পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত কোম্পানিগুলোর ডিভিডেন্ড অনুমোদনের ৩০ দিনের মধ্যে প্রদানের বাধ্যবাধকতা দিয়ে নির্দেশনা জারি করেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। তবে কেউ ডিভিডেন্ড দাবি না করলে বা অপরিশোধিত থাকলে, তা ৩ বছর পরে কমিশনের নির্দেশিত ফান্ডে হস্তান্তর করতে হবে।
বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম সাক্ষরিত এই নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
নির্দেশনায় বলা হয়েছে, ইস্যুয়ার কোম্পানি ডিভিডেন্ড বিতরণের জন্য পলিসি গঠন করবে। যা বার্ষিক প্রতিবেদন ও কোম্পানির ওয়েবসাইটে প্রকাশ করবে। এছাড়া কোম্পানিগুলোকে বার্ষিক বা চূড়ান্ত ডিভিডেন্ড অনুমোদনের ৩০দিনের মধ্যে, অন্তবর্তীকালীন ডিভিডেন্ড রেকর্ড ডেটের পরবর্তী ৩০ দিনের মধ্যে ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের ডিভিডেন্ড ট্রাস্টির অনুমোদনের ৪৫ দিনের মধ্যে প্রদান করতে হবে।
পরিচালনা পর্ষদ বা ট্রাস্টির ঘোষণার ১০ দিনের মধ্যে ক্যাশ ডিভিডেন্ড পৃথক ব্যাংক হিসাবে রাখতে হবে। এই ক্যাশ ডিভিডেন্ড বিইএফটিএন এর মাধ্যমে শেয়ারহোল্ডার বা ইউনিটহোল্ডারের ব্যাংক হিসাবে সরাসরি প্রদান করবে। তবে স্টক ব্রোকার, মার্চেন্ট ব্যাংকার বা পোর্টফোলিও ম্যানেজার মার্জিন ঋণগ্রহীতা গ্রাহক বা ডেবিট ব্যালেন্সের জন্য ক্যাশ ডিভিডেন্ড চাইলে, কোম্পানি সমন্বিত কাস্টমারস ব্যাংক হিসাবে বা মার্চেন্ট ব্যাংক বা পোর্টফোলিও ম্যানেজারের পৃথক ব্যাংক হিসাবে বিইএফটিএন এর মাধ্যমে পাঠাবে।
যদি শেয়ারহোল্ডার বা ইউনিটহোল্ডারের ব্যাংক হিসাবের তথ্যের ঘাটতির কারণে বা বিইএফটিএন এর মাধ্যমে ক্যাশ ডিভিডেন্ড প্রদান করা সম্ভব না হয়, তাহলে ইস্যুয়ার কোম্পানি ‘ক্যাশ ডিভিডেন্ড ওয়ারেন্ট’ পাঠাবে।
এদিকে প্রবাসি উদ্যোক্তা, পরিচালক, শেয়ারহোল্ডার, ইউনিটহোল্ডার ও ফরেন পোর্টফোলিও ইনভেস্টরদেরকে সিকিউরিটি কাস্টডিয়ানের মাধ্যমে ইস্যুয়ারকে ক্যাশ ডিভিডেন্ড প্রদান করতে বলা হয়েছে বিএসইসির ওই নির্দেশনায়। এক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট সব আইনকানুন পরিপালন করতে হবে। এই ক্যাশ ডিভিডেন্ড প্রদানের পরে কোম্পানি শেয়ারহোল্ডার বা ইউনিটহোল্ডারদেরকে মোবাইলে এসএমএস বা ইমেইলের মাধ্যমে জানাবে।
এরপরেও যদি কোম্পানিগুলোতে অপরিশোধিত বা অদাবিকৃত ক্যাশ ডিভিডেন্ড থাকে, তাহলে বিস্তারিত তথ্য রক্ষনাবেক্ষন করতে হবে। যা বার্ষিক প্রতিবেদনে প্রকাশ এবং প্রান্তিক প্রতিবেদনে ‘Unclaimed Dividend Account’ শিরোনামে প্রকাশ করতে হবে। আর ডিভিডেন্ড ঘোষণার বা রেকর্ড ডেটের ১ বছরের মধ্যে ডিভিডেন্ডের হিসাব রক্ষনাবেক্ষনের জন্য গঠিত পৃথক ব্যাংক হিসাবে ওই ক্যাশ ডিভিডেন্ড স্থানান্তর করতে হবে।
এদিকে বোনাস শেয়ার ঘোষণার বা অনুমোদনের বা রেকর্ড ডেটের ৩০ দিনের মধ্যে ইস্যুয়ার কোম্পানি শেয়ারহোল্ডারের বিও হিসাবে ক্রেডিট করবে বা বোনাস শেয়ার সার্টিফিকেট ইস্যু করবে। তবে অপরিশোধিত ও অদাবিকৃত বোনাস শেয়ারের জন্য সান্সপেন্স বিও হিসাব রক্ষনাবেক্ষন করবে ইস্যুয়ার। তবে বোনাস শেয়ার প্রদানের লক্ষ্যে ইস্যুয়ার শেয়ারহোল্ডারকে কমপক্ষে ৩ বার রিমাইন্ডার দেবে।
ডিভিডেন্ড বিতরনের ৭ কার্যদিবসের মধ্যে ইস্যুয়ার কমিশন ও স্টক এক্সচেঞ্জে কমপ্লাইয়েন্স রিপোর্ট জমা দেবে। যা কোম্পানির ওয়েবসাইটেও প্রকাশ করতে হবে।
ইস্যুয়ার অপরিশোধিত বা অদাবিকৃত ক্যাশ ডিভিডেন্ড বাজেয়াপ্ত করতে পারবে না। এছাড়া এ জাতীয় ক্যাশ ডিভিডেন্ড ৩ বছর পরে কমিশনের নির্দেশনা অনুযায়ি নির্দেশিত ফান্ডে হস্তান্তর করতে হবে। এই হস্তান্তরের সময় ইস্যুয়ার বিস্তারিত তথ্য সরবরাহ করবে। তবে হস্তান্তরের পরে যদি কেউ ডিভিডেন্ড দাবি করে, তাহলে ইস্যুয়ার ১৫ দিনের মধ্যে তা যাচাই করে ফান্ড ম্যানেজারকে প্রদানের জন্য সুপারিশ করবে। এরপরে ফান্ড ম্যানেজার তা দাবিকারীকে প্রদান করবে।
একইভাবে ৩ বছরের বেশি সময় অপরিশোধিত বা অদাবিকৃত থাকা বোনাস শেয়ার কমিশনের নির্দেশিত ফান্ডের বিও হিসাবে হস্তান্তর করতে হবে। এরসঙ্গেও বিস্তারিত তথ্য দিবে ইস্যুয়ার। তবে হস্তান্তরের পরে যদি কেউ ডিভিডেন্ড দাবি করে, তাহলে ইস্যুয়ার ১৫ দিনের মধ্যে তা যাচাই করে ফান্ড ম্যানেজারকে প্রদানের জন্য সুপারিশ করবে। এরপরে ফান্ড ম্যানেজার তা দাবিকারীকে প্রদান করবে।
এদিকে শেয়ারহোল্ডার বা ইউনিটহোল্ডারের মাঝে ডিভিডেন্ড বিতরনের জন্য ইস্যুয়ার বিও হিসাব, ব্যাংক হিসাব, মোবাইল নাম্বার, ইমেইল ও ঠিকানার বিস্তারিত তথ্য সংগ্রহ করে রাখবে। এসব তথ্যের গোপনীয়তা রাখতে হবে।
এছাড়া সিডিবিএল ও ডিপি শেয়ারহোল্ডার বা ইউনিটহোল্ডারের বিও হিসাব, ব্যাংক হিসাব, মোবাইল নাম্বার, ইমেইল ও ঠিকানার তথ্য বছরে কমপক্ষে একবার আপডেট করবে। একইসঙ্গে সঠিকভাবে ডিভিডেন্ড বিতরনের জন্য সিডিবিএল ওই আপডেট তথ্য ইস্যুয়ার কোম্পানিকে দেবে।