পণ্যের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় ওষুধ শিল্প মালিকরা উৎপাদন বাড়ানোর জন্য ওষুধের কাঁচামাল আমদানি যেমন অনেক বাড়িয়েছেন, তেমনি বাড়াতে হয়েছে ওষুধ আমদানিও।
কোভিডের প্রভাবে অর্থনীতি বিপর্যস্ত হলেও স্বাস্থ্য সুরক্ষার প্রয়োজনীয়তা এবং সচেতনতা বাড়ায় সংশ্লিষ্ট ওষুধ ও অন্যান্য পণ্যের চাহিদা ব্যাপক বেড়েছে।
রোববার কেন্দ্রীয় ব্যাংক প্রকাশিত, গেল বছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ের আমদানির উদ্দেশ্যে খোলা ঋণপত্র ও তা নিষ্পত্তির তথ্য বিশ্লেষণে এমন চিত্র ওঠে এসেছে।
এতে দেখা যায়, গেল বছরের জুলাই-ডিসেম্বরে তার আগের বছরের (২০১৯) একই সময়ের তুলনায় ওষুধ আমদানির জন্য খোলা ঋণপত্র ৫৭ শতাংশের বেশি বেড়েছে এবং নিষ্পত্তি বেড়েছে প্রায় ৩৯ শতাংশ।
অন্যদিকে ওষুধ তৈরির জন্য কাঁচামাল আমদানি করতে ঋণ খোলা না বাড়লেও নিষ্পত্তির হার বেড়েছে প্রায় ১৫ শতাংশ।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্কয়ার ফার্মার সিএফও কবির রেজা সংবাদ মাধ্যমকে জানান, করোনায় সুনির্দিষ্ট কিছু পণ্যের চাহিদা বেড়েছে ঠিকই। তবে আমদানি বাড়ার উল্লেখযোগ্য কারণ হচ্ছে, বিশ্বজুড়ে কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ এবং দেশে কোভিডের প্রভাব এই দুইয়ে মিলে কোন কারণে আমদানি ব্যাহত হলে উৎপাদন কমে যেতে পারে।
এই আশঙ্কা থেকেই ওষুধ কোম্পানিগুলো আগে ভাগেই বেশি করে ওষুধের কাঁচামাল আমদানি করে রেখেছে। তবে করোনায় ওষুধ কোম্পানি গুলোর মুনাফা খুব বাড়েনি বলে তার দাবি।
উদাহরণ হিসেবে তিনি বলেন, স্কয়ার ফার্মার গ্রোথ জুলাই-ডিসেম্বরে ছিল ১১/১২ শতাংশ। ২০১৯ সালেও একই ধরনের গ্রোথ হয়েছে।
কৃষি উৎপাদনে কোভিডের প্রভাব খুব একটা পড়েনি। অন্যদিকে গেল বছরের বন্যার পর জমির উর্বরতা বেড়েছে। ধানসহ অন্যান্য পণ্যের দামও ভালো পাচ্ছেন কৃষকরা। এতে উৎপাদন বাড়াতে তাদের উৎসাহ আছে।
উৎপাদন বাড়াতে প্রয়োজনীয় বীজের আমদানিও বেড়েছে। গেল বছরের জুলাই-ডিসেম্বর সময়ে আগের বছরের তুলনায় বীজ আমদানির জন্য ঋণপত্র খোলা বেড়েছে ১৮ শতাংশ, অন্যদিকে নিষ্পত্তির হার বেড়েছে ৯৭ শতাংশের বেশি।
আবার পেঁয়াজের দাম বাড়তে পারে এমন আশঙ্কায় আগে ভাগে আমদানির চাহিদা ছিল। এর প্রভাবে একই সময়ে (জুলাই-ডিসেম্বর) পেঁয়াজ আমদানির জন্য ঋণপত্র খোলা ও নিষ্পত্তির হারও বেড়েছে। সয়াবিন তেল আমদানির ক্ষেত্রেও ছিল একই চিত্র।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ সিপিডির’ ডিস্টিঙ্গুইসড ফেলো ড. মুস্তাফিজুর রহমান গণমাধ্যমকে বলেন, কোভিডের প্রভাবে আয় হ্রাস পাওয়ায় ওষুধ ছাড়া খাদ্য বর্হিভূত পণ্যের চাহিদা কমে গেছে।
কিন্তু নিত্য পণ্য তা খাদ্যপণ্যের চাহিদা হ্রাস পাওয়ার সুযোগ কম। কোভিডের অভিঘাত উৎপাদন পর্যায়ে না পড়া এবং ভালো দাম পাওয়ায় কৃষরা উৎপাদান বাড়িয়েছেন, এর প্রভাবেই বীজ থেকে শুরু করে অন্যান্য কৃষি পণ্যের আমদানি বাড়ার চিত্র দেখা যাচ্ছে।
অন্যদিকে চাল আমদানির জন্য ঋণপত্র খোলা বেড়েছে সবচেয়ে বেশি। কারণ চালের দাম বেড়ে যাওয়ায় দামে স্থিতিশীলতা আনতে চাল আমদানি উৎসাহী করতে আমদানি শুল্ক কমানো হয়েছে।
এর প্রভাবে গেল বছরের জুলাই-ডিসেম্বরে ৪৪ মিলিয়ন ডলারের ঋণপত্র খোলা হয়েছে, যা ২০১৯ সালের একই সময়ে ছিল মাত্র ২.২২ মিলিয়ন ডলার।
অর্থনীতির অন্যতম বড় সূচক, বিনিয়োগ পরিস্থিতির কোন উন্নতি নেই। কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ এ ওষুধ ছাড়া অন্য কোন শিল্পখাতে নতুন বিনিয়োগে যেতে সাহস পাচ্ছেন না বিনিয়োগকারীরা।
যারা প্রভাবে মূলধনী যন্ত্রপাতি ও শিল্পের মধ্যবর্তী কাঁচামাল আমদানি কমছে। গেল বছরের জুলাই-ডিসেম্বরে আগের বছরের (২০১৯) একই সময়ের তুলনায় এই দুটি ক্ষেত্রেই এলসি ওপেনিং ও সেটেলমেন্ট অনেক কমেছে।
বিনিয়োগ পরিস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ সিপিডির’ ডিস্টিঙ্গুইসড ফেলো ড. মুস্তাফিজুর রহমান বলেন, মূলধন যন্ত্রপাতি আমদানি প্রমাণ করছে নতুন করে কেউ বিনিয়োগ যাচ্ছে না।
কোভিডের অনিশ্চয়তা এবং চাহিদা কমার ফলেই নতুন বিনিয়োগ হচ্ছে না। এই পরিস্থিতি কর্মসংস্থানের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলবে বলে মনে করেন তিনি।