পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রাষ্ট্রমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান রূপালী ব্যাংক লিমিটেড প্রগতি সিস্টেমের সেবা শিওরক্যাশের সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে মোবাইল ব্যাংকিং সেবা পরিচালনা করছে। যার নাম রূপালী ব্যাংক শিওরক্যাশ। এর মাধ্যমে সারা দেশে বৃত্তি, ভাতা বিতরণ, ভর্তুকি প্রদানসহ মোবাইল ব্যাংকিংয়ের বিভিন্ন ধরনের সেবা দেওয়া হচ্ছে। এখন হঠাৎ সেবার ধরন পরিবর্তনের উদ্যোগ নিয়েছে প্রগতি সিস্টেমস। ফলে আর মোবাইল ব্যাংকিং সেবা দেবে না প্রতিষ্ঠানটি। এ জন্য মাঠপর্যায়ের কর্মীদের চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। এতে রূপালী ব্যাংকের শিওরক্যাশ সেবা বন্ধের হুমকিতে পড়েছে।
এখন ব্যাংক শাখাগুলোকে এজেন্ট হিসেবে দায়িত্ব দিয়ে সেবাটি চালিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছে রূপালী ব্যাংক। প্রগতি সিস্টেমও শিওরক্যাশের ডেটা সেন্টারসহ সব সিস্টেম রূপালী ব্যাংকের কাছে হস্তান্তর শুরু করেছে। আগামী ৫ এপ্রিলের মধ্যে সম্পন্ন হবে এই হস্তান্তরপ্রক্রিয়া। এরপর রূপালী ব্যাংক কর্মকর্তারা দক্ষতা অর্জন করে শিওরক্যাশ সেবাটি চালিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করবেন। টিকে থাকলে পরে এ সেবার নামেও পরিবর্তন আনবে ব্যাংকটি।
শুধু রূপালী নয়, প্রগতির সেবার ধরন পরিবর্তনে বিপাকে পড়তে যাচ্ছে বাংলাদেশ কমার্স, যমুনা ও ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকও। কারণ, একসঙ্গে দেশের চারটি ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিং সেবা প্রদান করছে শিওরক্যাশ। তবে সমস্যাটা বেশি রূপালী ব্যাংকের, কারণ ব্যাংকটি গ্রাহক ও সেবার আকার বাড়িয়েছে। অন্যরা চালাচ্ছে নামমাত্র।
জানা যায়, বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে পেমেন্ট সিস্টেম অপারেটর (পিএসও) হিসেবে লাইসেন্সপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান প্রগতি সিস্টেমস লিমিটেড। এখন তা পেমেন্ট সার্ভিস প্রোভাইডার (পিএসপি) হতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকে আবেদন করেছে। তবে কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানিয়ে দিয়েছে, পিএসও হিসেবে যে সেবা দেওয়া হচ্ছে, তা বন্ধের পরই পিএসপি লাইসেন্সের বিষয়ে অগ্রগতি হবে।
গত ২৭ জানুয়ারি এ নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক, রূপালী ব্যাংক ও প্রগতি সিস্টেমের মধ্যে এক সভা হয়। এতে পরবর্তী ৪৫ কর্মদিবসের মধ্যে প্রগতির সব প্রযুক্তি রূপালী ব্যাংককে বুঝিয়ে দেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়।
রূপালী, কমার্স, যমুনা ও ফার্স্ট সিকিউরিটি মোবাইল ব্যাংকিং সেবার লাইসেন্স নিয়েছে ঠিকই, তাদের পক্ষে সেবাটি পরিচালনা করছে প্রগতি সিস্টেম। এর মধ্যে ‘রূপালী ব্যাংক শিওরক্যাশ’ নামে রূপালী ব্যাংক সেবা দিচ্ছে। আর অন্যরা ‘শিওরক্যাশ’ নামেই সেবা দিচ্ছে। শিওরক্যাশ মূলত প্রগতি সিস্টেমের মোবাইল ব্যাংকিং সেবার ব্র্যান্ডের নাম। মোবাইল ব্যাংকিং সেবার প্রযুক্তি, পরিবেশক, এজেন্ট ও ব্যবসা উন্নয়ন পরিচালনা করে থাকে প্রগতি সিস্টেম। তবে গত বছর হঠাৎ প্রতিষ্ঠানটি সেবার ধরন পরিবর্তনের উদ্যোগ নেয়। ফলে বিপাকে পড়ে যায় রূপালী ব্যাংকসহ অন্যরা।
শিওরক্যাশের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা শাহাদাত খান এ বিষয়ে বলেন, ‘এই সেবায় আমাদের অনেক খরচ করতে হতো, কিন্তু সেভাবে মুনাফা আসত না। এ জন্য সেবার ধরন পাল্টে ফেলতে চাইছি। মাঠপর্যায়ের কর্মীও কমিয়ে এনেছি। আগে শিওরক্যাশ পরিচালনার দিকটা যেভাবে দেখা হতো, এখন তা আর হবে না। এখন ব্যাংকগুলোই এই সেবা পরিচালনা করবে। তবে ব্যাংক চাইলে প্রযুক্তি সেবা আমরা দেব।’
রূপালী ব্যাংক গত মাসের শুরুতে সব শাখার প্রধানদের চিঠি দিয়ে জানায়, প্রগতি সিস্টেম পিএসপি হিসেবে আবেদন করায় রূপালী ব্যাংকের মোবাইল ব্যাংকিংয়ে দেওয়া কারিগরি সেবা বন্ধের প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্দেশনা মেনে রূপালী ব্যাংক একাই এই সেবা প্রদান করবে। গত ২৮ জানুয়ারি থেকে প্রগতি সিস্টেম থেকে এই সেবা রূপালী ব্যাংকে হস্তান্তরপ্রক্রিয়া চলমান আছে। এই সময়ে কর্মী বাতিলের কারণে রূপালী ব্যাংকের শিওরক্যাশ সেবা প্রদানে সাময়িক অসুবিধা হতে পারে। এ জন্য গ্রাহকদের আশ্বস্ত করতে হবে যে সেবাটি বন্ধ হয়নি।
এরপর গত ২৮ ফেব্রুয়ারি আরেক চিঠিতে বলা হয়, মাঠপর্যায়ে কর্মী প্রত্যাহার করায় মোবাইল ব্যাংকিং সেবা প্রদান ব্যাহত হচ্ছে। এ জন্য সব শাখাকে এজেন্ট হিসেবে কাজ করতে হবে। পাশাপাশি পরিবেশকদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে সেবা অব্যাহত রাখতে হবে।
এই সেবায় ২ কোটি ১৪ লাখ ২৭ হাজার গ্রাহক হিসাব খুললেও এখন সক্রিয় আছে মাত্র ১০ লাখ ৫৯ হাজার ৬৬৩টি। সারা দেশে পরিবেশক আছেন ১৮১ জন ও এজেন্ট ১ লাখ ৪১ হাজার ৮৭২ জন। গত জানুয়ারিতে লেনদেন হয় ১৮০ কোটি টাকা, ফেব্রুয়ারিতে যা কমে হয় ১১৪ কোটি টাকা।
জানা গেছে, একসময় পুরো প্রাইমারি স্কুলের উপবৃত্তির টাকা যেত রূপালী ব্যাংক শিওরক্যাশের মাধ্যমে। এভাবে প্রতিবছরে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা বিতরণ করা হতো। তবে গত বছরে এই দায়িত্ব চলে যায় ডাক বিভাগের সেবা নগদের কাছে। এরপরই প্রগতি সিস্টেম এই সেবা থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়। তবে এর বাইরে ল্যাকটেটিং মাদার সহায়তা কর্মসূচি, আখচাষিদের ভর্তুকি, পল্লী বিদ্যুতের বিল, বিভিন্ন স্কুল-কলেজের বেতনসহ বিভিন্ন গ্রাহক রয়েছে রূপালী ব্যাংক শিওরক্যাশের। এ জন্য সেবাটি চালিয়ে নিতে চায় ব্যাংকটি।
রূপালী ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ওবায়েদ উল্লাহ আল মাসুদ এ বিষয়ে বলেন, ‘প্রগতি নতুন লাইসেন্স পেলে আমাদের সেবাটি প্রায় বন্ধ হয়ে যাবে। তবে আমরা নিজেরাই সেবাটি চালিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করছি। সরকারি চার ব্যাংক মিলে আলাদা মোবাইল ব্যাংক সেবা চালুরও উদ্যোগ রয়েছে।’ অন্য তিন ব্যাংক জানিয়েছে, তারা বিষয়টি সম্পর্কে এখনো অবহিত নয়।