ব্যাংকগুলোকে ভালো রাখার জন্য সরকার অনেক বিষয়ে ছাড় দিয়েছে। তারপরও গত ডিসেম্বর শেষে ১১টি ব্যাংকে প্রভিশন ঘাটতি রয়েছে। এ তালিকায় রয়েছে সরকারি ৫টি ও বেসরকারি খাতের ৬টি ব্যাংক। ব্যাংকগুলোর ঘাটতি দেখানো হয়েছে ৭ হাজার ১৪৬ কোটি টাকা। অবশ্য প্রকৃত ঘাটতির পরিমাণ আরও অনেক বেশি বলে জানা গেছে।
ব্যাংক কোম্পানি আইন অনুযায়ী, প্রভিশন ঘাটতি থাকলে কোন ব্যাংক তার শেয়ারহোল্ডারদের জন্য লভ্যাংশ ঘোষণা করতে পারে না। অন্যদিকে প্রয়োজনীয় প্রভিশন রাখতে ব্যর্থ হলে মূলধন ঘাটতি পড়ার আশঙ্কা আছে।
ব্যাংকগুলো হচ্ছে বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, সোসাল ইসলামী ব্যাংক ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক। এদের মধ্যে পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত রয়েছে ঢাকা ব্যাংক, মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক, ন্যাশনাল ব্যাংক, সোসাল ইসলামী ব্যাংক ও স্ট্যান্ডার্ড ব্যাংক। আর সরকারি খাতের রয়েছে রূপালী ব্যাংক।
আমানতকারীদের অর্থ ঋণ হিসেবে দিয়ে সুদ বাবদ আয়ই মূলত ব্যাংক ব্যবসা। তাই আমানতকারীদের অর্থ যেন কোন ধরনের ঝুঁকিতে না পড়ে সেজন্য ব্যাংকগুলোকে নানা ধরনের বিধিনিষেধ মানতে হয়।
যার মধ্যে একটি হচ্ছে ঋণের বিপরীতে প্রভিশন রাখা। নিয়মিত বা অশ্রেণিকৃত ঋণের ক্ষেত্রে ০.২৫ শতাংশ হারে প্রভিশন রাখতে হয়। অর্থাৎ ১০০ টাকা ঋণ দিলে ২৫ পয়সা ব্যাংকগুলোকে প্রভিশন রাখতে হবে।
কোন ঋণ, শ্রেণিকৃত হওয়ার পর শ্রেণিকরণের প্রথম ধাপে পড়লে তথা সাবস্ট্যান্ডার্ড হয়ে গেলে ওই ঋণের বিপরীতে ২০ শতাংশ প্রভিশন রাখতে হয়। অর্থাৎ ১০০ টাকা ঋণের বিপরীতে ২০ টাকা প্রভিশন।
দ্বিতীয় ধাপ তথা ডাউটফুল বা সন্দেহজনক মানে নেমে গেলে ওই ঋণের বিপরীতে ৫০ শতাংশ প্রভিশন রাখার বিধান। অর্থাৎ ১০০ টাকা ডাউটফুল ঋণের ক্ষেত্রে ৫০ টাকা ব্যাংককে প্রভিশন রাখতে হবে।
আর কোন ঋণ, মন্দ বা ব্যাড লোনে পরিণত হলে শতভাগ প্রভিশন রাখতে হয়। অর্থাৎ ১০০ টাকা মন্দ ঋণের বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে ১০০ টাকাই প্রভিশন রাখতে হবে।
ব্যাংকের আয় থেকে অর্থ এনে এই প্রভিশন সংরক্ষণ করা হয়। তাই খেলাপি ঋণ বৃদ্ধির সাথে সাথে ব্যাংকের আয় না বাড়লে প্রভিশন ঘাটতি দেখা দেয়।
করোনার অভিঘাত মোকাবেলায় ঋণ প্রবাহ বাড়াতে গেল বছর ঋণ-আমানত অনুপাত (এডভান্স ডিপোজিট রেশিও-এডিআর) বাড়িয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। কনভেনশনাল ব্যাংকগুলোর জন্য এই অনুপাত ৮৭ শতাংশ এবং ইসলামী ব্যাংকের ক্ষেত্রে ৯২ শতাংশ।
অর্থাৎ কনভেনশনাল ব্যাংকগুলো ১০০ টাকা আমানতের বিপরীতে এখন ৮৭ টাকা ঋণ দিতে পারে। আর ইসলামী ব্যাংকগুলো ১০০ টাকা আমানতের বিপরীতে ৯২ টাকা ঋণ দিতে পারবে।