২০২০ সালের শুরুটা পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীদের জন্যে মোটেও ভালো ছিল না। অস্থির বাজারকে ভালো করতে সরকার ও সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলো নানা ধরনের পদক্ষেপ গ্রহন করে। সব তৎপরতা ব্যর্থ করে দিয়ে দরপতনের প্রহসনই চলছিল পুঁজিবাজারে। অনিয়ম ও কারসাজির কারণে সর্বস্ব হারিয়েছেন অনেক বিনিয়োগকারী। তারা রাস্তায় নেমে প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করেন।
করোনার বিরূপ প্রভাব কাটিয়ে জুন থেকেই ইতিবাচক ধারায় ফিরে আসে। এর আগে, মে মাসের মাঝামাঝি নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি পুনর্গঠন করা হয়। আর নতুন কমিশনের বেশ কিছু সংস্কারমূলক উদ্যোগ আশার সঞ্চার করে বাজারে। বাড়তে থাকে সূচক ও বাজারমূলধন। উত্থান-পতন দিয়ে ২০২০ সালের শেষ পর্যন্ত পুঁজিবাজার বিনিয়োগকারীদের আস্থার জায়গা ধরে রাখতে পেরেছে। যার কারণে ২০২১ সাল নিয়ে আশার আলো দেখছেন বিনিয়োগকারীরা।
দেশের পুঁজিবাজারে মন্দাভাব ছিল ২০১৯ সাল জুড়েই। বছরের শেষ দিকে চীনে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়। এরপর মহামারী আকারে ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বজুড়ে। এর প্রভাবে ২০২০ সালের শুরু থেকেই নিম্নমুখী ছিল দেশের পুঁজিবাজার।
গত বছরের ২৯ মার্চ করোনার সংক্রমণের কারণে বন্ধ করে দেয়া হয় দেশের পুঁজিবাজার। টানা ৬৬ দিন আটকে যায় বিনিয়োগ করা অর্থ। ৩১ মে আবার লেনদেন শুরু হয়। তবে পতন ঠেকাতে বেঁধে দেয়া হয় শেয়ারের সর্বনিম্ন দাম। এতে তাৎক্ষণিকভাবে বাজার চাঙা হলেও দৈনিক লেনদেন একশ’ কোটি টাকার নিচে নেমে যায়।
এর আগে মে মাসের মাঝামাঝি অধ্যাপক শিবলী রাবাইয়াত-উল-ইসলামকে চেয়ারম্যান করে পুনর্গঠন করা হয় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি।
দায়িত্ব নিয়েই অনিয়মের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নেয় নতুন কমিশন। উদ্যোক্তা-পরিচালকদের এককভাবে নূন্যতম দুই শতাংশ এবং সম্মিলিতভাবে ৩০ শতাংশ শেয়ার ধারণ সংক্রান্ত আইনের কঠোর বাস্তবায়ন, জেড ক্যাটাগরির প্রতিষ্ঠানসমূহের পুনর্গঠনের উদ্যোগ বিনিয়োগকারীসহ বাজার সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের প্রশংসা কুড়ায়। ফলে বাজারের সূচক ও লেনদেনে চাঙ্গাভাব ফিরে আসে।
বিদায়ী বছরে ১৭টি প্রতিষ্ঠানের আইপিও, ১৮টি বন্ড এবং ২টি রাইট শেয়ারের অনুমোদন দেয় বিএসইসি। এতে পুঁজিবাজার থেকে অর্থায়ন হয় ৯ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা। পাশাপাশি রবি, ওয়ালটনের মতো শক্ত আর্থিক ভিত্তির প্রতিষ্ঠান বাজারে আসে। এসব প্রতিষ্ঠানের আইপিও পেতে প্রায় দুই লাখ নতুন বিও অ্যাকাউন্ট খোলা হয় ২০২০ সালে।
সবচেয়ে উল্লেখযোগ্য পরিবর্তন আসে পুঁজিবাজারের সূচক ও লেনদেনে। ২০১৯ সালের শেষ কর্মদিবসের ডিএসইর প্রধান সূচক ডিএসই এক্স ছিল ৪ হাজার ৪৫৩ পয়েন্ট। আর মোট লেনদেন ছিল ৩১৮ কোটি টাকা। এ বছর ২৯ ডিসেম্বরে সেই ডিএসই এক্স বেড়ে দাঁড়ায় ৫ হাজার ৩৫৮ পয়েন্টে, আর শেয়ার ও মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মোট লেনদেন হয় ১ হাজার ৩৮৩ কোটি টাকা। ওই দিন ডিএসইর বাজার মূলধন ৪ লাখ ৪৪ হাজার ২০৩ কোটি ৬১ লাখ ৬৮ হাজার টাকা পৌঁছায়। যা এযাবতকালের মধ্যে সর্বোচ্চ।
বাজার সংশ্লিষ্টদের আশা, অর্থনীতির অগ্রযাত্রার সাথে তাল মিলিয়ে আগামী ২০২১ সালে পুঁজিবাজারও বড় অবদান রাখতে সক্ষম হবে।