পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত খুলনা প্রিন্টিং এন্ড প্যাকেজিং লিমিটেড (কেপিপিএল) এবং সাউথ বাংলা অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড কমার্স (এসবিএসি) ব্যাংকের চেয়ারম্যান এস এম আমজাদ হোসেন এবং তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে থাকা শেয়ার বিক্রি ও হস্তান্তরে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)।
দুদক ৫ জানুয়ারি বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনের (বিএসইসি) চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলামের কাছে এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ জানিয়েছে।
দুদকের উপপরিচালক গুলশান আনোয়ার প্রধান স্বাক্ষরিত ওই চিঠিতে বলা হয়েছে, দুদক গোপন সূত্রে জানতে পেরেছে, এস এম আমজাদ হোসেন ব্যাংকের শেয়ারসহ অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের শেয়ার বিক্রির চেষ্টা করছেন। এসব অর্থ অবৈধ প্রক্রিয়ায় দেশের বাইরে পাচারের চেষ্টাও করছেন তিনি, যা মানি লন্ডারিং অপরাধ।
আমজাদ হোসেনের বিরুদ্ধে ঋণ জালিয়াতিসহ ব্যাংকের টাকা আত্মসাৎ ও মানি লন্ডারিং বা অর্থ পাচারের অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তাও গুলশান আনোয়ার প্রধান।
সুষ্ঠু অনুসন্ধানের স্বার্থে আমজাদ হোসেন, তাঁর স্ত্রী বেগম সুফিয়া আমজাদ এবং মেয়ে তাজরি আমজাদের নামে থাকা শেয়ার হস্তান্তরপ্রক্রিয়া বন্ধ থাকা দরকার বলেও চিঠিতে বলা হয়। তিনজনের পাসপোর্ট এবং জাতীয় পরিচয়পত্রের (এনআইডি) নম্বরও উল্লেখ করা হয় চিঠিতে।
চিঠিতে আরও বলা হয়, এস এম আমজাদ হোসেনের বিদেশ যাওয়া রহিত করা হয়েছিল আগেই। তিনি তখন বিশেষ প্রয়োজনে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার অনুমতি চেয়েছিলেন। দুদক তাঁকে শুধু একবার বিদেশে যাওয়ার সুযোগ দেয়। কিন্তু আজ পর্যন্ত তিনি দেশে ফিরে আসেননি।
দুদকের পরিচালক প্রণব কুমার ভট্টাচার্য গণমাধ্যমকে বলেন, ‘তদন্তের স্বার্থে দুদক নিজের মতো করে কাজ করছে। আমজাদ হোসেন ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা যাতে তাঁদের নামে থাকা কোনো শেয়ার হস্তান্তর ও বিক্রি করতে না পারেন, সে ব্যাপারে উদ্যোগ নিতে বিএসইসিকে বলা হয়েছে।’
তবে এক বছর আগে ২০২০ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি তিনজনের বিদেশযাত্রায়ও নিষেধাজ্ঞা দিয়েছিল দুদক। পুলিশের বিশেষ শাখার (এসবি) পুলিশ সুপার (ইমিগ্রেশন) বরাবর পাঠানো ওই চিঠিতে তাঁদের বিদেশযাত্রা বন্ধ করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার অনুরোধ জানানো হয়।
ওই চিঠিতেও বলা হয়েছিল, সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে মানি লন্ডারিংসহ বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগ আছে এবং দুদকের অনুসন্ধানে এর প্রাথমিক সত্যতাও পাওয়া গেছে। তাঁরা যাতে দেশ ছেড়ে অন্য দেশে যেতে না পারেন, সে জন্য পুলিশের সহযোগিতা কামনা করা হয় চিঠিতে।
এ বিষয়ে বিএসইসির চেয়ারম্যান শিবলী রুবাইয়াত-উল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ‘দুদকের চিঠি পাওয়ার পরদিন গত বুধবারই ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। এসবিএসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান ও তাঁর পরিবারের সদস্যরা এখন তাঁদের নামে থাকা কোনো শেয়ার বিক্রি বা হস্তান্তর করতে পারবেন না।’
দুদক সূত্রগুলো জানায়, একজন কর্মচারীর নামে; ভাই-ভাতিজা, ভাতিজির মালিকানা দেখিয়ে; এমনকি জামানত ছাড়াও ঋণ নেন তিনি। অভিযোগ রয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র ও ভারতে এসব অর্থের একাংশ পাচার হয়েছে।
কেপিপিএল ও এসবিএসি ব্যাংকের চেয়ারম্যান এস এম আমজাদ হোসেন লকপুর গ্রুপের কর্ণধার। তিনি সংবাদ মাধ্যমকে বলেছেন, ‘আমি কোনো চিঠি পাইনি। ৬৪ বছর বয়সে কোথায় আর যাব? এখানে কোম্পানি আছে, লোকজন কাজ করছেন। এক বছর চার মাস ধরে দেশে আছি। বিদেশে গিয়ে ফিরে আসিনি, এটি অবান্তর তথ্য।’