২০১০ সালে মহাধসে পুঁজিবাজারে লাখ লাখ বিনিয়োগকারী ফতুর হয়েছেন। এরপর থেকে টানা ১০ বছর মানুষ পুঁজিবাজার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়েছিলেন। এখন সেই পুঁজিবাজার শুধু চাঙ্গাই হয়নি, প্রতিদিন মানুষজন কোটি কোটি টাকা বিনিয়োগ করছেন পুঁজিবাজারে। একবছর আগেও কেউ চিন্তা করেনি পুঁজিবাজার এভাবে ঘুর দাঁড়াবে।
গত ছয় মাসে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের মাধ্যমে কালো টাকা সাদা করেছেন ২০৫ জন। তাদের কাছ থেকে সরকার কর পেয়েছে ২২ কোটি ৮৪ লাখ টাকা। আর সার্বিকভাবে গত সাড়ে ছয় মাসে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ হয়েছে প্রায় দুই লাখ কোটি টাকা।
পুঁজিবাজারের তথ্য বলছে, গত জুলাই মাসের শুরুতে ডিএসইর বাজার মূলধন ছিল ৩ লাখ ১১ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা। আর গত সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসের লেনদেন শেষে ডিএসইর বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে ৪ লাখ ৯২ হাজার ২৮৯ কোটি টাকা, যা এর আগের সপ্তাহের শেষ কার্যদিবসে ছিল ৫ লাখ ১ হাজার ৭০৯ কোটি টাকা।
এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) গবেষক ড. জায়েদ বখত সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘পুঁজিবাজারের প্রতি মানুষের আস্থা ফিরেছে। দীর্ঘদিন ধরে পুঁজিবাজারের প্রতি মানুষের মধ্যে যে অনাস্থা ছিল, সেটি এখন দূর হয়েছে।’ পুঁজিবাজার এখন একটি শক্তিশালী বাজারে পরিণত হয়েছে বলেও মন্তব্য করেন তিনি।
এদিকে বিনিয়োগকারীরা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সে ব্যাপারে নানামুখী উদ্যোগ নিয়েছে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সর্বশেষ তারা যে উদ্যোগটি নিয়েছে তা হলো— যেসব কোম্পানি অন্যায়ভাবে বিনিয়োগকারীদের ডিভিডেন্ড দেওয়া থেকে বিরত থেকেছে, সেসব কোম্পানিতে পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেওয়া শুরু করেছে। এরই মধ্যে
শেয়ার বাজারে তালিকাভুক্ত বস্ত্র খাতের কোম্পানি আলহাজ টেক্সটাইলে নতুন করে তিন জন নতুন পরিচালক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। পাশাপাশি কোম্পানিটির সামগ্রিক কর্মকাণ্ড পর্যালোচনায় তিন সদস্যের একটি কমিটিও গঠন করা হয়েছে। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন-বিএসইসি গত বুধবার (২০ জানুয়ারি) এ সংক্রান্ত আলাদা দুটি আদেশ জারি করে।
বিএসইসির আদেশে বলা হয়েছে, আর্থিক সামর্থ্য থাকার পরও কোম্পানিটি দুই বছর বিনিয়োগকারীদের লভ্যাংশ দেয়নি। এক বছরের বেশি সময় ধরে কোম্পানিটি ‘জেড’ শ্রেণিভুক্ত। কিন্তু কোম্পানির অবস্থার উন্নয়নে বর্তমান পরিচালনা পর্ষদ ব্যবস্থা নেয়নি। এ কারণে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের স্বার্থ রক্ষায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে বিএসইসি কোম্পানিতে স্বতন্ত্র পরিচালক হিসেবে তিন জন পর্যবেক্ষক নিয়োগ দেওয়া হয়েছে।
বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের উন্নয়নে লন্ডন স্টক এক্সচেঞ্জ কাজ করবে বলে জানিয়েছেন ঢাকায় নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার রবার্ট চ্যাটার্টন ডিকসন। বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম সাংবাদিকদের এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
ঢাকা স্টক এক্সেচেঞ্জের চেয়ারম্যান ইউনুসুর রহমান বলেন, ‘পুঁজিবাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় অনেক পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। ডিসেম্বর থেকে শেয়ার বাজারে তার সুবাতাস বইছে।’ তিনি উল্লেখ করেন, ১৯৯৬ এবং ২০০৯-১০ সালে যে ঘটনা হয়েছে, তেমন ঘটনা সামনের দিনে আর ঘটবে না।
বুধবার ২০ জানুয়ারি) ডিএসই কার্যালয়ে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় তিনি বলেন, ‘১৯৯৬ এবং ২০১০ সাল পর্যন্ত পুঁজিবাজারের লিগ্যাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার অত্যান্ত দুর্বল ছিল। আইনকানুনের যথেষ্ট অভাব ছিল। ২০১০ সালের পর আমাদের লিগ্যাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার যথেষ্ট শক্তিশালী হয়েছে। এখন আমরা নিশ্চিতভাবে বিশ্বাস করতে পারি, যে ঘটনাগুলো ১৯৯৬ এবং ২০০৯-১০ সালে হয়েছে, তেমন ঘটনা সামনের দিনে আর ঘটবে না।’