বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএমবিএ) আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নগদ লভ্যাংশের হার ১৫ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখে লভ্যাংশ ঘোষণার নতুন নীতিমালা পুনর্বিবেচনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রতি আহ্বান জানিয়েছে।
সোমবার (১ ফেব্রুয়ারি) সংগঠনটির পক্ষ থেকে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বরাবর এক চিঠিতে এ তথ্য জানানো হয়।
ওই চিঠিতে বলা হয়, দীর্ঘদিন ধরেই দেশের পুঁজিবাজার অত্যন্ত নাজুক অবস্থায় আছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য মাননীয় প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সব স্তরেই প্রচেষ্টা অব্যাহত আছে। নতুন কমিশন যোগদানের পর বেশ কিছু উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। এতে পুঁজিবাজারের কিছুটা উন্নতি লক্ষণীয়। এ উন্নতিতে বাংলাদেশ ব্যাংকের সহযোগিতাও আমরা কৃতজ্ঞতার সঙ্গে স্বীকার করছি। তবে লভ্যাংশ ঘোষণার নতুন নীতিমালা আসার পর থেকে আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের ওপরে চরম নেতিবাচক প্রভাব তৈরি হয়েছে, যা পুরো শেয়ারবাজারের জন্যই নেতিবাচক হচ্ছে। এখানে উল্লেখ্য, একটি আর্থিক প্রতিষ্ঠান ৭ টাকা আয় করেছে, সে ৩ দশমিক ৫০ টাকা লভ্যাংশ দিতে চায়, তা পুঁজিবাজারের জন্য ইতিবাচক। আমরা মনে করি, যদি কারও আয় থাকে, তার লভ্যাংশ দেওয়ার সুযোগ থাকা দরকার। এ রকম সাধারণ ঘোষণা দিয়ে লভ্যাংশ টেনে ধরলে বিনিয়োগকারী হতাশ হবে এবং পুঁজিবাজার ক্ষতিগ্রস্ত হবে।
প্রজ্ঞাপনটি পুনর্বিবেচনার দাবি জানিয়ে বিএমবিএ’র পক্ষ থেকে আরও বলা হয়, যেসব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের সক্ষমতা আছে তাদের লভ্যাংশ দেওয়ার সুযোগ করে দেওয়া হোক। কোভিড–পরবর্তী বিনিয়োগকারীদের টিকে থাকার স্বার্থে বিষয়টি সহানুভূতির সঙ্গে বিবেচনার অনুরোধ জানাচ্ছি।
এদিকে ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) আজ মঙ্গলবার সূচকের উত্থানের মধ্য দিয়ে লেনদেন হচ্ছে। দুপুর সোয়া ১২টা নাগাদ প্রধান সূচক ডিএসইএক্স বেড়েছে ৪৪ পয়েন্ট। লেনদেন হওয়া বেশির ভাগ কোম্পানির শেয়ারের দর বাড়তে দেখা যাচ্ছে। এ সময় পর্যন্ত ২১টি আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে বেড়েছে ১৭টির দর, কমেছে ২টির দর, অপরিবর্তিত আছে ২টির দর।
এর আগে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি দেশের সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের নগদ লভ্যাংশের হার ১৫ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রেখে লভ্যাংশ ঘোষণায় নতুন নীতিমালাসংক্রান্ত একটি নির্দেশনা দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। করোনা মহামারি পরিস্থিতি বিবেচনা করে ব্যয় কমানোর পাশাপাশি মূলধনসাশ্রয়ী ও তারল্য সহায়ক লভ্যাংশ ঘোষণা করা হয়েছে বলে জানায় ব্যাংকটি।
বাংলাদেশ ব্যাংকের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, যেসব আর্থিক প্রতিষ্ঠান সংরক্ষিত সম্পদ না রেখে বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে ঘাটতি সমন্বয়ে ডেফারেল সুবিধা ভোগ করছে, সেসব আর্থিক প্রতিষ্ঠান সম্পূর্ণ সম্পদ সংরক্ষণের পূর্বে কোনো ধরনের নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করবে না। তবে বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন সাপেক্ষে সর্বোচ্চ ৫ শতাংশ স্টক লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারবে।
প্রজ্ঞাপনে আরও বলা হয়, যেসব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের শ্রেণীকৃত ঋণের হার ১০ শতাংশের বেশি রয়েছে, সেসব আর্থিক প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ ব্যাংকের পূর্বানুমোদন ব্যতীত কোনো ধরনের লভ্যাংশ ঘোষণা করবে না। এ ছাড়া যেসব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের মূলধন পর্যাপ্ততা অনুপাত (সিএআর) ১০ শতাংশের কম এবং শ্রেণীকৃত ঋণের হার ১০ শতাংশের বেশি রয়েছে, সেসব আর্থিক প্রতিষ্ঠান কোনো ধরনের লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারবে না। সামগ্রিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আর্থিক প্রতিষ্ঠানসমূহের নগদ লভ্যাংশের হার ১৫ শতাংশের মধ্যে সীমাবদ্ধ রাখতে হবে বলেও প্রজ্ঞাপনে উল্লেখ করা হয়। প্রজ্ঞাপনে এ নির্দেশনা অবিলম্বে কার্যকর করতে বলা হয়েছ এবং পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত চলমান রাখতে বলা হয়েছে। আর্থিক প্রতিষ্ঠান আইন, ১৯৯৩–এর ১৮ (ছ) ধারায় প্রদত্ত ক্ষমতাবলে এ নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।