পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হয়েই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠছে নতুন কোম্পানির শেয়ার। একশ্রেণির বিনিয়োগকারী কোনো বাছবিচার ছাড়াই শুরুতে অতিমূল্যায়িত করে ফেলছে এসব শেয়ার। যে কারণে দ্রæতই শেয়ারগুলোর মূল্য আয় অনুপাত বা পিই-রেশিও বেড়ে যাচ্ছে, যা পুঁজিবাজার এবং বিনিয়োগকারী উভয়ের জন্য ক্ষতিকারক বলে মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, বর্তমানে তালিকাভুক্ত নতুন কোম্পানি রবি আজিয়াটার শেয়ারের মূল্য আয় অনুপাত ১৩৩ দশমিক ৯৮। একইভাবে বাজারে নতুন আসা কোম্পানি এনার্জিপ্যাক পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেডের শেয়ারের মূল্য আয় অনুপাত প্রায় ২৭। যদিও এ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের মূল্য আয় অনুপাত ৪০-এর উপরে ছিল। কিন্তু তালিকাভুক্তির কিছুদিনের মধ্যে উল্লেখ্যযোগ্যহারে শেয়ারদর পতন হওয়ার কারণ পিই-রেশিও কমে গেছে।
সম্প্রতি এই দুই কোম্পানি পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত হওয়ার পরপরই অতিমূল্যায়িত হয়ে যায়। আর্থিক অবস্থার বিবেচনায় দুটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদরই অস্বাভাবিকহারে বৃদ্ধি পায়। না বুঝে দুটি কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগের প্রতিযোগিতায় নামেন বিনিয়োগকারীরা। যে কারণে অল্প সময়ের মধ্যে রবির শেয়ার ৭৭ টাকা ১০ পয়সা এবং এনার্জিপ্যাকের শেয়ার ১০১ টাকার ওপরে চলে যায়। পরবর্তীতে আবার টানা দরপতন শুরু হয় এ দুটি কোম্পানির শেয়ারের। সর্বশেষ রবির শেয়ার ৩৮ টাকা ২০ পয়সা এবং এনার্জি পাওয়ার জেনারেশন লিমিটেডের শেয়ার ৪৬ টাকা ১০ পয়সায় লেনদেন হয়।
বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, কোম্পানি নতুন হোক আর পুরোনো হোক এখানে বিনিয়োগের আগে প্রতিষ্ঠান সম্পর্কে ভালো করে খোঁজ নিতে হবে। কোম্পানির আর্থিক অবস্থা ভালো না হলে সেই কোম্পানিতে বিনিয়োগ করা ঠিক না। বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানের পিই-রেশিওর দিকে নজর রাখা দরকার। এটা যত কম হবে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের শেয়ারে ঝুঁকি তত কম হবে।
একই জানতে চাইলে বিএসইসির একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, বাজারে নতুন আসা এ দুটি প্রতিষ্ঠানের শেয়ারই বাজারে আসার পর অতিমূল্যায়িত হয়ে যায়। এটা করেছেন বিনিয়োগকারীরা। সে কারণে এখন তাদের মাশুল গুনতে হচ্ছে।
তবে বিষয়টিকে ভিন্ন মত পোষণ করেন কেউ কেউ। তারা মনে করেন নতুন কোম্পানি বাজারে এলে বিনিয়োগকারীদের এই শেয়ারের প্রতি আগ্রহ বেশি থাকে। কারণ তাদের ধারণা থাকে এসব কোম্পানি থেকে ভালো রিটার্ন পাওয়া যাবে। সেই আশাতে শেয়ারদর বাড়তে থাকে। কারণ আগে রিটার্ন না দেয়ায় নতুন কোনো প্রতিষ্ঠান শেয়ারহোল্ডারদের কতটা তুষ্ট করতে পারবে তা বোঝার উপায় থাকে না।
নিয়মানুযায়ী, তালিকাভুক্ত কোম্পানির শেয়ারের বিপরীতে প্রথম ৩০ দিন কোনো ঋণসুবিধা থাকে না। একই সঙ্গে তালিকাভুক্ত কোনো কোম্পানির শ্রেণি পরিবর্তন হলে ওই কোম্পানির শেয়ারের বিপরীতেও ৩০ কার্যদিবেস কোনো ঋণসুবিধা মিলবে না।
২০০৯ সালের ১ অক্টোবর নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরুর প্রথম ৩০ কার্যদিবস ও ক্যাটেগরি পরিবর্তনের ক্ষেত্রে প্রথম ৩০ কার্যদিবস কোম্পানির শেয়ার ক্রয়ে মার্জিন ঋণসুবিধা বন্ধ করা হয়।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, স্টক এক্সচেঞ্জে নতুন তালিকাভুক্ত কোনো সিকিউরিটি ক্রয়ের জন্য তালিকাভুক্তির পর প্রথম ট্রেডিং দিবস থেকে ৩০তম ট্রেডিং দিবস পর্যন্ত কোনো মার্জিন ঋণ প্রদান করা যাবে না। পাশাপাশি কোনো কোম্পানির শেয়ারের ক্যাটেগরি পরিবর্তিত হলে নতুন ক্যাটেগরিতে লেনদেনের ক্ষেত্রেও এই নিয়ম প্রযোজ্য হবে।