আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নগদ লভ্যাংশের হার ১৫ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখার বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের জারি করা নতুন নীতিমালা প্রত্যাহার করার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকাস অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবি) ও পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদ। পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীরা লভ্যাংশ ঘোষণায় এই বিধি-নিষেধ প্রত্যাহার চায়।
এসব দাবির প্রেক্ষিতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশ ঘোষণার সীমা বেঁধে দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংক যে নীতিমালা জারি করেছে, তা পাল্টাতে পারে-এমন গুঞ্জন শুরু চলছে পুঁজিবাজারে। এরফলে আজ মঙ্গলবার (২ মার্চ) পুঁজিবাজারের বড় মূলধনী ব্যাংক ও আর্থিক খাতের শেয়ারে বড় উত্থান হয়েছে। আজ ব্যাংক খাতের ৩০টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ২৪টির দর বেড়েছে এবং আর্থিক খাতের ২৩টি কোম্পানির মধ্যে ২০টির দর বেড়েছে। এই দুখাতের কয়েকটি কোম্পানির শেয়ার দরে বড় লাফ দেখা গেছে।
এদিকে, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশের মৌসুমে বাংলাদেশ ব্যাংকের দুটি নির্দেশনা এই খাতের শেয়ারে মন্দাভাব দেখা দেয়। খাত দুটির বিনিয়োগকারীদেরও হতাশ করে। গত ৭ ফেব্রুয়ারি কেন্দ্রীয় ব্যাংক জানায়, ব্যাংক যতই মুনাফা করুক শেয়ার প্রতি দেড় টাকা নগদ আর প্রতি ১০০ শেয়ারের বিপরীতে ১৫টি বোনাস শেয়ার দিতে পারবে। তাও এটা সব ব্যাংক নয়।
ব্যাংকের আর্থিক অবস্থা বিবেচনা করে সর্বনিম্ন ৫ শতাংশ (১০০ শেয়ারে ৫টি) বোনাস দেয়া যাবে। কোনো কোনো ব্যাংক এর সঙ্গে ৫ শতাংশ নগদ (শেয়ার প্রতি ৫০ পয়সা) কোনো ব্যাংক ৬ শতাংশ বোনাস ও শেয়ার প্রতি ৬০ পয়সা নগদ, কোনো কোনো ব্যাংক শেয়ার প্রতি ৭৫ পয়সা নগদ ও ৭.৫ শতাংশ বোনাস, কোনো কোনো ব্যাংক শেয়ার প্রতি এক টাকা নগদ ও ১০০ শেয়ারে ১০টি বোনাস শেয়ার দিতে পারবে।
এই নির্দেশনা আসার পর এই খাতের শেয়ার দরে নেতিবাচক প্রবণতার মধ্যে সম্প্রতি নির্দেশনা আসে, আর্থিক প্রতিষ্ঠান সর্বোচ্চ শেয়ার প্রতি দেড় টাকা নগদে লভ্যাংশ হিসেবে দিতে পারবে। তবে যাদের খেলাপি ঋণ ১০ শতাংশের বেশি, তারা কোনো লভ্যাংশই দিতে পারবে না। এই আদেশ আসার পর দুই কার্যদিবসে পড়েছে এই খাতের শেয়ারের মূল্য। বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও মার্চেন্ট ব্যাংকাস অ্যাসোসিয়েশন বিএমবিএসহ নানা পর্যায় থেকে কেন্দ্রীয় ব্যাংককে অনুরোধ করা হয়েছে এই নীতিমালা পাল্টাতে। বলা হয়েছে, তাদের আদেশের কারণে চাঙ্গা পুঁজিবাজারে পতন হচ্ছে।
তবে মঙ্গলবার বিকাল ৪টার দিকে বাংলাদেশ পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারী ঐক্য পরিষদের সভপতি এ.কে.এম মিজান-উর রশীদ চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক কাজী আব্দুর রাজ্জাক স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে এই দাবি জানানো হয়।
বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে পাঠানো চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, ‘পুঁজিবাজারে দীর্ঘদিন ধরে অস্থিতিশীল পরিবেশ বিরাজ করছে। পুঁজিবাজারের উন্নয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর সদয় দৃষ্টি দিয়েছেন। সম্প্রতি দায়িত্ব নেওয়ার পর পুঁজিবাজারে উন্নয়নে চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলামের নেতৃত্বাধীন কমিশন বেশকিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছেন, যা পুঁজিবাজার সংশ্লিষ্ট সবার কাছে প্রশংসনীয়।
পুঁজিবাজার উন্নয়ন ও অগ্রগতিতে আপনার তথা বাংলাদেশ ব্যাংকের সহযোগিতা বিনিয়োগকারীরা কৃতজ্ঞতাচিত্তে স্মরণ করে। এমতাবস্থায় বাংলাদেশ ব্যাংক যে কোন সিদ্ধান্ত নেওয়ার পূর্বে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রণ সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করার অনুরোধ করছি।’
এ বিষয় বিএমবিএ সভাপতি ছায়েদুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি দেয়া হয়েছে। পুঁজিবাজারে যেসব আর্থিক প্রতিষ্ঠান রয়েছে তাদের লভ্যাংশ দেয়ার ক্ষেত্রে যেন কোনো বাধা না থাকে সে জন্যই চিঠি দেয়া হয়েছে।’ এই বিষয়টি জানাজানি হওয়ার পর দুই খাতেই বিনিয়োগকারীরা ফিরতে শুরু করেছেন। গত কয়েকদিনে হারানো মূল্য ফিরে পেতে শুরু করেছে শেয়ারগুলো। এই দুই খাতের পাশাপাশি বেড়েছে বেশিরভাগ শেয়ারের দর। ফলত সূচকে যোগ হয়েছে ৮১ পয়েন্ট।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অর্থনীতিবিদ আবু আহমেদ বলেন, কোম্পানির সামর্থ্য আছে বলেই লভ্যাংশ দিয়েছে। কোম্পানি ঝুঁকি বিবেচনা করেই লভ্যাংশ প্রদান করে। বাংলাদেশ ব্যাংক আর্থিক প্রতিষ্ঠানের ঝুঁকি বিবেচনা করে প্রভিশন সংরক্ষণের নির্দেশনা দিতে পারে। খেলাপি ঋণ কমানোর পরামর্শ দিতে পারে। কিন্তু লভ্যাংশ বেঁধে দিতে পারে না। আমার মনে হয় পুঁজিবাজার নিয়ে তাদের (বাংলাদেশ ব্যাংক) ভাবনার জায়গা খুবই কম। তা না হলে এমন সিদ্ধান্ত আসত না।’
ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে লভ্যাংশের সীমা বেঁধে দিয়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংক যে আদেশ দিয়েছে, তাকে ‘বাজে সিদ্ধান্ত’ বলে মনে করছেন তিনি। এই সিদ্ধান্ত পুঁজিবাজারের জন্য ভালো হবে না। ভালো কোম্পানিগুলোও প্রত্যাশিত লভ্যাংশ দিতে পারবে না। এতে বিনিয়োগকারীরা ক্ষতির মুখে পড়বেন। আশা করি বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ বিবেচনা করেন বাংলাদেশ ব্যাংক এই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করবে।
তবে এই বিষয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের জারিকৃত নীতিমালাগুলো পরিবর্তনের কোন আভাস মঙ্গলবার শেষবেলা পর্যন্ত পাওয়া যায়নি।