বিশ্বের সর্ববৃহৎ অর্থনৈতিক জোট রিজিওনাল কম্পিহেনসিভ ইকোনমিক পার্টনারশিপে (আরসিইপি) যুক্ত হওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোকে এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে বলা হয়েছে বলে জানা গেছে।
বিশ্বের মোট জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশ এবং ৩০ শতাংশ জিডিপি ধারণক্ষমতার আরসিইপিকে সবচেয়ে বড় বাণিজ্যিক ফোরাম হিসেবে ভাবা হচ্ছে। ১৫টি রাষ্ট্রের বাণিজ্যনির্ভর এ আঞ্চলিক ফোরাম কার্যকর হতে আরও প্রায় ৩ বছর লাগতে পারে।
এর আগে গেল বছরের ১৫ নভেম্বর আত্মপ্রকাশ করে জোটটি। এতে আসিয়ানভুক্ত ১০টি দেশ ছাড়াও চীন, অস্ট্রেলিয়া, জাপান, দক্ষিণ কোরিয়া ও নিউজিল্যান্ড যোগ দিয়েছে। ধারণা করা হচ্ছে, এই বাণিজ্য জোটে যোগ দিতে না পারলে সেটি বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
সরকারের একটি সংস্থার এ সংক্রান্ত এক প্রতিবেদন সম্প্রতি পররাষ্ট্র, বাণিজ্য এবং সড়ক পরিবহন ও সেতু মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হয়েছে।
ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, আগামী ২০ বছরের মধ্যে আরসিইপিভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে মুক্তবাণিজ্য অর্থনীতি চালু হবে। বাংলাদেশকে এ ফোরামে যোগ দিতে কূটনৈতিকভাবে অনুরোধ করা হয়নি। বাংলাদেশের রফতানি বাণিজ্যও মূলত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য ও ইউরোপীয় ইউনিয়নমুখী।
সেখানে বলা হয়, দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে বর্তমানে বাংলাদেশের রফতানি মোট বাণিজ্যের ১০ শতাংশ। চীনের বাজারে ৯৭ শতাংশ রফতানি পণ্যের ওপর শুল্কমুক্ত সুবিধা পাওয়া যাচ্ছে। কিন্তু ভবিষ্যতের কথা চিন্তায় রেখে বাণিজ্যিক পরিসর বাড়াতে আরসিইপিতে যোগদান বাংলাদেশের জন্য খুবই প্রয়োজন।
সংস্থাটির প্রতিবেদনে আরও উঠে এসেছে, আরসিইপিতে যোগদানের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ কৌশলগত অবস্থান নিতে চায়। কারণ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া তথা আসিয়ানভুক্ত রাষ্ট্রগুলোর সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক আমদানিনির্ভর। জোটভুক্ত হলে চীনের স্বল্পমূল্যের পণ্য সহজেই বাজারে প্রবেশ করবে, এমন ভাবনা থেকে ভারত এ ফোরামে যোগদানে এখনও বিরত রয়েছে। তবে এতে করে ভারতের উৎপাদনমুখী শিল্পগুলো বিশ্ব বাজারে প্রতিযোগিতায় টক্কর দিতে না পেরে বিলুপ্তির মুখে পড়তে পারে।
এ বিষয়ে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগের (সিপিডি) বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বিমসটেকের সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ আসিয়ান ও আরসিইপির সদস্য হওয়ার যোগসূত্র পেতে পারে। এই বাণিজ্যিক জোটকে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে বৈশ্বিক করোনা মহামারি-পরবর্তী অতিগুরুত্বপূর্ণ ও প্রয়োজনীয় অর্থনৈতিক প্ল্যাটফরম হিসেবে দেখছেন গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির বিশ্লেষকরা।
বাংলাদেশ আনুষ্ঠানিকভাবে ২০২৪ সালে উন্নয়নশীল দেশের স্বীকৃতি পাবে। স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের পর বাংলাদেশকে বিশ্ব বাণিজ্যে আরও চ্যালেঞ্জের মুখে পড়তে হবে। সে বিবেচনাতেও বাণিজ্যের ক্ষেত্র প্রসারিত করতে আরসিইপিতে যোগদান প্রয়োজন বাংলাদেশের।
চীন প্রভাবিত আরসিইপিতে যোগ দিলে ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্ক কেমন হবে, সেখানে কোনও নেতিবাচক প্রভাব পড়বে কিনা, এবং তেমনটি যেন না হয় সেজন্য আগাম কূটনৈতিক সুরাহা উচিত বলে অপর এক পর্যালোচনায় বলা হচ্ছে। তবে আরসিইপিতে যোগদানের বিষয়ে চীন ও জাপান চাইলে বাংলাদেশের জন্য ভূমিকা রাখতে পারে বলেও প্রতিবেদনে বলা হচ্ছে।