পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত সামিট পাওয়ার ব্যবসা সম্প্রসারণ করতে গিয়ে ঋণের বোঝা বাড়াচ্ছে। এ কারণে বাড়ছে কোম্পানিটির ঋণের সুদও। ঋণের সুদ বাড়ার কারণে কমছে কোম্পানির নিট মুনাফার অনুপাত (নিট প্রফিট রেশিও)।
কোম্পানি সূত্রে জানা যায়, বিদ্যুৎ বিক্রি করে সামিট পাওয়ার ২০১৮-১৯ আর্থিক বছরে প্রায় তিন হাজার ৪৭ কোটি ১৬ লাখ টাকা আয় করেছে। এর মধ্যে বিদ্যুৎ উৎপাদনে ব্যয় হয়েছে প্রায় দুই হাজার ২৪৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা। ওই ব্যয় মেটানোর পর কোম্পানিটির পরিচালন মুনাফা দাঁড়িয়েছে প্রায় ৭৬৬ কোটি ২০ লাখ টাকা। দেশি-বিদেশি ঋণের সুদ পরিশোধ ও ব্যবস্থপানা ব্যয়সহ অন্য ব্যয় মেটানোর পর কর-পরবর্তী মুনাফা প্রায় ৭২৮ কোটি ২৬ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে।
সমাপ্ত আর্থিক বছরে সামিট পাওয়ারের নিট মুনাফার অনুপাত দাঁড়িয়েছে ২৩ দশমিক ৯০ শতাংশ। এর আগের আর্থিক বছরে কোম্পানিটির মোট আয় ছিল এক হাজার ৮৪৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা। ওই বছরে প্রায় ৫২৭ কোটি ৪০ লাখ টাকা কর-পরবর্তী মুনাফা করেছিল সামিট পাওয়ার। ওই বছরে নিট মুনাফার অনুপাত ছিল ২৮ দশমিক ৫৬ শতাংশ। এ হিসেবে এক বছরের ব্যবধানে সামিট পাওয়ারের নিট মুনাফার অনুপাত চার দশমিক ৬৬ শতাংশীয় পয়েন্ট কমেছে।
আর্থিক প্রতিবেদনের তথ্যমতে, পাঁচ বছর আগে (২০১৪ সালে) সামিট পাওয়ারের নিট মুনাফার অনুপাত ৩৬ দশমিক ৩৪ শতাংশ ছিল। এর পরের বছরে এটি কমে ৩৬ দশমিক শূন্য পাঁচে নামে। পরের দেড় বছরেও (২০১৭ সালের জুনে) পিছিয়ে পড়ার ধারা অব্যাহত ছিল। ওই সময় নিট মুনাফা অনুপাত আগের বছরের চেয়ে অনেক কমে দাঁড়ায় ২৬ দশমিক ৭৫ শতাংশ। পরের আর্থিক বছর অর্থাৎ ২০১৮ সালের জুনশেষে তা এক দশমিক ১৮ শতাংশীয় পয়েন্ট বেড়ে ২৮ দশমিক ৫৬ পয়েন্টে উঠেছিল। যদিও পরের বছরেই পুরোনো ধারায় ফিরে গেছে সামিট পাওয়ার। অর্থাৎ পাঁচ বছরে নিট মুনাফা অনুপাত কমেছে ১২ দশমিক ৪৪ শতাংশীয় পয়েন্ট।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ব্যবসার পরিসরের সঙ্গে সামিট পাওয়ারের দায়ও বাড়ছে। ২০১৪ সাল থেকে পরবর্তী পাঁচ বছরে কোম্পানিটির দায় বেড়েছে ১৯ গুণের বেশি। ২০১৪ সালে কোম্পানিটির দায়ের পরিমাণ ছিল ৬৪ কোটি ২০ লাখ টাকা, যা ২০১৮-১৯ আর্থিক বছর শেষে এক হাজার ২৩৭ কোটি ২০ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ পাঁচ বছরে সামিট পাওয়ারের দায় এক হাজার ১৭৩? কোটি টাকা বেড়েছে।
২০১৮ সালের মে ও জুলাইয়ে উৎপাদনে যাওয়া দুটি বিদ্যুৎকেন্দ্রের বিপরীতে নেওয়া বিদেশি ঋণের কারণে সামিটের দায় উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। এ কারণে দেশি-বিদেশি ঋণের কিস্তি পরিশোধে ব্যয় বাড়ছে। ২০১৪ সালে এ খাতে প্রায় ৪১ কোটি ৬০ লাখ টাকা ব্যয় করেছিল সামিট পাওয়ার। সর্বশেষ ২০১৮-১৯ আর্থিক বছর শেষে ঋণের সুদ-কিস্তি পরিশোধের ব্যয় প্রায় ১৫২ কোটি ৫০ লাখ টাকায় দাঁড়িয়েছে।
দায় বৃদ্ধিসহ গুরুত্বপূর্ণ সূচক বিবেচনায় পিছিয়ে পড়ার কারণ সম্পর্কে সামিট পাওয়ারের কোম্পানি সচিব স্বপন কুমার পাল বলেন, ‘২০১৮ সালের মে ও জুলাই মাসে গাজীপুরে সামিট পাওয়ারের নতুন দুটি ইউনিট স্থাপন করা হয়েছে। ওই দুটি বড় ইউনিট স্থাপনের জন্য বড় বিনিয়োগ করতে হয়েছে। যেখানে ইক্যুইটি ২৫ শতাংশ আর বাকি ৭৫ শতাংশ বিদেশি ঋণ। এ কারণে দায় বেড়েছে, তবে এ অবস্থা সাময়িক। বড় বিনিয়োগের সুফল এলে দীর্ঘমেয়াদে ভালো প্রভাব পড়বে।’
এদিকে সামিট পাওয়ারের দায়-মূলধন অনুপাতও বাড়ছে। ২০১৪ সালে কোম্পানিটির এ হার ছিল ১৩ দশমিক ৫২ শতাংশ, যা ২০১৯ সালের জুন শেষে ৬৭ দশমিক ৬০ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ গত পাঁচ বছরে কোম্পানিটির দায়-মূলধন অনুপাত প্রায় ৫৪ দশমিক শূন্য আট শতাংশীয় পয়েন্ট বেড়েছে। কিন্তু ওই দায় বৃদ্ধির সুফল আয়-মুনাফায় দৃশ্যমান হয়নি।
উল্লেখ্য, ২০০৫ সালে পুঁজিবাজারে আসা সামিট গ্রুপের কোম্পানিটির পরিশোধিত মূলধন প্রায় এক হাজার ৬৭ কোটি ৮০ লাখ টাকা ছাড়িয়েছে। শীর্ষস্থানীয় কোম্পানিটির ১০৬ কোটি ৭৮ লাখ শেয়ারের মধ্যে ৬৩ দশমিক ১৮ শতাংশ উদ্যোক্তা ও পরিচালকদের হাতে রয়েছে। এর বাইরে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে ২১ দশমিক ৭৪ শতাংশ, বিদেশি বিনিয়োগকারীদের হাতে তিন দশমিক ৬৫ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে ১১ দশমিক ৪৩ শতাংশ শেয়ার রয়েছে। গতকাল ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে (ডিএসই) সামিট পাওয়ারের প্রতিটি শেয়ার সর্বশেষ ৩৭ টাকা ৮০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে।
শেয়ারবাজার/মিজান