প্রথম প্রকল্প হিসেবে বাংলাদেশ অবকাঠামো উন্নয়ন তহবিলের অর্থায়ন পেল পায়রা বন্দরের রাবনাবাদ চ্যানেলের ক্যাপিটাল ও মেইনটেইনেন্স ড্রেজিং প্রকল্প।
গণভবন থেকে সোমবার সকালে ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে তহবিলটির উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
এ সময় প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘রিজার্ভের টাকা দিয়ে নিজস্ব তহবিল গঠন করে অবকাঠামো উন্নয়নই হবে এই ফান্ডের মূল উদ্দেশ্য।’
তিনি বলেন, ‘আমরা আজ উন্নয়নশীল দেশ। জাতির পিতা যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশ থেকে বাংলাদেশ গড়ে স্বল্পোন্নত দেশ রেখে গিয়েছিলেন। ২০১৫ সালে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশ, আর ২০২১ সালে মধ্যম আয়ের দেশ বা উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমরা স্বীকৃতি পেয়েছি।
‘উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমাদের নিজের আয়ে চলতে হবে। নিজেদের অর্থায়নে কাজ করতে হবে। আমরা আমাদের দেশকে উন্নত করব, এটাই আমাদের লক্ষ্য। আর সে লক্ষ্য বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে আমাদের অনেক কাজ করার দরকার আছে।’
এই ফান্ড গঠনের উদ্দেশ্য ও প্রক্রিয়াও তুলে ধরে সরকার প্রধান বলেন, ‘করোনার কারণে আমাদের জীবনযাত্রা সীমিত হয়ে পড়ে। অনেককেই আমরা হারিয়েছি। করোনায় আরেকটি ঘটনা আমরা দেখতে পারছি, আমাদের রিজার্ভটা বৃদ্ধি পেয়েছে, আমাদের রেমিট্যান্স বৃদ্ধি পেয়েছে।
‘এই রিজার্ভের টাকাটা আমাদের দেশের উন্নয়নে কীভাবে ব্যয় করতে পারি, সেটাই আমরা চিন্তা করেছি। বারবার অন্যের কাছে হাত পাতা বা ধার না করে নিজেদের অর্থ দিয়েই অবকাঠামো উন্নয়ন করব। এখানে দেশি-বিদেশি যারাই ইনভেস্ট করতে আসবে, তাদের ঋণ দেবার যে প্রচেষ্টা, সেটা নিজেদের অর্থ দিয়েই আমরা করতে পারব।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘এতে দেশের লাভ, আর আমাদেরও আত্মবিশ্বাস জন্মাবে, আত্মমর্যাদাবোধ আসবে। আমরা যে পারি সেটাও বিশ্বের কাছে দেখাতে পারব। সেই চিন্তাভাবনা থেকেই চিন্তা করলাম, আমাদের ছয় মাসের আমদানির টাকাটা রাখতে হবে। এটা রেখে বাকিটা আমরা কীভাবে বিনিয়োগ করতে পারি, সেটাই আমাদের প্রচেষ্টা।
‘সে জন্য আমরা চিন্তা করলাম, নিজস্ব একটা তহবিল গঠন করব। যে তহবিল থেকে বিনিয়োগকারীরা ঋণ নিতে পারবে এবং আমাদের দেশের যে অবকাঠামোগুলোর উন্নয়ন হয় তাও এখান থেকে হবে।’
দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে তৈরির অপেক্ষায় থাকা সমুদ্রবন্দরগুলোর কার্যকারিতাও তুলে ধরেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘পায়রা বন্দরের বিষয়টা আমি নিজেই চিন্তা করেছিলাম যে, আমাদের একটা বন্দর প্রয়োজন। আর আমাদের গভীর সমুদ্রবন্দরও করতে হবে।
‘ইতিমধ্যে মোংলা বন্দরও আমরা চালু করেছি, যেটা বিএনপি সরকারের আমলে বন্ধ করে দিয়েছিল। তা ছাড়া আমাদের আরেকটা বন্দর প্রায় তৈরি হয়ে গিয়েছে বা ভবিষ্যতে এটা আরও উন্নত হবে, সেটা হচ্ছে মহেশখালী-মাতারবাড়ী। সেখানেও একটা সমুদ্রবন্দর হচ্ছে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘পায়রা বন্দরটা আমরা নিজেদের উদ্যোগেই করি। ভৌগোলিক অবস্থানের কারণে বাংলাদেশের কিছু সুবিধা রয়েছে। যেমন ভারত, নেপাল, ভুটানকে আমরা ইতিমধ্যে আমাদের বন্দর ব্যবহার করার সুযোগ দিয়েছি। হয়তো আরও বেশি দেশ আমাদের এই বন্দর ব্যবহার করতে পারবে। আমরা গভীর সমুদ্রবন্দরও তৈরি করব। এই পায়রা বন্দরকে কেন্দ্র করেই সমুদ্রবন্দর গড়ে উঠতে পারে ভবিষ্যতে।
‘এসব কথা চিন্তা করেই আমাদের একটি নিজস্ব ফান্ড অবকাঠামো উন্নয়ন বা সার্বিক উন্নয়নের জন্য তৈরি করেছি। এটাই বাংলাদেশ অবকাঠামো উন্নয়ন তহবিল। স্বাভাবিকভাবেই একটু ইংরেজিতে নাম দিলে আবার একটু গালভরা নাম হয়। আন্তর্জাতিকভাবেও সেটা সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এ চিন্তা করেই আমরা নামটা দিলাম “বাংলাদেশ ইনফ্রাস্ট্রাকচার ফান্ড”।’