নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) থেকে শেয়ার মূল্যের অস্বাভাবিক উত্থান-পতনের তদন্ত স্থগিত করায় আজ বৃহস্পতিবার (১৪ জানুয়ারি) দেশের পুঁজিবাজারে উল্লম্ফন ঘটেছে।
ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) এবং চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জে (সিএসই) সবকটি মূল্যসূচকের বড় উত্থানের পাশাপাশি বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। এতে একদিনে ডিএসই’র বাজার মূলধন ১১ হাজার কোটি টাকার ওপর বেড়েছে। যার মাধ্যমে পাঁচ লাখ কোটি টাকার রেকর্ড মাইলফলক স্পর্শ করেছে ডিএসই’র বাজার মূলধন। পাশাপাশি ডিএসই’র প্রধান মূল্যসূচক দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ অবস্থানে পৌঁছেছে।
দিনের লেনদেন শেষে ডিএসই’র বাজার মূলধন দাঁড়িয়েছে পাঁচ লাখ এক হাজার ৭০৯ কোটি টাকা, যা আগের দিন ছিল চার লাখ ৯০ হাজার ৩১৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ একদিনে ডিএসই’র বাজার মূলধন বেড়েছে ১১ হাজার ৩৯৩ কোটি টাকা। বাজার মূলধন বাড়ার অর্থ তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর শেয়ার ও ইউনিটের দাম সম্মিলিতভাবে ওই পরিমাণ বেড়ে গেছে।
এর আগে মঙ্গলবার (১২ জানুয়ারি) বিএসইসি থেকে যেসব কোম্পানির শেয়ার দাম ৫০ শতাংশের ওপরে বেড়েছে বা কমেছে তার কারণ তদন্তের জন্য দুই স্টক এক্সচেঞ্জকে নির্দেশ দেয়া হয়। এতে বুধবার (১৩ জানুয়ারি) দেশের পুঁজিবাজারে ধস নামে। ডিএসইর প্রধান মূল্যসূচক ৯১ পয়েন্ট পড়ে যায়।
পরিস্থিতি সামাল দিতে পুঁজিবাজার ও বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে বুধবার বিকেলে তদন্তের নির্দেশ স্থগিত করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা। যার সুফল বৃহস্পতিবার লেনদেন শুরু হওয়ার আগেই দেখা যায়।
লেনদেন শুরুর নির্ধারিত সময়ের আগেই ডিএসই’র প্রধান মূল্যসূচক ডিএসই-এক্স ১০৮ পয়েন্ট বেড়ে যায়। সময়ের সঙ্গে সূচকের উত্থান প্রবণতা বাড়তে থাকে। একপর্যায়ে সূচকটি ১৭২ পয়েন্ট বেড়ে যায়। তবে লেনদেনের শেষ দিকে সূচকের উত্থান প্রবণতা কিছুটা কমে।
এতে দিনের লেনদেন শেষে ডিএসই’র প্রধান মূল্যসূচক আগের দিনের তুলনায় ১৩৯ পয়েন্ট বেড়ে পাঁচ হাজার ৯০৯ পয়েন্টে উঠেছে। এর মাধ্যমে ২০১৯ সালের ২৯ জানুয়ারির পর সূচকটি সর্বোচ্চ অবস্থানে উঠে এসেছে। ২০১৯ সালের ২৯ জানুয়ারি সূচকটি পাঁচ হাজার ৯২৪ পয়েন্টে ছিল।
প্রধান মূল্যসূচকের পাশাপাশি বড় উত্থান হয়েছে ডিএসইর অপর দুই সূচকের। এর মধ্যে ডিএসই-৩০ আগের দিনের তুলনায় ৭৬ পয়েন্ট কমে দুই হাজার ২৩৬ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে। ডিএসই’র শরিয়াহ্ সূচক ২১ পয়েন্ট কমে এক হাজার ৩২৩ পয়েন্টে দাঁড়িয়েছে।
সূচক এমন উত্থানের সঙ্গে বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ার দাম বাড়ার প্রবণতা লেনদেনের শেষ পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। এতে দাম বাড়ার সর্বোচ্চ সীমায় পৌঁছে যায় একডজন প্রতিষ্ঠান। সেই সঙ্গে দাম বাড়ার তালিকায় নাম লেখায় বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠান। ডিএসইতে দিনভর লেনদেনে অংশ নেয়া ১৫৯টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১৩৩টির। ৭০টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।
এদিন ১ শতাংশের ওপর দাম বেড়েছে ১২৫টির। এর মধ্যে ৭৯টির দাম বেড়েছে ২ শতাংশের ওপরে। ৪ শতাংশের ওপরে দাম বাড়ার তালিকায় রয়েছে ৩৯টি। ১৭টি প্রতিষ্ঠানের শেয়ার ও ইউনিটের দাম বেড়েছে ৬ শতাংশের ওপরে। ৯ শতাংশের ওপর দাম বেড়েছে ১২টির।
মূল্যসূচক ও বেশিরভাগ প্রতিষ্ঠানের দাম বাড়ালেও ডিএসইতে লেনদেনের পরিমাণ কিছুটা কমেছে। অবশ্য লেনদেন দুই হাজার কোটি টাকার ওপরে হয়েছে। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে দুই হাজার ৭০ কোটি ৮৫ লাখ টাকা, যা আগের দিন ছিল দুই হাজার ১০৮ কোটি ৪৯ লাখ টাকা। এ হিসেবে লেনদেন কমেছে ৩৭ কোটি ৬৪ লাখ টাকা।
টাকার অঙ্কে ডিএসইতে সব থেকে বেশি লেনদেন হয়েছে বেক্সিমকোর শেয়ার। কোম্পানিটির ১৮৪ কোটি এক লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। দ্বিতীয় স্থানে থাকা বেক্সিমকো ফার্মার ১২৩ কোটি ৭২ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেন হয়েছে। ৯৭ কোটি ৩৮ লাখ টাকার শেয়ার লেনদেনের মাধ্যমে তৃতীয় স্থানে রয়েছে রবি।
এছাড়া ডিএসইতে লেনদেনের দিক থেকে ডিএসইতে শীর্ষ ১০ প্রতিষ্ঠানের তালিকায় রয়েছে— সামিট পাওয়ার, লাফার্জহোলসিম, আইএফআইসি ব্যাংক, সিটি ব্যাংক, পাওয়ার গ্রিড, লংকাবাংলা ফাইন্যান্স এবং ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো।
অপর পুঁজিবাজার চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের সার্বিক মূল্যসূচক সিএএসপিআই বেড়েছে ৪২২ পয়েন্ট। বাজারটিতে লেনদেন হয়েছে ৮৩ কোটি ৭৭ লাখ টাকা। লেনদেনে অংশ নেয়া ২৮৬টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৩৭টির দাম বেড়েছে। বিপরীতে দাম কমেছে ১০৭টির এবং ৪২টির দাম অপরিবর্তিত রয়েছে।