1. [email protected] : শেয়ারবার্তা প্রতিবেদক : শেয়ারবার্তা প্রতিবেদক
  2. [email protected] : শেয়ারবার্তা : nayan শেয়ারবার্তা
  3. [email protected] : news uploder : news uploder
ডেল্টা লাইফের চার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ খতিয়ে দেখছে আইডিআরএ
সোমবার, ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০:৫৯ এএম

ডেল্টা লাইফের চার হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ খতিয়ে দেখছে আইডিআরএ

  • আপডেট সময় : মঙ্গলবার, ১৬ ফেব্রুয়ারী, ২০২১
delta-life

পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বীমা খাতের কোম্পানি ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স কোম্পানি লিমিটেড বিভিন্ন খাতে প্রায় ৪ হাজার কোটি টাকার বিনিয়োগ করেছে। নানা অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ২০১৯ সালে কোম্পানিটির আর্থিক ও হিসাবসংক্রান্ত বিষয় খতিয়ে দেখতে দুটি নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেয় বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ)। নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে জমা দেয়া নিরীক্ষকের প্রতিবেদনে বিধিমালা লঙ্ঘন করে জেড ক্যাটাগরির শেয়ারে বিনিয়োগের অভিযোগ উঠেছে ডেল্টা লাইফের বিরুদ্ধে। সব মিলিয়ে ৪৭ ধরনের অনিয়ম চিহ্নিত করেছেন নিরীক্ষক। এছাড়া আরো বেশকিছু বিষয়ে অধিকতর তদন্তেরও সুপারিশ করা হয়েছে। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিনিয়োগসহ অন্যান্য অনিয়মের বিষয়গুলো যাচাই করে দেখতে সম্প্রতি ডেল্টা লাইফে প্রশাসক নিয়োগ দিয়েছে আইডিআরএ।

তবে ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের পরিচালক ও শীর্ষ কর্মকর্তাদের দাবি, আইডিআরএ অ্যাকচুয়ারিয়াল বেসিস অনুমোদন না করার কারণেই ২০১৯ সালের নিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন এখনো তৈরি করা সম্ভব হয়নি। প্রতিষ্ঠানটির সর্বশেষ সমাপ্ত ২০২০ সালের আর্থিক হিসাব প্রস্তুতের কাজ চলছে। তাই ডেল্টা লাইফের সর্বশেষ প্রকাশিত নিরীক্ষিত আর্থিক তথ্য রয়েছে ২০১৮ সাল পর্যন্ত। ওই বছরের ৩১ ডিসেম্বর শেষে প্রতিষ্ঠানটির মোট বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৬১০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারি সিকিউরিটিজে ১ হাজার ১৩৫ কোটি, মিউচুয়াল ফান্ডে ১২ কোটি, তালিকাভুক্ত সিকিউরিটিজে ১ হাজার ৪৮ কোটি, ডিবেঞ্চার ও বন্ডে ১৩৫ কোটি, সাবসিডিয়ারি কোম্পানি ডিএলআইসি সিকিউরিটিজ লিমিটেডে প্রায় ১৪০ কোটি এবং বিভিন্ন স্থাবর সম্পত্তিতে ১৫৮ কোটি টাকা বিনিয়োগ রয়েছে ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের। আইডিআরএর তথ্যানুযায়ী, ২০২০ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিক (এপ্রিল-জুন) শেষে কোম্পানিটির বিনিয়োগের পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৭৮০ কোটি টাকা।

আর ২০১৮ সাল শেষে ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের লাইফ তহবিলের আকার দাঁড়ায় ৩ হাজার ৮২৯ কোটি টাকা। গত বছরের দ্বিতীয় প্রান্তিক শেষে কোম্পানিটির ৪ হাজার ৪৩ কোটি টাকার লাইফ তহবিল দাঁড়িয়েছে বলে আইডিআরএ সূত্রে জানা গেছে।

বীমা কোম্পানিগুলোর লাইফ তহবিলের অর্থ এফডিআর ও পুঁজিবাজার দুই খাতেই বিনিয়োগের সুযোগ রয়েছে। তবে লাইফ বীমাকারীর সম্পদ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে প্রবিধানমালা ২০১৯-এর শর্ত মেনে বিনিয়োগ হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে ডেল্টা লাইফের বিরুদ্ধে। বিধান না থাকলেও অতিরিক্ত মূল্যে জেড ক্যাটাগরির শেয়ারে বিনিয়োগ করা হয়েছে বলে আইডিআরএর কাছে জমা দেয়া প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন নিরীক্ষক।

গত ১১ ফেব্রুয়ারি আইডিআরএর সাবেক সদস্য সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লাকে ডেল্টা লাইফে প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দেয় বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি। এক্ষেত্রে নতুন পলিসি ইস্যু অব্যাহত রাখার পাশাপাশি কোম্পানির ব্যবসা ও অন্যান্য কার্যক্রম যথারীতি চলমান থাকবে বলে আইডিআরএর পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে। এছাড়া সুপ্রতিষ্ঠিত দেশী বা বিদেশী নিরীক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে প্রশাসককে কোম্পানিটির নিরীক্ষা সম্পন্ন করতে বলা হয়েছে। এক্ষেত্রে ২০১৯ সালে আইডিআরএর নিয়োগ করা দুই নিরীক্ষকের প্রতিবেদনে যেসব অনিয়ম উঠে এসেছে, সেগুলো আরো বিশদভাবে অনুসন্ধানের উদ্যোগ নেয়া হবে। নিরীক্ষকের প্রতিবেদনে অধিকতর তদন্তের সুপারিশ করা হয়েছিল—এমন বিষয়গুলোও খতিয়ে দেখবে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। আইডিআরএর কাছে প্রতিবেদন দাখিলের জন্য প্রশাসককে এরই মধ্যে চার মাস সময় বেঁধে দেয়া হয়েছে।

জানতে চাইলে ডেল্টা লাইফের প্রশাসক সুলতান-উল-আবেদীন মোল্লা বলেন, আমি দায়িত্ব নেয়ার পর মাত্র তিনদিন পেরিয়েছে। আইডিআরএর পক্ষ থেকে আমাকে সুনির্দিষ্ট বেশকিছু বিষয় খতিয়ে দেখতে দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। এর মধ্যে আর্থিক বিষয়গুলোও রয়েছে। নিরীক্ষকের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠানটির আর্থিক ও হিসাবসংক্রান্ত সবকিছুই তদন্ত করে দেখা হবে বলে জানান তিনি।

ডেল্টা লাইফে নিরীক্ষক নিয়োগ দেয়ার সময়ই বিষয়টি নিয়ে আইডিআরএর কাছে আপত্তি জানিয়েছিল কোম্পানি কর্তৃপক্ষ। নিরীক্ষকের বেশকিছু পর্যবেক্ষণের বিষয়েও দ্বিমত জানিয়েছে তারা। সর্বশেষ নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ কর্তৃক প্রশাসক নিয়োগের বৈধতা নিয়েও আইনি লড়াই চালিয়ে যাচ্ছে ডেল্টা লাইফ। সম্প্রতি আইডিআরএ চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেনের উৎকাচ দাবির বিষয়টি গণমাধ্যমের কাছে তুলে ধরতে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্স। বিনিয়োগের বিষয়ে ডেল্টা লাইফের পরিচালক জিয়াদ রহমান জানান, যেসব কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করা হয়েছিল, তাদের কয়েকটি পরবর্তী সময়ে জেড ক্যাটাগরিতে চলে যেতে পারে। কিন্তু জেড ক্যাটাগরিতে রয়েছে এমন কোনো কোম্পানিতে বিধান লঙ্ঘন করে বিনিয়োগ করেনি ডেল্টা লাইফ।

আইডিআরএর দাবি, বিভিন্ন অনিয়মের কারণে ডেল্টা লাইফের বিরুদ্ধে আইনি ক্ষমতাবলে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। অন্যদিকে কোম্পানিটির দাবি, ক্ষমতার অপব্যবহারের মাধ্যমে তাদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ উত্থাপন করে আইডিআরএ চেয়ারম্যান ৫০ লাখ টাকা ঘুষ দাবি করেছেন। এ বিষয়ে এরই মধ্যে দুর্নীতি দমন কমিশনের কাছে অভিযোগ করেছে ডেল্টা লাইফ কর্তৃপক্ষ।

এদিকে ঘুষ দেয়ার প্রস্তাবসহ মিথ্যা অপবাদ ও কূটকৌশলের মাধ্যমে মানহানি করার প্রচেষ্টার কারণে সম্প্রতি ২৫ কোটি টাকার মানহানির মামলা করেছেন আইডিআরএ চেয়ারম্যান ড. এম মোশাররফ হোসেন। মামলায় বিবাদী করা হয়েছে ডেল্টা লাইফ ইন্স্যুরেন্সের সাবেক চেয়ারম্যান মনজুরুর রহমান ও তার মেয়ে কোম্পানিটির সাবেক প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও) আদিবা রহমানসহ কোম্পানিটির আরো চার কর্মকর্তাকে।

বীমা খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থার পাশাপাশি জাতীয় রাজস্ব বোর্ডও (এনবিআর) ডেল্টা লাইফের রাজস্ব ফাঁকির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়েছে। ডেল্টা লাইফে প্রশাসক নিয়োগ করে আদেশ জারির দিনই ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর কোম্পানিটির বিরুদ্ধে ৩৫ কোটি ১৭ লাখ টাকার ভ্যাট ফাঁকির মামলা করে। সুনির্দিষ্ট অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে ডেল্টা লাইফের বিরুদ্ধে ভ্যাট আইনে মামলা দায়ের করা হয়েছে বলে জানায় ভ্যাট গোয়েন্দা অধিদপ্তর।

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:

ভালো লাগলে শেয়ার করবেন...

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ