দীর্ঘ মন্দার পর স্থিতিশীলতার পথে হাঁটছিল দেশের পুঁজিবাজার। কিন্তু নিয়ন্ত্রক সংস্থার বহু চেষ্টার পরও যেন পতনের ধারা থেকে ফেরানো যাচ্ছে না দেশের পুঁজিবাজারকে। পতনের মধ্য দিয়ে আরও একটি সপ্তাহ পার করেছে পুঁজিবাজার। শুধু গত সপ্তাহেই চার হাজার কোটি টাকা বাজার মূলধন হারিয়েছে প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। এর মাধ্যমে টানা পাঁচ সপ্তাহের পতনে ৩৬ হাজার কোটি টাকা উধাও হয়ে গেছে শেয়ারবাজার থেকে।
বাজার পর্যালোচনা করে দেখা যায়, বড় অঙ্কের বাজার মূলধন হারানোর পাশাপাশি গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইতে কমেছে প্রধান মূল্যসূচক। অবশ্য লেনদেনের পরিমাণ কিছুটা বেড়েছে। ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক কমেছে দশমিক ১৬ শতাংশ। আর লেনদেন বেড়েছে প্রায় ৯ শতাংশ।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষকরা বলছেন, পতনের ধারা অব্যাহত থাকায় আরও পতনের শঙ্কা তৈরি হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে। বাজার নিয়ে নানা ধরনের গুজবও তৈরি হচ্ছে। এর ফলে সাধারণ বিনিয়োগকারীরাও শেয়ার বিক্রি করছেন।
বাজার বিশ্লেষণে দেখা যায়, বড় বড় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার বিক্রির চাপে গত সপ্তাহের প্রথমদিন রবিবার বড় দরপতন হয়। তবে দ্বিতীয় দিন সোমবার পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থার চাপে বাজারকে কৃত্রিমভাবে বাড়ানো হলেও তারপরের টানা তিন দিন টানা দরপতন হয়েছে।
দেখা গেছে, দেশের প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) বিদায়ী সপ্তাহে ৩৭০টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে দাম বেড়েছে ১২৭টির, দাম কমেছে ১২২টির এবং অপরিবর্তিত রয়েছে ১১৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের।
তথ্য বলছে, বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারের দাম বাড়লেও ডিএসই’র প্রধান সূচক আগের সপ্তাহের চেয়ে ৯ পয়েন্ট কমে ৫ হাজার ৪৭৫ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। অন্য দুই সূচকের মধ্যে ডিএস-৩০ সূচক ৫ পয়েন্ট কমে ২ হাজার ১০৫ পয়েন্ট এবং ডিএসইএস সূচক ৬ পয়েন্ট বেড়ে ১ হাজার ২৪২ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
পুঁজি কমায় এ সপ্তাহে বিনিয়োগকারীদের লেনদেন কিছুটা বেড়েছে। গত সপ্তাহে বিনিয়োগকারীরা ৪ হাজার ৪৩৭ কোটি ৬৬ লাখ ৯৭ হাজার ২৫৭ টাকার শেয়ার কেনাবেচা করেন। এর আগের সপ্তাহে ৪ হাজার ৮৬ কোটি ১২ লাখ ৬৪ হাজার ১৮০ টাকার শেয়ার কেনাবেচা হয়েছিল। অর্থাৎ এক সপ্তাহের ব্যবধানে লেনদেন বেড়েছে ৩৫১ কোটি ৫৪ লাখ ৩৩ হাজার টাকা।
তথ্য বলছে, গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসই’র বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে চার লাখ ৬৫ হাজার ৬৫৮ কোটি টাকা। আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল চার লাখ ৬৯ হাজার ৭১০ কোটি টাকা। অর্থাৎ এক সপ্তাহে ডিএসইর বাজার মূলধন কমেছে চার হাজার ৫২ কোটি টাকা। আগের সপ্তাহে বাজার মূলধন কমেছে ৯ হাজার ৫৯৪ কোটি টাকা। তার আগের তিন সপ্তাহে কমেছে যথাক্রমে চার হাজার ৭০৮ কোটি টাকা, আট হাজার ২৭৭ কোটি টাকা এবং ৯ হাজার ৪২০ কোটি টাকা। এ হিসাবে টানা পাঁচ সপ্তাহের পতনে ডিএসই ৩৬ হাজার ৫১ কোটি টাকা বাজার মূলধন হারিয়েছে। অবশ্য এর আগে টানা সাত সপ্তাহের উত্থানে ডিএসইর বাজার মূলধন এক লাখ ১১ হাজার কোটি টাকা বেড়েছিল।
এদিকে গত সপ্তাহজুড়ে ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসইএক্স কমেছে ৯ দশমিক শূন্য ৩ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে সূচকটি কমেছিল ১৬২ দশমিক ৬৫ পয়েন্ট। তার আগের তিন সপ্তাহে কমেছিল ৭৬ দশমিক ৬৯ পয়েন্ট, ১১১ দশমিক ৮২ পয়েন্ট এবং ৭৩ দশমিক ১৩ পয়েন্ট। অর্থাৎ পাঁচ সপ্তাহের টানা পতনে ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক কমেছে ৪৩৩ পয়েন্ট।
প্রধান মূল্যসূচকরে পাশাপাশি টানা পাঁচ সপ্তাহ পতন হয়েছে ভালো কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই-৩০ সূচকেরও। গত সপ্তাহজুড়ে সূচকটি কমেছে পাঁচ দশমিক ১২ পয়েন্ট। আগের সপ্তাহে এই সূচকটি কমেছিল ৬৩ দশমিক শূন্য চার পয়েন্ট। তার আগের তিন সপ্তাহে কমেছে ১৭ দশমিক ৪৭ পয়েন্ট, ১৭ দশমিক ২৪ পয়েন্ট এবং ২৮ দশমিক ৩৩ পয়েন্ট ।
তবে ইসলামি শরিয়াহ ভিত্তিতে পরিচালিত কোম্পানি নিয়ে গঠিত ডিএসই শরিয়াহ্ সূচক টানা চার সপ্তাহ পতনের পর গত সপ্তাহে কিছুটা বেড়েছে। গত সপ্তাহে এই সূচকটি বেড়েছে ৬ দশমিক ১৬ পয়েন্ট।
সপ্তাহের প্রতি কার্যদিবসে ডিএসইতে গড়ে লেনদেন হয়েছে ৮৮৭ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। আগের সপ্তাহে প্রতিদিন গড়ে লেনদেন হয় ৮১৭ কোটি ২২ লাখ টাকা। অর্থাৎ প্রতি কার্যদিবসে গড় লেনদেন বেড়েছে ৭০ কোটি ৩১ লাখ টাকা।