চাপে পড়ে পদত্যাগ করলেন ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডের (আইএলএফএসএল) ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) আবদুল খালেক খান পদত্যাগ করেছেন। আজ বুধবার তিনি পদত্যাগপত্র জমা দেন। আলোচিত প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদারের কারণে প্রতিষ্ঠানটি গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে পারছে না। আবার টাকা আদায় করতে গিয়ে হুমকির মুখেও পড়েছিলেন আবদুল খালেক খান।
আদালতের নির্দেশে আইএলএফএসএলের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন সাবেক সচিব নজরুল ইসলাম খান।
জানা যায়, আজ পরিচালনা পর্ষদের সভায় চেয়ারম্যানসহ অন্য পরিচালকেরা উপস্থিত ছিলেন। সভায় কয়েকজন পরিচালক অনিয়মে জড়িত ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে যে আইনি পদক্ষেপ চলছে, তা বন্ধের জন্য এমডির ওপর চাপ প্রয়োগ করেন। তাঁরা এমডিকে এসব বন্ধ করতে না পারলে বরখাস্ত করার হুমকি দেন। এক পর্যায়ে সেই সভাতেই পদত্যাগপত্র জমা দেন আবদুল খালেক খান।
প্রতিষ্ঠানটির চেয়ারম্যান নজরুল ইসলাম খান গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আজ পর্ষদ সভা ছিল। সেখানেই স্বাস্থ্যগত কারণ দেখিয়ে এমডি পদত্যাগ করেছেন।’
জানা যায়, টাকা ফেরত না পেয়ে কয়েকজন গ্রাহক আদালতে গেলে চেয়ারম্যান হিসেবে সাবেক ডেপুটি গভর্নর খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদকে দায়িত্ব দেন। তিনি দায়িত্ব নিয়ে ব্যবস্থাপনা পরিচালক নিয়োগের উদ্যোগ নেন। ওই সময়ে কমার্স ব্যাংকের সাবেক এমডি খালেক খান নিয়োগ পান। তবে দায়িত্ব নেওয়ার এক মাসের মাথায় ইব্রাহিম খালেদ পদত্যাগ করেন। পরে আদালত সাবেক সচিব নজরুল ইসলাম খানকে চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব দেন। আবদুল খালেক খানকে এমডি হিসেবে দায়িত্ব দেন গত বছরের ১৪ জুন। চলতি বছরে আগস্টে তাঁর মেয়াদ শেষ হওয়ার কথা ছিল।
এদিকে ইন্টারন্যাশনাল লিজিং অ্যান্ড ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসেস লিমিটেডে (আইএলএফএসএল) বহাল তবিয়তে আছেন পি কে হালদারের সঙ্গীরা। তাঁর নিয়োগ করা পরিচালকেরা এখনো পর্ষদে রয়েছেন। তাঁকে যেসব কর্মকর্তা টাকা লুটে সহায়তা করেছিলেন, তাঁরাও বহাল। যাঁদের নামে টাকা বের হয়েছে, তাঁদেরও কিছু হয়নি। এর বাইরে কেবল আদালতের নিয়োগ দেওয়া নতুন চেয়ারম্যান আর একজন নতুন ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) পেয়েছিল প্রতিষ্ঠানটি।জানা যায়, বর্তমানে ইন্টারন্যাশনাল লিজিংয়ের পরিচালনা পর্ষদে রয়েছেন এম এ হাশেম, নুরুল আলম, আবুল হাশেম, মো. নুরুজ্জামান, নাসিম আনোয়ার, বাসুদেব ব্যানার্জি, নওশেরুল ইসলাম ও আনোয়ারুল কবির। এর মধ্যে নুরুল আলম ছাড়া সবাই পি কে হালদার দখল করার পর প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক হন। তাঁদের অনেকেই পি কে হালদারের সঙ্গে যুক্ত। আর নতুন করে প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক হিসেবে যুক্ত হয়েছেন ব্রাহ্মণবাড়িয়া আওয়ামী লীগ নেতা জাকির আহমেদ। তাঁকে বেশ আগে রূপালী ব্যাংকের পরিচালক করেছিল বর্তমান সরকার।
২০১৫ সালে বিভিন্ন নামে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ার কিনে পরিচালনা পর্ষদ দখল করে নেন রিলায়েন্স ফাইন্যান্স ও এনআরবি গ্লোবাল ব্যাংকের মডি প্রশান্ত কুমার (পি কে) হালদার। এরপর প্রতিষ্ঠানটি থেকে কাগুজে কোম্পানি খুলে প্রায় আড়াই হাজার কোটি টাকা বের করে নেন। প্রতিষ্ঠানটি যখন গ্রাহকদের টাকা ফেরত দিতে পারছিল না, গ্রাহকেরা তখন আদালতে যায়। এরপর নিয়োগ হয় নতুন চেয়ারম্যান।
এদিকে পি কে হালদারের নিয়োগ করা পরিচালকদের সরিয়ে দেওয়ার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংক সুপারিশ করলেও তা এখনো বাস্তবায়িত হয়নি। তাঁরা এখনো প্রতিষ্ঠানটি পরিচালনায় নেতৃত্ব দিচ্ছেন।