্যমান কারখানাগুলো নতুন প্রযুক্তির কারখানা স্থাপনের মাধ্যমে উৎপাদন সক্ষমতা বাড়িয়েছে। পাশাপাশি এ খাতে যুক্ত হয়েছে নতুন একাধিক বড় বড় কারখানা। সব মিলিয়ে বর্তমানে উৎপাদনে থাকা কারখানাগুলোর বার্ষিক উৎপাদন সক্ষমতা প্রায় ৮০ লাখ টন। এর মধ্যে শীর্ষ পাঁচ ইস্পাত উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা ৪৭ লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন।
তথ্যমতে, ইস্পাতের বাজারে বর্তমানে আবুল খায়ের স্টিলের উৎপাদন সক্ষমতা ১৪ লাখ টন, বিএসআরএমের ১১ লাখ ৫০ হাজার টন, কেএসআরএমের আট লাখ টন, জিপিএইচ ইস্পাতের সাত লাখ ৯০ হাজার টন এবং মোস্তফা হাকিম গ্রুপের ছয় লাখ টন। অর্থাৎ ইস্পাত উৎপাদনের প্রায় ৬০ শতাংশ নিয়ন্ত্রণ করছে পুঁজিবাজারের দুই কোম্পানিসহ শীর্ষ পাঁচ কোম্পানি।
ইস্পাত খাতের শীর্ষ কোম্পানিগুলোর সূত্রে জানা যায়, ইস্পাত শিল্পে মূলত দুই ধরনের পণ্য উৎপাদন হয়। এর মধ্যে আছে ফ্ল্যাট স্টিল (সিআই শিট ও সিআর কয়েল) এবং লং স্টিল (এমএস রড/টিএমটি বার)। এ খাতে সক্রিয় আড়াইশ’র মতো প্রতিষ্ঠান। এসব মিলের সম্মিলিত ইস্পাত পণ্য উৎপাদনক্ষমতা প্রায় ৮০ লাখ টন। এর বিপরীতে বছরে চাহিদা ৫০ লাখ টনের মতো। তবে মোট চাহিদার অর্ধেকের বেশি মেটায় শীর্ষ পাঁচ প্রতিষ্ঠান।
এদিকে জিপিএইচ ইস্পাত লিমিটেডের উৎপাদনক্ষমতা সাত লাখ ৯০ হাজার মেট্রিক টন। এর মধ্যে বর্তমান উৎপাদন সক্ষমতা এক লাখ ৫০ হাজার মেট্রিক টন ও সম্প্রসারিত প্লান্টের বার্ষিক ছয় লাখ ৪০ হাজার টন। এছাড়া মোস্তফা হাকিম গ্রুপের ছয় লাখ টনের মধ্যে এইচএম স্টিল অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের চার লাখ এবং গোল্ডেন ইস্পাত লিমিটেড দুই লাখ টন। আর অন্যান্য ছোট কারখানাগুলো প্রায় ৩০ লাখ হাজার টন উৎপাদন সক্ষমতা আছে। তবে চলমান করোনাভাইরাসের প্রকোপ এবং গত কয়েক বছরের এ খাতে তেমন উল্লেখযোগ্য প্রবৃদ্ধি হয়নি।
যদিও আগামীর সম্ভাবনা মাথায় রেখে দেশি-বিদেশি উদ্যোক্তারা ইস্পাত কারখানা সম্প্রসারণ ও নতুন নতুন মিল স্থাপনে আগ্রাসী বিনিয়োগ প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। আর বাজার চাহিদা ও বিনিয়োগ সঠিকভাবে কাজে লাগানো না গেলে এ খাতে নতুন করে বিপর্যয় দেখা দিতে পারে। পাশাপাশি আধুনিক প্রযুক্তি এবং বৃহৎ পুঁজির দাপটে ছোট ছোট ইস্পাত কারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা প্রকাশ করছেন ছোট উদ্যোক্তারা।
খাতসংশ্লিষ্টদের মতে, বর্তমানে দেশের ইস্পাতের বাজার প্রায় ৪৫ হাজার কোটি টাকা। এখন পর্যন্ত ৪০ শতাংশ চাহিদার নেপথ্যে রয়েছে সরকারের উন্নয়নযজ্ঞ। তবে আগামীতে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, টানেল, সমুদ্রবন্দর নির্মাণ, ছোট-বড় সেতু, অর্থনেতিক অঞ্চলের ভাবি ও বৃহৎ শিল্প স্থাপনাসহ অনেক প্রকল্পের কাজে গতি আসবে। এছাড়া মাথাপিছু ভোগ ২৬ কেজি থেকে ৫০ কেজিতে উন্নীত, আবাসন খাত চাঙ্গা এবং ভারতের সেভেন সিস্টার রাজ্যগুলোতে রপ্তানি বাড়লে ২০৩০ সালে ইস্পাতের চাহিদা দাঁড়াবে এক কোটি ৮০ লাখ টনে। এতে ইস্পাতশিল্পের প্রবৃদ্ধি বর্তমান ৫-৭ থেকে ১৫ শতাংশে উন্নীত হওয়ার সুযোগ আছে। আর এ সম্ভাবনাগুলো মাথায় রেখে বছর কয়েক আগে প্রতিযোগিতা সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বড় ধরনের বাণিজ্যিক সম্প্রসারণে কাজ শুরু করে জিপিএইচ ইস্পাত লিমিটেড। এ প্রকল্পে তাদের বিনিয়োগ তিন হাজার কোটি টাকা।
এদিকে এক হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে মোস্তফা হাকিম গ্রুপ এইচএম স্টিল অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রি লিমিটেডের নামে নতুন ইস্পাত কারখানা স্থাপন কাজ শুরু করে। এর মধ্যে কারখানা দুটি পরীক্ষামূলক উৎপাদন কার্যক্রম শুরু করেছে। এছাড়া বিএসআরএম, কেএসআরএম, কেআর স্টিল রি-রোলিং মিলস, ইউনিটেক্স স্টিল, বেঙ্গল স্টিল, বসুন্ধরা স্টিল নতুন ইস্পাত কারখানা স্থাপনে কাজ করছে।