দেশের অর্থনীতি, কর্মসংস্থান এবং ব্যবসায়ীদের কথা ভেবে সরকারের দেয়া প্রণোদনার অর্থ পরিশোধে আরও দুই বছর সময় বাড়ানোর দাবি জানিয়েছেন পোশাক খাত সংশ্লিষ্টরা।
তারা বলছেন, লকডাউনের ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারেননি পোশাক ব্যবসায়ীরা। অর্ডার বাতিল হলেও সে তুলনায় অর্ডার না আসা এবং জাহাজ ও কন্টেইনার সংকটে সময়মতো পণ্য ডেলিভারি দেয়া সম্ভব হচ্ছে না। এছাড়া কাস্টমসে পণ্য আমদানি-রফতানিতে নানান হয়রানি সংকটকে আরও জটিল করছে।
মঙ্গলবার (০২ মার্চ) রাতে রাজধানীর হোটেল পূর্বাণীতে আয়োজিত পোশাক খাতের সাম্প্রতিক সংকট ও উত্তরণের উপায় নিয়ে আয়োজিত এক বিশেষ সাধারণ সভায় এসব মতামত ব্যক্ত করেন তারা। বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিকেএমইএ) এ সভার আয়োজন করে।
সভায় এফবিসিসিআইয়ের সাবেক সভাপতি শফিউল ইসলাম মহিউদ্দিন বলেন, ‘সরকার প্রধান শেখ হাসিনা ব্যবসাবান্ধব। আমরা আমাদের সমস্যার কথা তার কাছে পৌঁছে দিতে পারলেই সমাধান আসবে। তিনি ব্যাংক ঋণের সুদহার এক অঙ্কে নামিয়ে এনেছেন। আমাদের সমস্যা তৈরি করছে কাস্টমস, সেখানে দুর্নীতি আছে অতিমাত্রার। আমরা এটা চাই না, এ সমস্যার সমাধানে আমরা আবারও কথা বলব।’
বিকেএমইএ সভাপতি সেলিম ওসমান বলেন, ‘আসন্ন রমজান ও কোরবানি ঈদের সময় বেতনের সঙ্গে বোনাস যোগ হবে। আমরা এখনই বলতে পারছি না, কারখানায় আগামী মাসের বেতন কিভাবে দেব। জাহাজ ও কন্টেইনার সংকটে পণ্য পরিবহণ সম্ভব হচ্ছে না। আবার কাজ নাই, কাজ হলেও কাস্টমস সমস্যার কারণে পণ্য খালাসে জটিলতা তৈরি হচ্ছে। এ অবস্থায় আমরা সুদ দিতে পারবো। প্রণোদনার আসল টাকা আপাতত দিতে পারবো না। আরও দুই বছর সময় দেয়ার দাবি জানাই। ব্যাংকের বেশি চাপ তৈরি হলে আমাদের ব্যবসা গুটিয়ে নিতে হবে। আমরা আটকে গেলে প্রত্যেকটা আইটেমে প্রভাব পড়বে।’
বিকেএমইএ’র সহ-সভাপতি মোহাম্মদ হাতেম বলেন, ‘নীটখাতে সুতার দাম বেড়েছে, কটনের প্রাইস বেড়েছে। এখন আমাদের দুইভাবে ভাবতে হচ্ছে। ব্যবসা কিভাবে চালাবো, শ্রমিকদের কিভাবে টাকা দেব। সামনের অবস্থাটা কল্পনা করতে পারছি না।আমাদের দেশে আরও ব্যবসা আছে। এমনভাবে কিছু চাইতে হবে, যাতে চাওয়াটা সরকারের কাছে সহনীয় হয়।’
তুহিন নামে প্রবীণ এক ব্যবসায়ী বলেন, ‘প্রণোদনার কিস্তি ১৮ কিস্তির পরিবর্তে ৬০ কিস্তি করার দাবি জানাই। সুতার বিষয়ে একটা নিয়মনীতি হোক৷ এখন অর্ডার দিচ্ছি ৭ দিন পরে বলবে দাম বাড়াতে হবে৷ এটা ব্যবসার নীতি না। ১০০ টাকা প্রণোদনা নিচ্ছি, ১০ টাকা ট্যাক্স কেটে নিচ্ছে। ছোট কারখানা বন্ড লাইসেন্স পায় না, নানান সমস্যায় পড়তে হয়। কন্টেইনার ভাড়া সাড়ে ৫ হাজার ডলার। প্রতিদিন ১০-১৫ সেন্ট করে সুতার দাম বাড়ায়। ২-৩ মাস পর্যন্ত সুতা মজুদ থাকে। অনেক স্পেয়ার্স পার্টসে ১০০ ভাগ শুল্ক দিতে হয়।’
তবে তার সঙ্গে দ্বিমত পোষণ করে টেক্সটাইল খাতের ব্যবসায়ী নেতা, বিটিএমইএ’র সভাপতি মোহাম্মদ আলী খোকন বলেন, ‘এবার সারা পৃথিবীতে নিটওয়্যার ব্যবহার বেড়েছে। ৫ শতাংশ উৎপাদন চাহিদার সঙ্গে সামঞ্জস্য হয়নি৷ ৮ লাখ টন সুতা বাড়তি ছিল কোভিড-১৯ সময়ে। আপনারা নেননি। আমরা একে অপরের সহায়ক। ৯০০ মিলিয়ন ডলারের তুলা বাইব্যাক করছে। এ কারণে সুতার দাম কিছুটা বেড়েছে তবে অন্য দেশের তুলনায় আমাদের দেশে সহনীয়। তাই সুতার দাম বাড়া নিয়ে আপনারা আমাদের অভিযোগ করবেন না। টেক্সটাইল মিলের মালিকরা প্রণোদনার টাকা পায়নি। ব্যাক টু ব্যাক এলসি হবে ইনসেন্টিভ এর মূল উপাদান।’
এ সময় বিকেএমইএ, বিজিএমইএ, বিটিএমইএসহ পোশাকখাত সংশ্লিষ্টরা উপস্থিত ছিলেন।