রবি আজিয়াটা লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদের সদস্যরা লভ্যাংশের বিপক্ষে না উল্লেখ করে কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) ও প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, সঠিক সময়, সঠিক মুহূর্তে লভ্যাংশ দেয়া হবে। তবে সেটা কত তাড়াতাড়ি হবে, সেটা বলা মুশকিল।
মঙ্গলবার (১৬ ফেব্রুয়ারি) এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তিনি এ কথা বলেন। এর আগে গতকাল সোমবার কোম্পানিটির পরিচালনা পর্ষদের এক সভায় ২০২০ সালের ৩০ ডিসেম্বর সমাপ্ত বছরে বিনিয়োগকারীদের কোনো ধরনের লভ্যাংশ না দেয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।
মাহতাব উদ্দিন বলেন, অনেকগুলো বিষয় বোর্ডে আলোচনা হয়েছে। আমি এখন এখানে সবগুলো বলতে পারব না। একটা পয়েন্ট হলো- আমাদের যে ডিভিডেন্ড পলিসি আছে, তাতে ৫০ শতাংশ লভ্যাংশ দিলে এটা মাত্র ১.৬ অথবা ১.৭ শতাংশ আসত। এমনকি শতভাগ লভ্যাংশ দিলেও ৩ শতাংশের মতো আসে। এত কম লভ্যাংশ দিয়ে কোনো পজিটিভ ইমপ্যাক্ট (ইতিবাচক প্রভাব) ফেলা যেত কি না, দ্যাট ওয়াজ ওয়ান অফ দ্যা ক্রিটিক্যাল কনসার্ন।
‘দ্বিতীয় বিষয়টি হলো- লভ্যাংশের টাকাটা আমরা যদি রি-ইনভেস্টমেন্ট (পুনর্বিনিয়োগ) করি, তাহলে ব্যবসায় ভালো গ্রোথ হবে এবং এটা ভালো রিটার্ন পাওয়া নিশ্চিত করবে। এছাড়া আরও অনেকগুলো বিষয় আমরা চিন্তাভাবনা করেছি। আমাদের শেয়ারহোল্ডাররা সবসময় ফোকাস করেন শেয়ারহোল্ডারদের ইন্টারেস্টের দিকে’ বলেন রবির সিইও।
তিনি বলেন, আমাদের বোর্ড অবশ্যই লভ্যাংশ দেবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই। সঠিক সময়, সঠিক মুহূর্তে এটা করতে চাচ্ছি। সেটা কত তাড়াতাড়ি হবে, সেটা বলা মুশকিল। কারণ এটা হচ্ছে বোর্ডের ব্যাপার। আমি যেটা বলতে চাচ্ছি তা হলো এতো কম লভ্যাংশ দিয়ে কাউকে খুশি করা যাবে কি না, সেটা ক্রিটিক্যাল কনসার্ন।
তালিকাভুক্তির প্রথম বছরেই বিনিয়োগকারীদের কোনো ধরনের লভ্যাংশ না দেয়ায় বহুজাতিক এই কোম্পানিটির ওপর অসন্তুষ্টি প্রকাশ করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। কোম্পানিটির ব্যবস্থাপনার শীর্ষ কর্মকর্তাদের মঙ্গলবার দুপুরে জরুরিভাবে তলবও করা হয় এবং বিনিয়োগকারীদের ক্ষতি পুষিয়ে নিতে দ্রুত প্রতিকার জানাতে বলা হয়।
বিএসইসির অসন্তুষ্টি ও তলবের বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, বিএসইসি খুশি না, তারা আশা করেছিল লভ্যাংশ দেয়ার এবং আমি বলবো না তাদের প্রত্যাশার কোনো অসুবিধা আছে। কারণ নিয়ন্ত্রক সংস্থা সবসময় চাইবেন প্রতিটি কোম্পানি ভালো লভ্যাংশ দিয়ে শেয়ারহোল্ডারদের খুশি রাখুক।
‘আমরা বিএসইসির সঙ্গে পুরোপুরি একাত্মতা ঘোষণা করছি। ওনারা ওনাদের কনসার্নগুলো শেয়ার করেছেন এবং অবশ্যই ওনাদের কনসার্নগুলো আমরা বোর্ড মেম্বারদের সঙ্গে শেয়ার করবো। সেই সঙ্গে কি কি অ্যাকশন নেয়া যায়, সে ব্যবস্থাটা নেয়ার চেষ্টা করবো’ বলেন মাহতাব উদ্দিন আহমেদ।
উদ্যোক্তা ও পরিচালকরা লভ্যাংশ না নিয়ে শুধু সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দিলে রবি ১০ শতাংশের ওপরে লভ্যাংশ দিতে পারত এমন এক প্রশ্নের জবাবে রবির সিইও বলেন, অন্য কোম্পানি কি করে না করে, সেটা আমি বলতে পারি না। পৃথিবীতে খুব কম কোম্পানি আছে, গুড গভর্নেন্স কোম্পানি এই ধরনের লভ্যাংশ দেবে।
তিনি আরও বলেন, আমরা ২০১৪ সালের পরে কাউকে কোনো ধরনের লভ্যাংশ দেয়নি। আমাদের যে বিনিয়োগকারীরা মিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করেছে তাকে আমি লভ্যাংশ দিচ্ছি না, এখন আমি এখানে এসে এই ধরনের কাজ করবো? আমি এটুকু বলতে পারি- আমার জানা মতে ভালো কোম্পানি, ভালা গভর্নেন্স কোম্পানি এমনটা করবে না। তবে এই অপশনটাও (উদ্যোক্তা ও পরিচালকরা লভ্যাংশ না নিয়ে শুধু সাধারণ শেয়ারহোল্ডারদের লভ্যাংশ দেয়া) বোর্ডে আলোচনা করা হয়েছিল। রবির বোর্ড লভ্যাংশ দিতে চায় না, আমি এমন কোনো মনোভাব পায়নি।
আর এক প্রশ্নের উত্তরে তিনি বলেন, রবির বোর্ড সদস্যরা লভ্যাংশের বিপক্ষে না। গ্রোথের বিষয়টি গুরুত্বপূর্ণ ও লভ্যাংশের বিষয়টিও গুরুত্বপূর্ণ। তবে যদি একটা বছর দেখে এটার সিদ্ধান্ত (লভ্যাংশ না দেয়া) নেন, সেটা ফেয়ার হবে না।