বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে পুঁজিবাজারের লেনদেনে আসা ‘বিএনও’ ব্র্যান্ডের লুব-রেফ (বাংলাদেশ) লিমিটেড পুঁজিবাজারে লেনদেনের শুরুতেই ব্যতিক্রমী রেকর্ড করেছে। কোম্পানিটির শেয়ার মঙ্গলবার (৯ মার্চ) থেকে পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরু হয়। লেনদেনের প্রথম দুদিন দর বাড়ায় প্রতিটি শেয়ারের দর ৬০ টাকা ৭০ পয়সায় উঠে যায়। শেয়ারের এমন দর বাড়লেও লেনদেনে ঘটে ভিন্ন চিত্র।
এক শ্রেণির বিনিয়োগকারী আইপিওতে পাওয়া শেয়ার বিক্রির হিড়িক জুড়ে দেন। এতে দ্বিতীয় কার্যদিবসে অর্থাৎ বুধবার কোম্পানিটির ৭৩ কোটি ৪৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়। পুঁজিবাজারের ইতিহাসে এর আগে লেনদেনের দ্বিতীয় দিনে আর কোনো কোম্পানির এতো টাকার শেয়ার লেনদেন হয়নি।
সাধারণত লেনদেনের প্রথমদিকে দর বাড়ার প্রবণতা বেশি থাকায় বিনিয়োগকারীরা আইপিওতে পাওয়া শেয়ার বিক্রি না করে ধরে রাখেন। কিন্তু লুব-রেফের ক্ষেত্রে ভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে।
প্রথমদিন রেকর্ড লেনদেনের পর দ্বিতীয় দিনেও কোম্পানিটির শেয়ার বিক্রির এক প্রকার হিড়িক দেখা যায়। যার নেতিবাচক প্রভাব পড়ে শেয়ার দরে। ফলে দ্বিতীয় কার্যদিবসেই কোম্পানিটি পতনের খাতায় নাম লিখিয়েছে। এ প্রবণতা অব্যাহত থাকে তৃতীয় দিনেও।
বৃহস্পতিবার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) কোম্পানিটির শেয়ার দর ৯.৮৮ শতাংশ কমে ৫৪ টাকা ৭০ পয়সায় দাঁড়িয়েছে। আর লেনদেন হয়েছে ১৯ কোটি ৭০ লাখ টাকা।
লেনদেনের দ্বিতীয় কার্যদিবসেই বড় দরপতনে তালিকায় নাম লেখানোর বিষয় প্রশ্ন করা হলে ডিএসইর এক সদস্য বলেন, ‘লুব-রেফের কাট অফ প্রাইস বেশি নির্ধারণ করা হয়েছে বলে গুঞ্জন আছে। বিএসইসি ৫০ টাকার ওপরে বিডিং করা যোগ্য বিনিয়োগকারীদের শাস্তির আওতায় এনেছে, এসব কিছুর নেতিবাচক প্রভাব হয়তো শেয়ারের দরে পড়েছে।’
তিনি বলেন, ‘কোম্পানি ভালো হোক অথবা খারাপ হোক সাধারণত লেনদেনের প্রথমদিকে শেয়ার বিক্রির চাপ কম থাকে। ফলে শেয়ারের দরও বাড়ে। কিন্তু লুব রেফের ক্ষেত্রে ভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে। বাজারে কোম্পানিটির শেয়ার বিক্রির বড় চাপ দেখা যাচ্ছে। এর অর্থ হলো কোম্পানিটির ওপর বিনিয়োগকারীরা আস্থা পাচ্ছেন না।’
প্রাথমিক গণপ্রস্তাবে (আইপিও) শেয়ার ছাড়ার আগে কোম্পানিটির বিডিং নিয়েও বিতর্ক রয়েছে। যে কারণে কাট-অফ প্রাইস নির্ধারণ সংক্রান্ত বিডিংয়ে অতিরিক্ত দর প্রস্তাব করা যোগ্য বিনিয়োগকারীদের তলব করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) এবং শাস্তিও দেয়া হয়।
ব্যবসা সম্প্রসারণ (নতুন যন্ত্রপাতি ক্রয় ও প্রতিস্থাপন), ব্যাংক ঋণ পরিশোধ এবং আইপিও খরচ মেটাতে কোম্পানিটি বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের মাধ্যমে শেয়ারবাজার থেকে ১৫০ কোটি টাকা উত্তোলন করার অনুমোদন দেয় বিএসইসি।
নিয়ন্ত্রক সংস্থার অনুমোদন নিয়ে গত ২৬ জানুয়ারি থেকে ১ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত কোম্পানিটি সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে আইপিওতে আবেদন গ্রহণ করে। তার আগে যোগ্য বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণে বিডিং সম্পন্ন করে কোম্পানিটি।
বিডিংয়ে যোগ্য বিনিয়োগকারীরা কাট অফ প্রাসই নির্ধারণ করেন ৩০ টাকা। অবশ্য যোগ্য বিনিয়োগকারীদের পক্ষ থেকে সর্বোচ্চ ৬০ টাকা দিয়ে কোম্পানিটির শেয়ার কেনার প্রস্তাব দেয়া হয় বিডিংয়ে।
অতিরিক্ত দর প্রস্তাব করায় যেসব যোগ্য বিনিয়োগকারী কোম্পানিটির শেয়ার কিনতে ৫০ টাকার ওপরে দর প্রস্তাব করেছে তাদেরকে ব্যাখ্যা দেয়ার জন্য তলব করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।