পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত দুই কোম্পানির আর্থিক হিসাব সম্পর্কে নিরীক্ষক আপত্তি ও তাদের মতামত জানিয়েছেন। কোম্পানি দুটি হলো- ওয়াটা কেমিক্যালস এবং এমজেএল বাংলাদেশ লিমিটেড। ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।
দুই কোম্পানির মধ্যে ওয়াটা কেমিক্যাল তাদের হিসাবে বেশ কিছু অনিয়ম করেছে। এর মধ্যে সমাপ্ত হিসাব বছরে শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) বাড়িয়ে দেখানো, শ্রমিক ফান্ডের তহবিল গঠন না করা। এ ফান্ডের অর্থ শ্রমিকদের মধ্যে বিতরণ না করা, মুনাফা ও সম্পদের পরিমাণ বেশি দেখানোর মতো নানা অনিয়মের জড়িয়ে পড়েছে ওয়াটা কেমিক্যাল। আর এসব বিষয় নিয়ে নিরীক্ষক প্রতিষ্ঠান তাদের আপত্তি জানিয়েছে। অপরদিকে এমজেএল বাংলাদেশ লিমিটেডের শ্রমিক কল্যাণ তহবিল ব্যবহারের অনিয়মের বিষয়ে নিরীক্ষক মতামত জানিয়েছেন।
ওয়াটা কেমিক্যালস : নিরীক্ষক জানিয়েছেন কোম্পানিটির দুটি প্লান্ট ২০০৮ সাল থেকে বন্ধ। ২টি প্লান্ট বন্ধ থাকায় পুনর্মূল্যায়নকৃত সব সম্পদের উপর অবচয় ধার্য করা হয়নি। একই সঙ্গে ২০০৮ সালে কোম্পানির প্লান্ট, মেশিনারী এবং কারখানার ভবনসহ সম্পদ পুনর্মূল্যায়ন করা হয়েছে। কিন্তু কোম্পানি কর্তৃপক্ষ পুনর্মূল্যায়নকৃত সব সম্পদের উপর অবচয় ধার্য করেনি। ফলে ২০০৮ সাল থেকে ২০১১ সাল পর্যন্ত সম্পদের পরিমাণ ও মুনাফা বেশি দেখিয়ে এসেছে। এ কারণে বর্তমানে কোম্পানিতে সম্পদের পরিমাণ স্ফীত অবস্থায় রয়েছে।
সর্বশেষ হিসাবে ওয়াটা কেমিক্যাল শ্রমিক কল্যাণ তহবিলে ২ কোটি ৬৬ লাখ ৬২ হাজার ৮৩৯ টাকা দায় দেখিয়েছে। তবে শ্রমিকদের কর্মচারীদের সুবিধায় আলোচ্য তহবিল থেকে কোনও অর্থ বিতরণ করেনি প্রতিষ্ঠানটি। এ কারণে ২০০৬ সালের শ্রম আইনের ২৪২ (১) ধারায় বিধান লঙ্ঘন করেছে। একই সঙ্গে এই তহবিলের সুদ গণনা করেনি কোম্পানিটি। সেই সঙ্গে এই তহবিল ব্যবহারে ট্রাস্টি বোর্ডও গঠন করেনি। এসব কারণে শ্রম আইন লঙ্ঘন করেছে ওয়াটা কেমিক্যাল।
ওয়াটা কেমিক্যাল শ্রমিক কল্যাণ তহবিলের বিপরীতে প্রভিশন রাখেনি। ফলে আলোচ্য তহবিলের উপর ২৩ লাখ ৪১ হাজার টাকা কর আরোপ হয়েছে। আর এ অর্থ কর না দিয়ে মুনাফার সঙ্গে যোগ করেছে কোম্পাটি। এর মাধ্যমে কোম্পানিটি শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) ১৯ পয়সা বেশি দেখানো হয়েছে।
ওয়াটা কেমিক্যালস সর্বশেষ ৩০ জুন সমাপ্ত হিসাব বছরে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য ৫৫ শতাংশ লভ্যাংশ ঘোষণা করেছে। এর মধ্যে ৩০ শতাংশ নগদ এবং ২৫ শতাংশ বোনাস। আলোচ্য সময়ে কোম্পানির ইপিএস দেখানো হয়েছে ১১ টাকা ৬৩ পয়সা এবং শেয়ারপ্রতি সম্পদ মূল্য (এনএভি) ৬৬ টাকা ৮৫ পয়সা।
পুঁজিবাজারে ১৯৯২ সালে ওয়াটা কেমিক্যালস তালিকাভুক্ত হয়েছে। কোম্পানির অনুমোদিত মূলধন ১৫ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ১১ কোটি ৮৫ লাখ টাকা। কোম্পানির শেয়ার সংখ্যা ১ কোটি ১৮ লাখ ৫৮ হাজার ৯৬ টি। এর মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে ৩৬ দশমিক ৪১ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ৩৮ দশমিক শূণ্য ২ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ২৫ দশমিক ৫৭ শতাংশ শেয়ার আছে।
এমজেএল বাংলাদেশ লিমিটেড : এমজেএলের নিরীক্ষক জানিয়েছেন ২০১৩ সালের বাংলাদেশ (সংশোধনী) শ্রম আইনের ২৩২ ধারা অনুসারে, একটি কোম্পানির করপূর্ববর্তী মুনাফার ৫ শতাংশ শ্রমিক কল্যাণ তহবিলে রাখার বিধান রয়েছে। কিন্তু কোম্পানিটি ২০১৮ সালের জুলাই থেকে ২০১৯ সালের জুন পর্যন্ত সময়ে এ বিধান পরিপালন করেনি। এ বিধান পরিপালন করলে কোম্পানির মুনাফা কমে যেতো। কিন্তু শ্রম আইনের বিধান পরিপালন না করে কোম্পানিটি মুনাফা বেশি দেখানো হয়েছে।
এমজেএল বাংলাদেশ লিমিটেড পুঁজিবাজারে ২০১১ সালে তালিকাভুক্ত হয়েছে। কোম্পানির পরিশোধিত মূলধন ১ হাজার কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন ৩১৬ কোটি ৭৫ লাখ টাকা। কোম্পানির শেয়ার সংখ্যা ৩১ কোটি ৬৭ লাখ ৫২ হাজার ২৭টি। এর মধ্যে কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে ৭১ দশমিক ৫৩ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ১৮ দশমিক ৬১ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের কাছে দশমিক ৩১ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ৯ দশমিক ৫৫ শতাংশ শেয়ার আছে।
শেয়ারবার্তা / হামিদ