অনেক বছর পর গতি ফিরে পেতে থাকা পুঁজিবাজারে কোনো গোষ্ঠি যাতে কারসাজির মাধ্যমে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের প্রতারিত করতে না পারে সে লক্ষ্যে সতর্ক নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এর অংশ হিসেবে মঙ্গলবার (১২ জানুয়ারি) বিএসইসি শেয়ারের মূল্য বা লেনদেনে বড় কোনো পরিবর্তন এলে তা খতিয়ে দেখার জন্য দুই স্টক এক্সচেঞ্জকে নির্দেশ দেয়।
ওই নির্দেশনাকে কেন্দ্র করে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের মধ্যে কিছুটা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে। আগের দিনের বড় উত্থানের পর আজ দিনের প্রথমভাগে বাজারে বড় দর পতন হয়। যদিও পরে সূচকের অনেকটা পুনরুদ্ধার ঘটে।
সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন, বিষয়টি না বুঝে বিনিয়োগকারীরা আতঙ্কিত হয়েছেন। বিএসইসির নির্দেশনা দীর্ঘ মেয়াদে বাজারের জন্য সুফল বয়ে আনবে। তাই আতঙ্কিত হওয়া উচিত নয়।
মঙ্গলবার জারি করা বিএসইসির নির্দেশনা অনুসারে, কোনো শেয়ারের দাম এক মাসের মধ্যে ৫০ শতাংশ বা তার বেশি বাড়লে সেটি খতিয়ে দেখতে পারবে ঢাকা ও চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ।
এক মাসের মধ্যে কোনো কোম্পানির শেয়ার লেনদেনের পরিমাণ আগের ছয় মাসের গড় লেনদেনের চেয়ে পাঁচ গুণের বেশি বাড়লে, তালিকাভুক্ত কোম্পানির বার্ষিক বা প্রান্তিক শেয়ারপ্রতি আয় বা ইপিএসে আগের বছরের একই সময়ের চেয়ে ৫০ শতাংশের বেশি ব্যবধান থাকলে, মূল্য সংবেদনশীল তথ্য বা পিএসআই প্রকাশের আগের ১০ কার্যদিবসে কোনো কোম্পানির দাম ও লেনদেন ৩০ শতাংশের কম-বেশি হলে সেগুলো খতিয়ে দেখবে স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ।
এ বিষয়ে মঙ্গলবারই বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক (চলতি দায়িত্ব) ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেছিলেন, বিনিয়োগকারী ও পুঁজিবাজারের স্বার্থে এই নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। এটি মূলত তদন্তের জন্য একটি গাইডলাইন, যাতে কোন পরিস্থিতিতে তদন্ত করা যাবে তা সহজেই স্টক এক্সচেঞ্জ কর্তৃপক্ষ বুঝতে পারে।
তিনি বলেন, বিএসইসি শেয়ারের দাম বেঁধে রাখতে চায় না। বাজারের স্বাভাবিক ধারায় শেয়ারের দাম ৫০ শতাংশের বেশি বাড়লেও কোনো ক্ষতি নেই। কিন্তু দর বৃদ্ধির পেছনে কোনো কারসাজি বা অস্বাভাবিকতা থাকলে ওই দাম টেকসই হবে না। তাতে সাধারণ বিনিয়োগকারীরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে। তাই বিনিয়োগকারীদের স্বার্থে বিএসইসি তদন্তের গাইডলাইন করে দিয়েছে।
এ বিষয়ে বাংলাদেশ মার্চেন্ট ব্যাংক অ্যাসোসিয়েশনের (বিএমবিএ) সভাপতি মোঃ ছায়েদুর রহমান অর্থসূচককে বলেন, বিএসইসির নেওয়া এই ব্যবস্থা (তদন্তের গা্ইডলাইন) নিঃসন্দেহে বাজার ও বিনিয়োগকারীর জন্য কল্যাণকর। আমরা সবাই দীর্ঘদিন ধরে বাজারে স্বচ্ছতা ও সুশাসন চেয়ে আসছি। বিএসইসি এই লক্ষ্যেই কাজ করছে। গতকাল জারি করা নির্দেশনা নিশ্চিতভাবেই বাজারে স্বচ্ছতা ও জবাদিহীতা বাড়াবে। তাই এটি নিয়ে বিনিয়োগকারীদের আতঙ্কিত হওয়া উচিত নয়।
ডিএসই ব্রোকার্স অ্যাসোসিয়শনের (ডিবিএ) সভাপতি শরীফ আনোয়ার হোসেন বলেন, বিএসইসির সর্বশেষ নির্দেশনা বাজারকে আরও মজবুত করবে। গতিশীলতা ধরে রাখতে সহায়ক হবে।