পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্তির আগে কাট্টলী টেক্সটাইল লিমিটেড দুই বছর চট্টগ্রামের এশিয়ান গ্রুপের সাবকন্ট্রাক্টের কিছু কাজ করত। সেই সুবাদে এশিয়ান গ্রুপ তাদের ওয়েবসাইটে উৎপাদন ইউনিট হিসেবে কাট্টলী টেক্সটাইলের নাম উল্লেখ করে। কিন্তু সাবকন্ট্রাক্টের কাজ ছেড়ে দেওয়ার পরও ওই গ্রুপটির ওয়েবসাইটে কাট্টলী টেক্সটাইলের নাম থেকে যাওয়ায় একটি চক্র কাট্টলী টেক্সটাইলের মালিকানা নিয়ে বিনিয়োগকারীর মধ্যে বিভ্রান্তি ছড়ানোর চেষ্টা করে।
জানা গেছে, কাট্টলী টেক্সটাইল নিয়মিত উৎপাদন কার্যক্রম পরিচালনা করছে। পোশাক কারখানা মালিকদের সংগঠন বাংলাদেশ গার্মেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) তালিকায় দেখা যায়, চট্টগ্রামের লাকি গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমদাদুল হক চৌধুরীর মালিকানাধীন ৩৯০০ নম্বর সদস্য হিসেবে তালিকাভুক্ত আছে কাট্টলী টেক্সটাইল।
এদিকে বাংলাদেশ শ্রম ও শিল্পকারখানা পরিদর্শন অধিদফতরের পরিদর্শন করা প্রতিবেদনে দেখা যায়, আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের জোট অ্যাকর্ড ও অ্যালায়েন্সের অনুমোদনকৃত কাট্টলি টেক্সটাইলের হালনাগাদ নিবন্ধন আছে। প্রতিষ্ঠানটির নিবন্ধন নম্বর ৩৩২৭ ও ঠিকানা চট্টগ্রামের উত্তর কাট্টলির চৌধুরী বাড়ি। এছাড়া রেজিস্ট্রার অব জয়েন্ট স্টক কোম্পানিজ অ্যান্ড ফার্মস (আরজেএসসি) নিবন্ধন, টিন, ভ্যাট, আমদানি নিবন্ধন, রফতানি নিবন্ধন, ট্রেড লাইন্সেস, পরিবেশ অধিদফতরের সনদ, ফায়ার লাইসেন্স, বিনিয়োগ নিবন্ধন, বয়লার, বন্ড, বিইআরসি লাইসেন্স, রফতানি উন্নয়ন ব্যুরো নিবন্ধনসহ আরও সব ধরনের নিবন্ধনে এমদাদুল হক চৌধুরীসহ পরিবারের মালিকানা উল্লেখ রয়েছে।
সরেজমিনে কোম্পানিটি পরিদর্শন করে দেখা যায়, চট্টগ্রামের উত্তর কাট্টলীর কর্নেল জোনেস সড়কের চৌধুরী বাড়ির প্রবেশমুখে কাট্টলি টেক্সটাইল লিমিটেডের অবস্থান। কারখানায় প্রবেশ করে জানা যায়, চৌধুরীবাড়ির বাসিন্দা এমদাদুল হক চৌধুরী কারখানাটির মালিক। তিনি প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। কারখানার জমির পরিমাণ প্রায় ২৪ কাঠা। ছয় তলাবিশিষ্ট ১০ হাজার ৫৬৬ বর্গফুটের ভবনে এক হাজার ২৬০ শ্রমিক কাজ করছে। তারা বিদেশি ক্রেতা প্রতিষ্ঠান ওয়ালমাট, কে-মার্ট, টার্গেট ইত্যাদি প্রতিষ্ঠানের জন্য কাজ করছে।
কাট্টলী টেক্সটাইলের পাশে রয়েছে ওয়্যারহাউস, চাইল্ড কেয়ার রুম, সাব স্টেশন রুম, ক্যান্টিন, বয়লার রুম এবং পেছনে পুকুর। আর পুকুরটি জরুরি অগ্নি নির্বাপনীয় ব্যবস্থাপনার সঙ্গে সংযুক্ত। বর্তমানে অবস্থিত ওয়্যারহাউসের জায়গায় পুঁজিবাজার থেকে আহরিত টাকায় নতুন আরেকটি ছয়তলা কারখানা স্থাপন করা হবে, যার জন্য প্রাথমিক কাজ শেষ করেছে প্রতিষ্ঠান কর্তৃপক্ষ। এতে উৎপাদন সক্ষমতা হবে দ্বিগুণেরও বেশি। পাশাপাশি কারখানার কাছাকাছি শ্রমিকদের থাকার জন্য নির্মাণ করা হচ্ছে পাঁচতলা ডরমিটরি।
আরজেএসসি চট্টগ্রাম কার্যালয়ের সহকারী নিবন্ধক হারুণ-উর-রশিদ বলেন, কাট্টলী টেক্সটাইল লিমিটেড আমাদের নিবন্ধিত একটি প্রতিষ্ঠান। নিবন্ধন নম্বর সি-নং ৪৩৬৪। প্রতিষ্ঠানটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমদাদুল হক চৌধুরীসহ মোট নয়জন প্রতিষ্ঠানটির মালিকানায় আছেন।
কাট্টলি টেক্সটাইল লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এমদাদুল হক চৌধুরী এ বিষয়ে বলেন, ‘পুঁজিবাজারে আসার আগে ২০১৫ ও ২০১৬ সালের দিকে এশিয়ান গ্রুপ আমাদের সাবকন্ট্রাক্টে কাজ অর্থাৎ উৎপাদন সক্ষমতা ব্যবহার করত। এটা তো নিয়মের মধ্যে সবাই করে। এটি অনুমোদিত। একটি চক্র আমার প্রতিষ্ঠানের মালিকানা নিয়ে গুজব ছড়িয়ে যাচ্ছে। ২০০২ সালে আমি ২৪ কাঠা জয়গার ওপর এ প্রতিষ্ঠান স্থাপন করি। প্রায় ২০ ধরনের মালিকানাসম্বলিত দলিল আছে। সব হালনাগাদ করা আছে। আমাদের সাফল্যে ঈর্ষান্বিত হয়ে কেউ কেউ এসব অপপ্রচার চালাচ্ছে।
বর্তমানে সাবকন্ট্রাক্টে কাজ না দিলেও এশিয়ান গ্রুপের ওয়েবসাইটে কেন গার্মেন্ট ইউনিট হিসেবে কাট্টলি টেক্সটাইল লিমিটেডের নাম রয়েছে, সে বিষয়ে এশিয়ান গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও বিজিএমইএয়ের সহসভাপতি আবদুস সালাম কিছুই বলতে রাজি হননি। তবে তিনি স্বীকার করেছেন, তিনি কয়েক বছর আগে কাট্টলি টেক্সটাইলকে দিয়ে সাবকন্ট্রাক্টে কাজ করিয়েছেন। এখন করেন না।
জানা যায়, কাট্টলি টেক্সটাইল লিমিটেড লাকি অর্গানিকস লিমিটেড নামে একটি প্রতিষ্ঠানে তিন কোটি ২০ লাখ টাকা বিনিয়োগ করবে। এর মাধ্যমে কোম্পানিটি লাকি অর্গানিকসের ৪০ শতাংশ শেয়ারের মালিক হবে। সম্প্রতি কোম্পানির বোর্ড সভায় বিনিয়োগের এ সিদ্ধান্তে অনুমোদন দেয়া হয়। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বৃহস্পতিবার কাট্টলি শেয়ারের সর্বশেষ দর ছিল ১১ টাকা ৯০ পয়সা। এদিকে ৩০ জুন সমাপ্ত ২০১৯ হিসাব বছর শেষে কোম্পানিটি ১২ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করে। গত এক বছরে শেয়ারটির সর্বনি¤œ ও সর্বোচ্চ দর ছিল যথাক্রমে ১০ টাকা ৫০ পয়সা ও ৩৪ টাকা ৬০ পয়সা।
উল্লেখ্য, গত বছরের ২৬ জুন কাট্টলি টেক্সটাইলকে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) মাধ্যমে পুঁজিবাজার থেকে ৩৪ কোটি টাকার মূলধন উত্তোলনের অনুমোদন দিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। গত বছরের ১২ নভেম্বর ডিএসইতে শেয়ারটির লেনদেন শুরু হয়। কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ১৫০ কোটি টাকা। পরিশোধিত মূলধন ৯৭ কোটি ৯০ লাখ টাকা। রিজার্ভে রয়েছে ৫৯ কোটি ৪৫ লাখ টাকা। মোট শেয়ারের ৩০ দশমিক ৩২ শতাংশ উদ্যোক্তা পরিচালক, ১০ শতাংশ প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারী, শূন্য দশমিক শূন্য ৬ শতাংশ বিদেশি বিনিয়োগকারী এবং বাকি ৫৯ দশমিক ৬২ শতাংশ সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে।
শেয়ারবার্তা / আনিস