গত দু’বছরের নিয়মিত খবর হল পুঁজিবাজারে বিদেশিরা শেয়ার কেনার চেয়ে বিক্রিই বেশি করছেন। তবে সাম্প্রতিক তথ্যে দেখা যাচ্ছে বিদেশিরা যেসব শেয়ার বিক্রি করছেন, সেসব শেয়ারের বেশিরভাগই অন্য কোনো বিদেশি বিনিয়োগকারী কিনছেন। তাদের কেনা বা বিক্রি করা শেয়ার দেশীয় প্রতিষ্ঠানিক ও ব্যক্তিশ্রেণির বিনিয়োগকারীদের অ্যাকাউন্টে কমই আসছে।
সর্বশেষ অক্টোবর মাসে তালিকাভুক্ত বিভিন্ন কোম্পানির প্রকাশ করা শেয়ারধারণের তথ্য বিশ্নেষণ করে এমন ধারণা মিলেছে। অক্টোবর মাসে প্রধান পুঁজিবাজার ডিএসইর মাধ্যমে বিদেশিরা ৩২৮ কোটি ৯৩ লাখ টাকা মূল্যের শেয়ার বিক্রি করেছিলেন। আলোচ্য মাসে তালিকাভুক্ত ৪৫ কোম্পানি থেকে বিদেশিদের যে পরিমাণ শেয়ার কমেছে, সেগুলোর বাজারমূল্য ছিল আনুমানিক ১১০ কোটি টাকা।
এমন পার্থক্যের বিষয়ে জানতে চাইলে স্টক এক্সচেঞ্জ ও শীর্ষ ব্রোকারেজ হাউসের কর্মকর্তারা জানান, তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানির এক বিদেশি বিনিয়োগকারীর বিক্রি করা শেয়ার যদি অন্য কোনো বিদেশি কিনে নেন, তাহলে শেয়ারধারণের হারে কোনো পরিবর্তন আসে না। ফলে কোম্পানিগুলোর প্রকাশ করা তথ্য দেখে কোন কোম্পানি থেকে কোন শ্রেণির বিনিয়োগকারী কত টাকার শেয়ার কিনেছেন এবং কত টাকার শেয়ার বিক্রি করেছেন তা পৃথকভাবে বোঝা সম্ভব নয়। এ তথ্য দিয়ে নির্দিষ্ট শ্রেণির বিনিয়োগকারীদের নিট শেয়ার কেনাবেচার তথ্য পাওয়া যায়।
অক্টোবর শেষে বিভিন্ন কোম্পানির প্রকাশিত শেয়ারধারণের তথ্য অনুযায়ী, তালিকাভুক্ত ৩১৯ কোম্পানির মধ্যে ১৩৬টিতে বিদেশি বা প্রবাসী বাংলাদেশিদের শেয়ার রয়েছে। এর মধ্যে যমুনা অয়েল এবং অ্যাপোলো ইস্পাত গতকাল পর্যন্ত অক্টোবর শেষের শেয়ার ধারণের তথ্য প্রকাশ করেনি।
বাকি ১৩৪ কোম্পানির শেয়ারধারণের হার পর্যালোচনায় দেখা গেছে, সংশ্নিষ্ট কোম্পানির মোট শেয়ার বিবেচনায় শূন্য দশমিক ০১ শতাংশ থেকে শূন্য দশমিক ৮২ শতাংশ পর্যন্ত বিদেশিদের শেয়ারধারণের হার কমেছে। অন্যদিকে ১৮ কোম্পানিতে শূন্য দশমিক ০১ শতাংশ থেকে শূন্য দশমিক ৪৫ শতাংশ বেড়েছে।
অক্টোবর মাসে ডিএসইর মাধ্যমে বিদেশিরা ৫৬০ কোটি ৯২ লাখ টাকা এবং দ্বিতীয় পুঁজিবাজার সিএসইর মাধ্যমে পাঁচ কোটি ৩৫ লাখ টাকার শেয়ার কেনাবেচা করেছিলেন বলে দুই স্টক এক্সচেঞ্জ সূত্র জানিয়েছিল। এর মধ্যে ডিএসইর মাধ্যমে তারা যেসব শেয়ার কিনেছিলেন, সেগুলোর মোট বাজারমূল্য ছিল ২৩২ কোটি টাকা। অন্যদিকে তাদের বিক্রি করা শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল ৩২৮ কোটি ৯৩ লাখ টাকা। অর্থাৎ কেনার তুলনায় বেশি বিক্রি করেছিলেন ৯৬ কোটি ৯৩ লাখ টাকার শেয়ার। শেয়ারধারণের হার বিবেচনায় লংকাবাংলা ফাইন্যান্স থেকে বিদেশিদের শেয়ারধারণের হার কমেছে সবচেয়ে বেশি, যার পরিমাণ কোম্পানিটির শেয়ার বিবেচনায় শূন্য দশমিক ৮২ শতাংশ কমে ১ দশমিক ৯২ শতাংশে নেমেছে। একই সময়ে এ কোম্পানি থেকে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার কমেছে শূন্য দশমিক ১৮ শতাংশ। উভয় শ্রেণির বিনিয়োগকারীদের বিক্রি করা শেয়ার গেছে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের অ্যাকাউন্টে। এ কারণে তাদের শেয়ার ধারণের হার ১ শতাংশ বেড়ে মোটের ৪২ দশমিক ৩৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে।
এর পরের অবস্থানে থাকা সিটি ব্যাংক থেকে বিদেশিদের শেয়ার কমেছে মোটের শূন্য দশমিক ৬০ শতাংশ বা ৬০ লাখ ৯৮ হাজার। রূপালী ইন্স্যুরেন্স থেকে শূন্য দশমিক ৪৯ শতাংশ বা তিন লাখ ৭৬ হাজার কমেছে। রূপালী লাইফ ইন্স্যুরেন্স থেকে কমেছে শূন্য দশমিক ৪৫ শতাংশ।
এ ছাড়া ডেল্টা ব্র্যাক হাউজিং থেকে কমেছে শূন্য দশমিক ৩৭ শতাংশ এবং ব্র্যাক ব্যাংক, মারিকো, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক, শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজ, বেক্সিমকো ফার্মা, পূবালী ব্যাংক, আইডিএলসি থেকে শূন্য দশমিক ১৭ শতাংশ থেকে শূন্য দশমিক ২৭ শতাংশ শেয়ার কমেছে। তবে টাকার অঙ্কে গত মাসে সর্বাধিক নিট বিনিয়োগ প্রত্যাহার হয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক এবং ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো থেকে। উভয় কোম্পানি থেকে বিদেশিদের কমে যাওয়া শেয়ারের আনুমানিক বাজারমূল্য ছিল ১৭ কোটি টাকা করে মোট ৩৪ কোটি টাকা।
এর পরের অবস্থানে থাকা সিটি ব্যাংক ও মারিকো বাংলাদেশ থেকে প্রত্যাহার হয়েছে ১৩ কোটি টাকারও বেশি বিনিয়োগ। এ ছাড়া বেক্সিমকো ফার্মার কমে যাওয়া শেয়ারের বাজারমূল্য ছিল সাত কোটি টাকা, লংকাবাংলা ও ডিবিএইচ থেকে ছয় কোটি টাকা করে, পূবালী ব্যাংকের পাঁচ কোটি টাকা, গ্রামীণফোনের সাড়ে চার কোটি টাকা, আইডিএলসির তিন কোটি টাকা, স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংকের দুই কোটি টাকা এবং ন্যাশনাল ব্যাংক, ইউনাইটেড পাওয়ার ও শেফার্ডের এক কোটি টাকার বেশি।
সার্বিক নিম্নমুখী ধারার মধ্যেও গত মাসে কয়েকটি কোম্পানিতে বিদেশি বা প্রবাসীদের শেয়ারধারণ বেড়েছে। এর মধ্যে শীর্ষে ছিল প্যারামাউন্ট টেক্সটাইল। কোম্পানিটিতে বিদেশিদের শেয়ারের অংশ মোটের শূন্য দশমিক ৫৪ শতাংশ বেড়ে ৪ দশমিক ১৪ শতাংশে উন্নীত হয়েছে, টাকার অঙ্কে যার মূল্য ছিল আনুমানিক পৌনে চার কোটি টাকা। শতাংশের হারে এর পরের অবস্থানে থাকা পাওয়ার গ্রিডে শূন্য দশমিক ১১ শতাংশ বেড়ে মোটের শূন্য দশমিক ২৬ শতাংশে, অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজে শূন্য দশমিক ০৫ শতাংশ বেড়ে মোটের ৩৯ দশমিক ৮৭ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। এ ছাড়া স্কয়ার ফার্মা, মুন্নু স্টাফেলার্স, রেকিট বেনকিজার, বেক্সিমকো লিমিটেড, মার্কেন্টাইল ব্যাংকে শূন্য দশমিক ০২ থেকে শূন্য দশমিক ০৩ শতাংশ বেড়েছে। টাকার অঙ্কে সর্বাধিক নিট বিনিয়োগ হয়েছে স্কয়ার র্ফামায়, যার পরিমাণ প্রায় সাড়ে পাঁচ কোটি টাকা।
শেয়ারবার্তা / হামিদ