দেশের পুঁজিবাজারে অব্যাহত রয়েছে টানা দরপতন। যদিও মাঝেমধ্যে কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে কিন্তু তা স্থায়ী হয় না। ঝুঁকিপূর্ণ, উৎপাদন বন্ধ, দুর্বল মৌলভিত্তির কিছু কোম্পানির দৌরাত্ম্যে বাজারে গতি ফিরছে না। ফলে ব্যাহত হচ্ছে স্থিতিশীলতা। এতে হতাশ হচ্ছেন বিনিয়োগকারীরা। তবে এসব কোম্পানির ব্যাপারে সচেতন হলে বাজারে গতি ফিরবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত বিডি অটোকারস লিমিটেডের শেয়ার গতকাল সর্বশেষ ১৮১ টাকা ১০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে। গত ১৪ নভেম্বর কোম্পানির শেয়ার ১৩৭ টাকা ২০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে। মাত্র ৫ কার্যদিবসের ব্যবধানে কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে ৪৩ টাকা ৯০ পয়সা।
কোম্পানিটি ২০১৬ এবং ২০১৭ সালের সমাপ্ত হিসাব বছরে নাম মাত্র লভ্যাংশ দিয়েছে। এর আগে দীর্ঘ দিন বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ বঞ্চিত করে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে অবস্থান করে। পুঁঞ্জিভূত লোকসানে থাকা এ কোম্পানিটি গত হিসাব বছরে বোনাস লভ্যাংশ দিয়ে ‘এ’ ক্যাটাগরিতে ওঠে এসেছে। এতে সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘন করে বিডি অটোকারস।
এ কারণে কোম্পানির বোনাস শেয়ার ক্রেডিট না করতে সেন্ট্রাল ডিপোজিটরি বাংলাদেশ (সিডিবিএল) কে নির্দেশ দিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। নানা সমস্যায় জড়িয়ে পড়া স্বল্প মূলধনী কোম্পানিটি সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘন করলেও শেয়ারদর কিছুদিন ধরে টানা বাড়ছে। গতকাল কোম্পানির পিই রেশিও ৮৩ দশমিক ১৫ পয়েন্টে অবস্থান করছে। ৪ কোটি ৩২ লাখ টাকার পরিশোধিত বিডি অটোকারসের অনুমোদিত মূলধন ১০ কোটি টাকা। কোম্পানির শেয়ার সংখ্যা ৪৩ লাখ ২৬ হাজার ১৩ টি। এর মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে আছে ৩৫ দশমিক ৪৩ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে আছে ১০ দশমিক শূন্য ৯ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে আছে ৫৪ দশমিক ৪৮ শতাংশ শেয়ার।
এদিকে, স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকের শেয়ার বুধবার সর্বশেষ ৬১৩ টাকায় লেনদেন হয়েছে। কোম্পানির শেয়ারদর গত ১৩ নভেম্বর ৫০৭ টাকা ৫০ পয়সা লেনদেন হয়েছে। মাত্র ৬ কার্যদিবসে কোম্পানির শেয়ারদর বেড়েছে ১০৫ টাকা ৫০ পয়সা। গতকাল কোম্পানির পিই রেশিও ৩৮৫ দশমিক ৭০ পয়েন্টে অবস্থান করছে। অথচ কোম্পানিটি লোকসানে রয়েছে। এমনকি কোম্পানির উৎপাদনও বন্ধ। উৎপাদন বন্ধ থাকার পরও লোকসানি কোম্পানির দর বাড়ায় বিনিয়োগকারীদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে।
মিথুন নিটিং অ্যান্ড ডাইং লিমিটেড বেশ কয়েকবছর বিনিয়োগকারীদের জন্য বোনাস লভ্যাংশ দিয়েছে। গত দুই বছর ধরে কোম্পানিটি লভ্যাংশ দিতে ব্যর্থ হয়ে ‘জেড’ ক্যাটাগরিতে অবস্থান করছে। কোম্পানির পিই রেশিও নেগেটিভ।
কোম্পানিটির উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে ১৭ দশমিক ২০ শতাংশ শেয়ার আছে। বিএসইসির নিয়মানুযায়ী কোম্পানির উদ্যোক্তা পরিচালকরা সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণে ব্যর্থ। সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে কোম্পানির ৭০ দশমিক ৪০ শতাংশ শেয়ার আছে। সর্বশেষ তৃতীয় প্রান্তিকে শেয়ারপ্রতি লোকসান হয়েছে ১ টাকা ২৩ পয়সা। পরবর্তীতে কোম্পানিটি নানা সমস্যায় পড়ে উৎপাদন বন্ধ করে দেয়। কোম্পানিটির শেয়ারদর গত ১৩ নভেম্বর ছিল ৬ টাকা ৯০ পয়সা। গতকাল কোম্পানির শেয়ার ৮ টাকা ২০ পয়সা লেনদেন হয়েছে। উৎপাদন বন্ধ থাকার পরও কোম্পানির শেয়ারদর বাড়ছে।
বিডি অটোকারস, স্ট্যান্ডার্ড সিরামিকস, মিথুন নিটিংই নয় এমন বেশ কিছু কোম্পানির দর কয়েকদিন ধরে বাড়ছে। এতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের পাশাপাশি সংশ্লিষ্টরা উদ্বেগ প্রকাশ করছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দীর্ঘ মন্দার বাজার যখন কিছুটা ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করে ঠিক তখনই স্বল্পমূলধনী, লোকসানি, দুর্বল মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানির দৌরাত্ম্য বেড়ে যায়। এর ফলে বাজরে সূচক উত্থানে ধারাবাহিকতা থাকে না। বাজার উত্থানে বিনিয়োগকারীরা কিছুটা আশার আলো দেখলেও আশাহত হয় বারবার। তাই এসব কোম্পানির পেছনে কোনো কারসাজি হচ্ছে কিনা তা খতিয়ে দেখা উচিত বলে মনে করছেন তারা। এসব কোম্পানির বিষয়ে খতিয়ে দেখে এর পেছনের কারণ খুঁজে বের করতে পারলে বাজারে গতি ফেরার সম্ভাবনা রয়েছে।
এ সম্পর্কে নাম প্রকাশ না করার শর্তে একটি শীর্ষ ব্রোকারেজ হাউজের কর্মকর্তা বলেন, বাজারে কয়েকদিন ধরে যেসব কোম্পানির দর বাড়ছে সেগুলোর পিই রেশিও অনেক বেশি। এর মধ্যে কিছু কোম্পানির পিই রেশিও ঝুঁকিপূর্ণ। কিন্তু এসব কোম্পানির দৌরাত্ম্য বেড়েই চলছে। এসব অতিমূল্যায়িত কোম্পানিই বাজার স্থিতিশীলতার অন্তরায়। তাই বিএসইসির উচিত এসব বিষয়ে নজরদারি বাড়ানো।
শেয়ারবার্তা/ সাইফুল ইসলাম