পুঁজিবাজারে আসার ক্ষেত্রে কোম্পানিগুলোর উপর নতুন নতুন শর্ত আরোপ করছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এসব শর্তের মধ্যে অন্যতম হলো কোম্পানিগুলোকে বিভিন্ন মেয়াদে বোনাস লভ্যাংশ না দিয়ে নগদ লভ্যাংশ দেয়া।
সদ্য পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়া এমন দুটি প্রতিষ্ঠানকে এমন শর্তারোপ করেছে বিএসইসি। এর মধ্যে তথ্য-প্রযুক্তি খাতের কোম্পানি ই-জেনারেশনকে চার বছর এবং বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার কোম্পানিকে পাঁচ বছর নগদ লভ্যাংশ দেয়ার শর্ত দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। লভ্যাংশ দেয়ার শর্তের বিষয়টি বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র রেজাউল করিম সংবাদ মাধ্যমকে নিশ্চিত করেছেন। এরই মধ্যে ই-জেনারেশনের লেনদেন পুঁজিবাজারে শুরু হয়েছে। অপরদিকে বারাকা পতেঙ্গার কাট অফ প্রাইস নির্ধারিত হয়েছে।
বিএসইসির মুখপাত্র রেজাউল করিম বলেন, বর্তমান কমিশন বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় সব ধরনের পদক্ষেপ নিচ্ছে। এই শর্তটিও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে দেয়া। এখন যারা বিনিয়োগ করছেন তারা এতে আরও উৎসাহিত হবেন বলেও জানান তিনি। অপরদিকে বিনিয়োগকারীরা যাতে নগদ লভ্যাংশ পেতে পারে, সে বিষয়টির ওপর গুরুত্ব দিয়েছে বিএসইসি। সেদিক বিবেচনা করে কোম্পানিগুলোকে এ শর্ত দেয়া হয়েছে।
শর্ত আরোপের বিষয়ে ই-জেনারেশন কোম্পানির প্রধান অর্থ কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, এমন কোনো শর্ত কনসেন্ট লেটারে দেয়া নেই। লভ্যাংশ দেয়ার বিষয়টি পরিষ্কার করে কোথাও বলা হয়নি। বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দেয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ কোম্পানির বিষয়। কোম্পানির এজিএমে পাস করতে হয় যেকোনো প্রস্তাব। তবে এমন শর্ত দেয়া বাজারের জন্য ভালো বলেও জানান তিনি। এমন শর্তে বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগে উৎসাহিত হবে।
ই-জেনারেশন লিমিটেড: গত ২৩ ফেব্রুয়ারি থেকে দেশের উভয় পুঁজিবাজারে ই-জেনারেশনের লেনদেন শুরু হয়। ৪ মার্চ লেনদেন শেষে কোম্পানির শেয়ারের সর্বশেষ দর ছিল ৩৯ টাকা ৪০ পয়সা। ৭৫ কোটি টাকা পরিশোধ মূলধনের কোম্পানির শেয়ারসংখ্যা সাত কোটি ৫০ লাখ। সর্বশেষ হিসাব বছরের তথ্য অনুযায়ী, কোম্পানির উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের কাছে ৩৭ দশমিক ৩৯ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ৩৬ দশমিক ৪২ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ২৬ দশমিক ১৯ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।
কোম্পানিটির চলতি অর্থবছরের ছয় মাসে (জুলাই-ডিসেম্বর ’২০) শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ৮১ পয়সা। আগের অর্থবছরের একই সময়ে মুনাফা হয়েছিল এক টাকা আট পয়সা।
এদিকে কোম্পানিটির চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয় প্রান্তিকের তিন মাসে (অক্টোবর-ডিসেম্বর ’২০) শেয়ারপ্রতি মুনাফা (ইপিএস) হয়েছে ৪৫ পয়সা, যার পরিমাণ আগের অর্থবছরের একই সময়ে হয়েছিল ৫৩ পয়সা। ২০২০ সালের ৩১ ডিসেম্বর কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সম্পদ (এনএভিপিএস) দাঁড়িয়েছে ২২ টাকা ৯২ পয়সায়।
গত বছরের ২১ অক্টোবর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ৭৪৫তম নিয়মিত সভায় এ কোম্পানিটির আইপিও অনুমোদন দেয়া হয়।
আইপিওর মাধ্যমে কোম্পানিটি ১০ টাকা ইস্যু মূল্যের ১৫ কোটি সাধারণ শেয়ার বিক্রি করে ১৫০ কোটি টাকা করে, যা দিয়ে বাণিজ্যিক স্পেস ক্রয়, লোন পরিশোধ, ডিজিটাল হেলথকেয়ার প্ল্যাটফর্ম উন্নয়ন এবং আইপিও খরচ পরিচালনা করা হবে।
বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার লিমিটেড: বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার লিমিটেডকে পাঁচ বছর নগদ লভ্যাংশ দেয়ার শর্ত দেয়া হয়েছে বলে জানা যায়। পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির অপেক্ষায় থাকা বারাকা পতেঙ্গার কাট অফ প্রাইস নির্ধারিত হয়েছে ৩২ টাকায়।
গত ৫ জানুয়ারি পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) ৭৫৫তম কমিশন সভায় বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার লিমিটেডকে যোগ্য বিনিয়োগকারীদের কাছে শেয়ার বিক্রি করার জন্য নিলামের অনুমতি দেয়া হয়। তার পরিপ্রেক্ষিতে নিলামের সময়সূচি নির্ধারণ করা হয়েছে।
বারাকা গ্রুপের সহযোগী প্রতিষ্ঠান বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ার লিমিটেড আইপিওর মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে ২২৫ কোটি টাকা সংগ্রহ করবে। এই টাকা কোম্পানিটি তার সহযোগী প্রতিষ্ঠান কর্ণফুলী ও বারাকা পাওয়ারে বিনিয়োগ করবে। একই সঙ্গে আংশিক দীর্ঘমেয়াদি ঋণ পরিশোধ ও আইপিওর জন্য ব্যয় করবে।
২০২০ সালের ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাববছরের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, আলোচিত বছরে বারাকা পতেঙ্গা পাওয়ারের শেয়ারপ্রতি সমন্বিত আয় ছিল চার টাকা ৩৭ পয়সা। আর এককভাবে শেয়ারপ্রতি আয় ছিল এক টাকা ৮৪ পয়সা।
২০২০ সালের ৩০ জুন সমন্বিতভাবে কোম্পানিটির শেয়ারপ্রতি সম্পদমূল্য (এনএভিপিএস) ছিল ২৩ টাকা। আর এককভাবে এনএভিপিএস ছিল ২০ টাকা ৯৮ পয়সা।
লংকাবাংলা ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড বারাকা পতেঙ্গার ইস্যু ম্যানেজারের দায়িত্ব পালন করছে।