নিবন্ধিত কোম্পানির শেয়ার বন্ধক রেখে ঋণ নেয়ার সুযোগ আসছে। বর্তমানে ব্যাংকসহ বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে একমাত্র স্থাবর (জমি) সম্পত্তি বন্ধক রেখে ঋণ নেয়া যায়। কিন্তু আগামীতে স্থাবর ছাড়াও অস্থাবর সম্পত্তি রেখেও ঋণ নেয়া যাবে। এ জন্য একটি নতুন আইন প্রণয়ন চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে। আইনটির নামকরণ করা হয়েছে- ‘জামানত সুরক্ষা (অস্থাবর সম্পত্তি) আইন ২০২১’।
প্রস্তাবিত এই আইনের অধীনে প্রাথমিকভাবে ঋণ নেয়ার ক্ষেত্রে ১০ ক্যাটাগরির অস্থাবর সম্পত্তির তালিকা তৈরি করা হয়েছে। এগুলো জামানত হিসেবে গচ্ছিত রেখে আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেয়া যাবে। বাংলাদেশ ব্যাংক ও অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগ যৌথভাবে আইনটির খসড়া প্রণয়ন করেছে।
খসড়া আইনে চিহ্নিত দশ ক্যাটাগরির অস্থাবর সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে- প্রয়োজনীয় ডকুমেন্ট দ্বারা সমর্থিত ও সুরক্ষিত রফতানির উদ্দেশ্যে বা রফতানি আদেশ অনুযায়ী পণ্য তৈরির কাঁচামাল। ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠানে গচ্ছিত আমানতের সনদ।
স্বর্ণ-রৌপ্য ও অন্যান্য মূল্যবান ধাতু, যার ওজন ও বিশুদ্ধতার মান স্বীকৃত কর্তৃপক্ষ দ্বারা সার্টিফায়েড। নিবন্ধিত মানসম্পন্ন কোম্পানির শেয়ার সার্টিফিকেট। মেধাস্বত্ব অধিকার দ্বারা স্বীকৃত মেধাস্বত্ব পণ্য (প্যাটেন্ট কপিরাইট)। কোনো সেবার প্রতিশ্রুতি যার বিপরীতে সেবাগ্রহীতার মূল্য পরিশোধের স্বীকৃত প্রতিশ্রুতি দেয়া হয়েছে (ওয়ার্ক অর্ডার)।
আসবাব-কাষ্ঠল উদ্ভিদ-ফলদ উদ্ভিদ-ওষুধি উদ্ভিদ-ইলেকট্রনিক পণ্য। সফটওয়্যার, অ্যাপস যার মূল্য প্রাক্কলন করা সম্ভব। যান্ত্রিক বা অযান্ত্রিক যানবাহন। খনিজসম্পদ (তেল, গ্যাস, হাইড্রোকার্বন ও ভূ-গর্ভস্থ মূল্যবান ধাতু) এবং যথাযথভাবে সংরক্ষিত কৃষিজাত পণ্য-প্রক্রিয়াজাত মৎস্য বা জলজ প্রাণিসম্পদ-আয় উৎসারী জীবজন্তু (অজাত শাবকসহ)।
আইনটি প্রণয়নের সাথে সংশ্লিষ্ট এক সূত্র জামানত আইন প্রণয়নের প্রয়োজনীয়তার কথা ব্যাখ্যা করতে যেয়ে বলেছেন, বর্তমানে দেশে স্থাবর সম্পত্তি যেমন- জমি, বাড়ি, শিল্প প্রতিষ্ঠান ইত্যাদি জামানত হিসেবে বন্ধক রেখে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেয়া যায়। কিন্তু স্থানান্তরযোগ্য বা অস্থাবর সম্পত্তি বন্ধক রেখে ঋণ প্রাপ্তির কোনো বিধান না থাকায় বৈধভাবে ঋণ গ্রহণের সুযোগ থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন অনেকে। এ প্রেক্ষিতে প্রচলিত ঋণ/বিনিয়োগ ব্যবস্থায় স্থানাস্তরযোগ্য/অস্থাবর সম্পদকে জামানত হিসেবে স্বীকৃতি দিয়ে অধিক মানুষের নিকট ঋণ/বিনিয়োগ সহজলভ্য করার উদ্দেশ্যে আইনটি প্রণয়ন করা হচ্ছে।
আইনের খসড়ায় বলা হয়েছে, সর্বোচ্চ এক বছর অস্থাবর সম্পত্তি বন্ধক রেখে ঋণ নেয়া যাবে। কিন্তু আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও সংশ্লিষ্ট ঋণগ্রহীতার পারস্পরিক সমঝোতার মাধ্যমে এই মেয়াদ বাড়ানো যেতে পারে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রণীত খসড়ায় আইনটি বাস্তবায়নে একটি ‘সিকিউরড ট্রানজ্যাকশন রেজিস্ট্রেশন কর্তৃপক্ষ’ গঠনের কথা বলা হয়েছে। ব্যাংকের গভর্নর কিংবা তার কোনো মনোনীত ব্যক্তি সংস্থার পরিচালনা বোর্ডের চেয়ারম্যান এবং বোর্ড কর্তৃক নিযুক্ত একজন রেজিস্ট্রার হবেন বোর্ডের সচিব।
পরিচালনা বোর্ডের অপর সদস্যরা হবেন: আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব কিংবা তার কোনো মনোনীত ব্যক্তি, বিএসইসি চেয়ারম্যান কিংবা তার কোনো মনোনীত ব্যক্তি, আরজেএসসির রেজিস্ট্রার কিংবা তার কোনো মনোনীত প্রতিনিধি এবং মাইক্রো ক্রেডিট রেগুলেটরি অথরিটির চেয়ারম্যান কিংবা তার কোনো মনোনীত ব্যক্তি।
আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সংশোধিত খসড়ায় জামানতযোগ্য অস্থাবর সম্পত্তি নিবন্ধন সংক্রান্ত কার্যক্রম বাংলাদেশ ব্যাংকের ওপর ন্যস্ত করা হয়েছে। আইনটির বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের একটি সূত্র জানায়, ইতোমধ্যে আইনটি নিয়ে একাধিক বৈঠক হয়েছে এবং মোটামুটি এর একটি খসড়া তৈরি হয়েছে। তবে চূড়ান্ত করতে আরো কিছুটা সময় লাগবে। বর্তমানে আইনটি ‘বাংলাভাষা বাস্তবায়ন কোষ’-এ পাঠানো হয়েছে।