দেশের ৫৭ হাজার ৫৩৫ কোম্পানি সরকারকে ট্যাক্স দেয় না বলে শনাক্ত করেছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনববিআর)। নিয়মিত ব্যবসা পরিচালনা করছে অথচ কর শনাক্তকারী নাম্বারও গ্রহণ করেনি এসব কোম্পানি।
রাষ্ট্রীয় কর আহরণকারী সংস্থাটি ২০২০ সালের আগস্ট থেকে চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত মাঠ পর্যায়ে অভিযান চালিয়ে এসব প্রতিষ্ঠান খুঁজে পেয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানকে এখন নতুন করে ইলেকট্রিক ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার (ই-টিএন) প্রদানসহ কর আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ নিয়েছে এনবিআর।
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সদস্য (কর) আলমগীর হোসেন সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, করের বাইরে থাকা এসব কোম্পানিকে নতুন টিআইএন সার্টিফিকেট দেওয়ার মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে কমপ্লায়েন্সের মধ্যে নিয়ে আসা হয়েছে। এনবিআর শাস্তির বিষয় না ভেবে নতুন করে কর আদায়কে প্রাধান্য দিচ্ছে।
‘দীর্ঘদিন কর না দেওয়া এসব কোম্পানির একেকটির একেক ধরনের সমস্যা। কোনো কোম্পানি হয়তো কার্যক্রম শুরুর পর আর সেভাবে ব্যবসা পরিচালনা করেনি। অনেকে হয়তো ব্যবসা করলেও কর দেওয়ার মতো আয় করতে পারেনি। তাই কোম্পানির অবস্থান বুঝে ব্যবস্থা নেবে এনবিআর,’ যোগ করেন আলমগীর হোসেন।
কর না দেওয়া কোম্পানি খুঁজে বের করতে ২০২০ সালের আগস্টে একটি টাস্কফোর্স গঠন করে এনবিআর। সংস্থাটির সেন্ট্রাল ইন্টেলিজেন্সের জয়েন্ট ডিরেক্টর শাব্বির আহমদের নেতৃত্বে ৭ সদস্যকে দায়িত্ব দেওয়া হয়। কমিটি মাঠ পর্যায়ের ৩০টি জোনের অধীনে ১৪৬টি কোম্পানি সার্কেলের মাধ্যমে ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এ কোম্পানিগুলোকে খুঁজে পায়।
এনবিআরের টাস্কফোর্স কমিটি জানিয়েছে, ২০২০ সালের আগস্ট পর্যন্ত টিআইএনধারী কোম্পানির সংখ্যা ছিল ৭৮ হাজার। এরমধ্যে মাত্র ২৮ হাজার ২০০ প্রতিষ্ঠান ২০১৯ সালে আয়কর রিটার্ন দিয়েছিল। মাঠ পর্যায়ে অভিযানের পর চলতি বছরের ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত টিআইএনধারী কোম্পানির সংখ্যা দাড়িয়েছে ১ লাখ ৩৫ হাজারের বেশি। অন্যদিকে আয়কর রিটার্ন বেড়েছে ৩৫ শতাংশ।
জানা গেছে, বর্তমানে যৌথ মূলধন কোম্পানি ও ফার্মগুলোর পরিদপ্তরে (আরজেএসসি) নিবন্ধিত কোম্পানির সংখ্যা ১ লাখ ৭৬ হাজার। এরমধ্যে প্রতি বছর ৩৫-৩৬ হাজার প্রতিষ্ঠান আয়কর রিটার্ন দাখিল করছে। এসব প্রতিষ্ঠান থেকে বছরে ২০ হাজার কোটি টাকার বেশি ট্যাক্স পায় এনবিআর।
এনবিআর সূত্র জানিয়েছে, কর না দেওয়া কোম্পানি খুঁজে বের করার পাশাপাশি জাল অডিট রিপোর্ট খুজে বের করা, রিটার্ন দাখিল এবং অথেটিক অডিট রিপোর্ট দাখিল নিশ্চিত করার ক্ষেত্রে কোনো সমস্যা থাকলে তা চিহ্নিত করেছে টাস্কফোর্স কমিটি।
এনবিআরের টাস্কফোর্স কমিটির একজন সদস্য বলেন, এখন পর্যন্ত দেশে নিবন্ধিত ৭০ শতাংশ প্রতিষ্ঠানকে নিবন্ধন দেওয়া হয়েছে। এপ্রিল মাসের মধ্যে এটি শতভাগে উন্নীত করা হবে। এ লক্ষ্যে মাঠ পর্যায়ে আরও বেশি অভিযান পরিচালনা করা হচ্ছে।
চলতি অর্থবছর আয়কর খাতে দেওয়া সরকারের রাজস্ব লক্ষ্য পূরণ করতে এ উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন তিনি।
চলতি অর্থবছর এনবিআরকে ৩.৩০ লাখ টাকার রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে এনবিআরের। এরমধ্যে আয়কর খাত থেকে আহরণ করতে হবে ১.০৫ লাখ কোটি টাকা। জুলাই-ডিসেম্বর পর্যন্ত অর্থবছরের প্রথমার্ধে এনবিআরের আহরণ ৪২.১০ কোটি টাকা। অর্থাৎ বাকি ছয় মাসে আহরণের লক্ষ্যমাত্রা প্রায় ৬০ হাজার কোটি টাকা।
অতিরিক্ত লক্ষ্যপূরণে এনবিআরের এ উদ্যোগ রাজস্ব ব্যবস্থার জন্য ভালো বলে মনে করছেন অর্থনীতিবিদরা।
পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, ‘একই করদাতার ওপর চাপ না দিয়ে রাজস্ব ফাঁকি বন্ধ ও নতুন করদাতা বৃদ্ধির কথা আমরা বারবারই বলে আসছি। সক্ষমতা ও উদ্যোগের অভাবে এনবিআর তা পেরে উঠছিল না।’
নতুন এ উদ্যোগের ফলে বিদ্যমান করদাতাদের ওপর চাপ কমাবে বলে মনে করছেন তিনি।