দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) জানিয়েছে, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের (আইডিআরএ) চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে ৫০ লাখ টাকা ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ ‘সুস্পষ্ট’ হলে তদন্ত করা হবে।
দুদক সচিব মু. আনোয়ার হোসেন হাওলাদার সোমবার এ বিষয়ে সাংবাদিকদের বলেন, ‘দুদক আইনে প্রত্যাহারের সুযোগ আছে কি না, তা খতিয়ে দেখতে হবে। তবে অভিযোগ যদি সুস্পষ্ট থাকে, তাহলে তদন্ত হবে। এক্ষেত্রে প্রত্যাহারের আবেদন তদন্ত কর্মকর্তার কাছে যাবে। তদন্তকারী কর্মকর্তা খতিয়ে দেখবেন কেন অভিযোগ করেছিলেন, আবার কেনই বা তা প্রত্যাহার চাচ্ছেন।’
গত ডিসেম্বর ডেল্টা লাইফ ইন্সুরেন্স থেকে এই ঘুষ চাওয়া হয়েছিল দাবি করে দুদকে একটি লিখিত অভিযোগ করেছিলেন ডেল্টা লাইফের যুগ্ম নির্বাহী ভাইস চেয়ারম্যান পল্লব ভৌমিক। তবে গত সপ্তাহে সেই অভিযোগ তিনি প্রত্যাহারের আবেদন করেন।
উল্লেখ্য, গত ১৭ ফেব্রুয়ারি ডেল্টা লাইফের প্রশাসক সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লা যুগ্ম নির্বাহী ভাইস চেয়ারম্যান পল্লব ভৌমিককে চিঠি দিয়ে আইডিআরএ’র চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে করা অভিযোগ দুদক থেকে প্রত্যাহার করতে বলেন।
এর আগে গত ৭ ফেব্রুয়ারি সংবাদ সম্মেলন করে আইডিআরএ’র চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেনের বিরুদ্ধে ৫০ লাখ টাকা ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ করেছিল ডেল্টা লাইফ।
ডেল্টা লাইফের প্রধান কার্যালয়ে করা ওই সম্মেলনে কোম্পানির নির্বাহী পরিচালক চৌধুরী কামরুল আহসান বলেছিলেন, বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এম মোশাররফ হোসেন তাদের কাছে প্রথমে ২ কোটি, পরে ১ কোটি এবং শেষে ৫০ লাখ টাকা ‘উৎকোচ’ দাবি করেছেন।
তিনি বলেছিলেন, ‘বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের বর্তমান চেয়ারম্যান এম মোশাররফ হোসেন উদ্দেশ্যমূলকভাবে ডেল্টা লাইফের ২০১৯ সালের একচ্যুয়ারিয়াল ভ্যালুয়েশন এর বেসিস অনুমোদন না দিয়ে, মুখ্য নির্বাহী কর্মকর্তার নিয়োগ নবায়নে অনুমোদন না দিয়ে এবং কোম্পানিকে নানা অজুহাতে অন্যায়ভাবে জরিমানা আরোপের হুমকি দিয়ে চলেছেন। এমনকি তিনি কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ সাসপেন্ড করে প্রশাসক বসানোর হুমকি দিচ্ছেন।’
ওই সংবাদ সম্মেলনে একটি অডিও রেকর্ডও বাজিয়ে শোনানো হয়। অডিও রেকর্ডে দুই ব্যক্তিকে কথা বলেতে শোনা যায়। তাদের মধ্যে একজন ডেল্টা লাইফের কর্মকর্তা আব্দুল আউয়াল এবং অন্যজন বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এম মোশাররফ হোসেন বলে সংবাদ সম্মেলনে দাবি করা হয়।
ঘুষ চাওয়ার অডিও প্রকাশ পাওয়ার পর জানুয়ারিতে মানহানির অভিযোগ এনে ডেল্টা লাইফের তৎকালীন মূখ্য নির্বাহী কর্মকর্তা আদিবা রহমানসহ প্রতিষ্ঠানটির ছয়জনের বিরুদ্ধে আদালতে একটি মামলা করেন আইডিআএ চেয়ারম্যান। এ মামলায় পল্লব ভৌমিককেও বিবাদী করা হয়।
এরপর ১১ ফেব্রুয়ারি ডেল্টা লাইফের পরিচালনা পর্ষদ ভেঙে দিয়ে সেখানে সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লাকে প্রশাসক নিয়োগ দেয় আইডিআরএ। সুলতান আইডিআরএ’র সাবেক সদস্য।
এর আগে ৯ ডিসেম্বর আইডিআরএ’র চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে দুর্নীতি দমন কমিশনে লিখিতভাবে ঘুষ চাওয়ার অভিযোগ করেন ডেল্টা লাইফের কর্মকর্তা পল্লব ভৌমিক।