বিকাশ ও রকেটে প্রতি হাজারে ক্যাশ আউট চার্জ ১৭ টাকা ৫০ পয়সা। প্রতি হাজারে এই প্রতিষ্ঠান নিচ্ছে ১১ টাকা ৪৯ পয়সা। বিদ্যুৎ, গ্যাসের বিলের মতো ইউটিলিটি সেবায় বিকাশ নেয় ৫ থেকে ৩০ টাকা। নগদ এজন্য কোনো টাকা কাটে না। সেন্ড মানির ক্ষেত্রে বিকাশ নেয় ৫ টাকা। তবে রকেট ও নগদে পাঠানো যায় বিনামূল্যে।
রাজধানীর মিরপুরে একটি পোশাক কারখায় চাকরি করেন পারুল আক্তার। প্রতিমাসে গ্রামের বাড়িতে থাকা মা-বাবার জন্য টাকা পাঠানো অপরিহার্য।
পারুল আক্তার বেতন পেলেই বাসার পাশের বিকাশ এজেন্টের কাছে যান, হাজারে ২০ টাকায় পাঠান টাকা। কিন্তু এ মাসে টাকা পাঠানোর আগে তারই এক সহকর্মীর কাছে জানতে পারেন, ২০ টাকার কমেও টাকা পাঠানো যায়।
তাই এবার টাকা পাঠাতে গিয়ে দোকানির সঙ্গে বাকবিতণ্ডায় জড়ান পারুল আক্তার। দোকানির কাছে জানতে চান, কেন বেশি নেয়া হচ্ছে চার্জ?
এক স্থান থেকে অন্য স্থানে দ্রুত টাকা পাঠাতে হাতের নাগালেই মিলছে নানান সেবা। ব্যাংকের পাশাপাশি আছে মোবাইলে আর্থিক সেবাদাতা, এমএফএস প্রতিষ্ঠান। কিন্তু এই অ্যাপস এবং এসএমএস-এর মাধ্যমে অর্থ লেনদেনে একেক প্রতিষ্ঠান নির্ধারণ করেছে একেক খরচের হার। এতে বিভ্রান্ত হচ্ছেন সেবা গ্রহীতারা।
পারুল আক্তার জানান, প্রতি মাসে তিন থেকে পাঁচ হাজার টাকা গ্রামের বাড়িতে পাঠাতে হয়। পাঁচ হাজার টাকা পাঠাতে ১০০ টাকা কেটে রাখে।
বলেন, ‘ব্যাংকে ট্যাকা পাঠাইতে ম্যালা ঝামেলা। মোবাইলেই পাঠাইলে ঝামেলা কম। কিন্তু হাজারে ২০ ট্যাকা নেয়। এইডা বেশি। এইডা কম হইলে আমগো গরিবের উপকার হয়।’
বিকাশ-এ সবচেয়ে বেশি চার্জ : এজেন্ট এবং সেবা দেবার ক্ষেত্রে এগিয়ে ব্র্যাক ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা বিকাশ। তবে, এই প্রতিষ্ঠান অর্থ প্রেরণ এবং উত্তোলনে নিচ্ছে সবচেয়ে বেশি অর্থ।
প্রতি হাজারে ক্যাশ আউট চার্জ ১৭ টাকা ৫০ পয়সা। আর সেন্ড মানি বা এক ব্যক্তি অপর ব্যক্তিকে টাকা পাঠাতে গেলে প্রতি লেনদেনে নেয়া হয় ৫ টাকা। সব মিলিয়ে টাকা উত্তোলন এবং জমার ক্ষেত্রে বিকাশের একজন গ্রাহককে খরচ করতে হয় ২২ টাকা ৫০ পয়সা।
ইউটিলিটি বিল পরিশোধের ক্ষেত্রে বিকাশের চার্জ সবচেয়ে বেশি। এসব বিল দেবার ক্ষেত্রে বিকাশ সর্বনিম্ন ৫ টাকা থেকে সর্বোচ্চ নিচ্ছে ৩০ টাকা পর্যন্ত। আর বেতন দেয়ার ক্ষেত্রে এই প্রতিষ্ঠানের চার্জ ১ দশমিক ১ ভাগ থেকে ১ দশমিক ৫০ ভাগ পর্যন্ত।
মোবাইল ব্যাংকিং সেবায় সবচেয়ে বেশি টাকা নেয়া প্রতিষ্ঠানটির কমিউনিকেশন বিভাগের প্রধান শামসুদ্দিন হায়দার ডালিম বলেন, ‘এটা প্রযুক্তিনির্ভর সেবা। সেবার পরিসর বড় হওয়ায় লোকবল বেশি। ফলে খরচটাও বেশি। ব্যবসা টিকিয়ে রাখার জন্য, মান ধরে রাখতে সেবার বিনিময়ে গ্রাহকের কাছ থেকে অর্থ নেয়া হয়। এখান থেকে খুব বেশি লাভ থাকে না। কারণ, অর্থের বড় অংশই ডিলার, এজেন্ট, নেটওয়ার্ক সেবাদাতা প্রতিষ্ঠানগুলোর মধ্যে ভাগ করে দিতে হয়। প্রত্যন্ত অঞ্চলে সেবা দিতে খরচ বেশি পড়ে যায়’।
রকেটের চিত্র : ডাচ বাংলা ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা রকেটও অর্থের মাধ্যমে সেবা দিয়ে থাকে। এই সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠান ব্যবহার করলে প্রতি হাজারে ক্যাশ আউট খরচ গুণতে হবে ১৭ টাকা ৫০ পয়সা।
তবে, সেন্ড মানি এবং ইউটিলিটি বিল দেবার ক্ষেত্রে কোনো খরচ করতে হয় না। এই দুই সেবা নগদ এর মতো ফ্রি দিচ্ছে রকেট। তবে, বেতন দেয়ার ক্ষেত্রে খরচ করতে হবে ১ শতাংশ অর্থ।
সবচেয়ে কম চার্জ নগদে : নতুন এসে সবচেয়ে কম খরচে সেবা দিচ্ছে ডাক বিভাগের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা নগদ। প্রতি হাজারে এই প্রতিষ্ঠান নিচ্ছে ১১ টাকা ৪৯ পয়সা।
সেন্ড মানির ক্ষেত্রে কোনো টাকা গুণতে হয় না গ্রাহকদের। ইউটিলিটি বিলেও নেয়া হচ্ছে না কোনো অর্থ। বেতন দেয়ার ক্ষেত্রে নেয়া হচ্ছে প্রতি একশ টাকায় ৭০ পয়সা।
প্রতি হাজারে ক্যাশ আউট চার্জ ১৭ টাকা ৫০ পয়সা। তুলনামূলক কম চার্জে সেবা দিয়ে থাকে ডাক বিভাগের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা নগদ।
চার্জ কমিয়েও সেবা দেয়া সম্ভব
নগদ এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক তানভীর এ মিশুক বলেন, ‘মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের ক্ষেত্রে দেশে এখনও যথেষ্ট প্রতিযোগিতার পরিবেশ তৈরি হয়নি। অনেকগুলো লাইসেন্স দেয়া হয়েছে ঠিকই। তবে সেবার পরিসর এবং খরচের বিষয়ে বড় রকমের পার্থক্য রয়েছে। তবে ২০১৯ সালের ২৬ মার্চ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত ধরে যাত্রা করার পর থেকে ‘নগদ’ এই পরিস্থিতি বদলে দিতে অনেকখানিক কাজ করেছে। ফ্রি সেন্ড মানি ছাড়াও সর্বনিন্ম ক্যাশ-আউট চার্জ দেয়া এবং অধিকাংশ বিল প্রদান ফ্রি করে দেয়ার মাধ্যমে ‘নগদ’ও শক্ত অবস্থান পেয়েছে।”
তিনি বলেন, ‘একজনের হাতে ৬০-৭০ শতাংশ মার্কেট শেয়ার না দিয়ে বরং অন্তত তিন চারটি অপারেটর যদি কাছাকাছি মার্কেট শেয়ার নিয়ে থাকে তাহলে সুষম প্রতিযোগিতা নিশ্চিত সহজ হবে, তাতে গ্রাহকেরই বেশি লাভ হবে।’
মিশুক জানান, বর্তমানে এমএফএস বাজারের ৩০ শতাংশ ‘নগদ’এর নেটওয়ার্কে রয়েছে। মাত্র দুই বছরের মধ্যে তিন কোটির বেশি গ্রাহক হয়েছে তাদের।
তবে চলতি বছরের মধ্যে এটিকে ৫০ শতাংশে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্য নির্ধারণ করেছে নগদ।
২০১২ সালে বিকাশ সেবা চালু করার পর দেশে এখন নগদ, রকেট, ইউক্যাশ, এমক্যাশ, শিওরক্যাশসহ ১৫টির মত কোম্পানি মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দিচ্ছে।