1. [email protected] : শেয়ারবার্তা প্রতিবেদক : শেয়ারবার্তা প্রতিবেদক
  2. [email protected] : শেয়ারবার্তা : nayan শেয়ারবার্তা
  3. [email protected] : news uploder : news uploder
করোনা অর্থনীতির ভাগবাটোয়ারা ঠেকাতে হবে
রবিবার, ২৪ নভেম্বর ২০২৪, ০৭:৫৬ পিএম

করোনা অর্থনীতির ভাগবাটোয়ারা ঠেকাতে হবে

  • আপডেট সময় : শনিবার, ২ জানুয়ারী, ২০২১

ইংরেজ কবি বর্ষবিদায়কালে নববর্ষকে স্বাগত জানিয়ে লিখেছেন, ‘রিং আউট দ্য ওল্ড, রিং ইন দ্য নিউ’ ভাবানুবাদ করলে দাঁড়াবে, ‘যা গেছে তা যাক, আগত বছরকে স্বাগত!’ ২০২০ সালকে আমরা বিদায় জানিয়েছি। স্বাগত জানাচ্ছি ২০২১-কে। অতীতের দুঃখ-কষ্ট-গ্লানি মুছে ফেলে সম্ভাবনার দুয়ার খুলেছে নতুন খ্রিষ্টবর্ষ। বাস্তবে কী ঘটবে, তা আমরা জানি না। বিদায়ী বছরটি ছিল দুঃখভরা। দুঃখের মূলে ছিল করোনার মহামারি। দুঃখের ব্যাপ্তি ছিল সাধারণ মানুষের আর্থিক দুরবস্থা। দুঃখে যাদের জীবন গড়া, তাদের আবার দুঃখ কিসের- সে কথা তো ঠিক। কিন্তু করোনা-পূর্ব অভাব-অনটন বছরব্যাপী বৃদ্ধি পেয়ে সাধারণ মানুষকে সম্বলহীন করে তুলেছে। করোনা-পূর্বকালে বাংলাদেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ২০%।
আন্তর্জাতিক গবেষণা সংস্থার সমীক্ষায় এই হার বিদায়ী বছরের অক্টোবর অন্তে এসে দাঁড়িয়েছে ৩৯%। জাতিসংঘের সহসংস্থার হিসাবেও এর সত্যতা মেলে। দারিদ্র্যের হার দ্বিগুণ হয়েছে করোনার আঘাতে। সরকার সব সময় জিডিপির হার নিয়ে অর্থনীতিতে স্বস্তির কথা বলে। এই স্বস্তি জনসাধারণের স্বস্তি নয়, বরং নাগরিকদের শতকরা মাত্র পাঁচ ভাগ মানুষের উল্লম্ম্ফন। শতকরা ৫% মানুষের উল্লম্ম্ফনে নাভিশ্বাস উঠেছে শতকরা ৯৫% নাগরিকের। একে দেশের বা জনগণের উন্নয়ন বলা যায় না। সব নাগরিকই সংবিধান মতে রাষ্ট্রের মালিক। সেখানে অধিকাংশ নাগরিককে দারিদ্র্য এবং চরম বৈষম্যের শিকার বানিয়ে এবং গুটিকয়েক পরিবারকে ধনিক বানিয়ে শোষক শ্রেণিতে রূপান্তরিত করা উন্নয়নের পরিচায়ক নয়। বাংলাদেশ সরকারের প্রকাশিত পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০১৮ সালে আয়বৈষম্য নির্ধারক জিনি সহগ ছিল .৪৮৫ (দশমিক চার আট পাঁচ)। উল্লেখ্য, সহনযোগ্য আয়বৈষম্যের দেশে জিনি সহগ রয়েছে .৩ থেকে .৩৫ পর্যন্ত। সুইডেন, ডেনমার্ক, নরওয়েসহ বেশ কয়েকটি ইউরোপীয় দেশ এর উদাহরণ। বলাই যায়, আয়বৈষম্যের বিচারে জিনি সহগ দশমিক পাঁচের কাছাকাছি পৌঁছেছে। বাংলাদেশ এখন বিশ্বের চরম বৈষম্যের অল্প কয়েকটি দেশের অন্যতম এবং এতদঞ্চলে সর্বাধিক বৈষম্যের দেশ। দারিদ্র্যের হার প্রায় দ্বিগুণ হওয়ার জন্য, ২০২০ সালেই আয়বৈষম্য দশমিক পাঁচ অতিক্রম করেছে বলে ধারণা করা যায়। কষ্টদায়ক চমকপ্রদ খবর বেরিয়েছিল ২০১৯ সালে। সারাবিশ্বে বিলিওনিয়ার ব্যক্তির সংখ্যা বৃদ্ধির হার বাংলাদেশে সর্বাধিক। দ্বিতীয় স্থানে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আর তৃতীয় স্থানে চীন। সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের পেটে লাথি মেরে শতকরা পাঁচজনকে সম্পদশালী করে তাদের ক্ষমতার খলনায়ক বানানোর নাম কি উন্নয়ন? ২০১৮ সালের পর থেকে দেশের রাজনৈতিক সরকারকে শিখণ্ডি রেখে অর্থনৈতিক সুবিধা ক্রমাগত কেড়ে নিচ্ছে এই নব্য দুষ্ট চক্র। করোনার সাবসিডাইজড ঋণ প্রধানত তারাই ভাগযোগ করে নিয়েছে মর্মে সম্প্রতি সংবাদপত্রে রিপোর্ট বেরিয়েছে। এ সহায়তা ছোটদের জন্য বরাদ্দ থাকলেও কপাল খুলছে না। (ক) ২% ডাউন পেমেন্ট দিয়ে ব্যাংকের কুঋণকে সুঋণে পরিণত করা, (খ) সুদের হার নয়ছয় করা, (গ) করোনার দোহাই দিয়ে ২০২০ সালের শেষ পর্যন্ত ঋণ শ্রেণিবিন্যাস ঠেকিয়ে রাখা, (ঘ) একই পরিবার থেকে দু’জনের স্থলে চারজন ব্যাংক পরিচালক নিয়োগের আইন করা, (ঙ) ওই আইন পাস করার পরও একটি ব্যাংকে একই পরিবার থেকে চারজনের অধিক পরিচালক থাকা সত্ত্বেও ব্যবস্থা গ্রহণ না করাসহ ইত্যাকার আরও অনেক কাজ করিয়ে ধনিক গোষ্ঠীটি তাদের আধিপত্য বর্ধন করে চলেছে। এসব গণবিরোধী কাজকর্মে রাজনৈতিক সরকার কি অসহায়? বিষয়টি ২০২১ সালে জনসাধারণ্যে পরিস্কার হতে শুরু করবে।
ফিরে আসা যাক করোনার আলোচনায়। চোখে দেখা যায় না, এমন ছোট্ট একটা পোকা, সৃষ্টির সেরা মানবজাতিকে যেভাবে বোকা বানিয়ে রেখেছে, তা অনুধাবনযোগ্য। শাসকবর্গ এবং পণ্ডিত ব্যক্তিবর্গের ধ্যান-ধারণা ডঐঙ বা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থাকে ঘিরে। হু বলেছে, ‘মাস্কেই সমাধান’। বাংলাদেশে বিজ্ঞজনও সমস্বরে বলছে আলবৎ। চোখের সামনে আমরা দেখলাম মাস্ক পরানোর প্রাণান্ত অভিযান। জরিমানা হলো, জেল হলো। আরও কঠোর হওয়ার কথাবার্তাও শোনা গেল। কিন্তু জনগণের নাক-মুখ ঢাকা গেল না। হাঁ মাস্ক বিক্রি বেড়েছে। লোকে পুলিশের ভয়ে কিনে পকেটে রেখে দেয়। মানুষ এখন দু’ভাগে বিভক্ত। উচ্চ শ্রেণি একটির ওপর আরেকটি মাস্ক পরছেন। স্বেচ্ছাবন্দির মতো ঘরে থাকছেন। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখছেন। সাধারণ মানুষ এসবের ধার ধারেন না। তারা মাস্ক পরেন না। দূরত্বের পরিবর্তে নৈকট্য বজায় রাখে। ঘরে বসে থাকলে খাওয়াবে কে? তাই সারাদিন কাজে নিয়োজিত। করোনার আধিক্য উচ্চ শ্রেণির মাঝে। বস্তিতে করোনা নেই। ক্ষেত-খামারে করোনা নেই। হাটবাজারে করোনা নেই। ব্যাপারটা কী? মূল ব্যাপারটা হলো ‘ইমিউনিটি’ বা করোনা প্রতিরোধক শক্তি। খেটে খাওয়া মানুষের রোগ প্রতিরোধক ক্ষমতা বেশি। উচ্চ শ্রেণির মানুষের শরীরে মেদ আধিক্য থাকতে পারে; প্রতিরোধক শক্তি কম। আয়েশি উচ্চ শ্রেণির মানুষের শরীরে করোনা একবার ঢুকতে পারলে, তাকে নাজেহাল করে ছাড়ে। খেটে খাওয়া মানুষের শরীরে করোনা ঢুকলে, জীবাণুটি হজম হয়ে নিঃশেষ হয়ে যায়।
পরিসংখ্যান দিয়ে কথা বলা যাক। বিশ্বের শ্রেষ্ঠ ধনী মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র। অর্থাভাব নেই। খাদ্যাভাব নেই। পরিশ্রমের কাজগুলো অভিবাসীরা করে। মার্কিনিরা করে আয়েশের কাজ। তাছাড়া আরাম-আয়েশের সব ব্যবস্থাই সেখানে রয়েছে। করোনার আক্রমণ সেখানেই শীর্ষে। করোনা তাদের ধরছে আর মারছে। আক্রান্ত হচ্ছে অনেক। আক্রান্তের মধ্যে শতকরা ১০-১২ জনের মৃত্যু ঘটছে। তুলনা করুন গরিব বাংলাদেশের সঙ্গে। আক্রান্তও কম, মৃত্যু আরও কম। যুক্তরাষ্ট্রের ১২% মৃত্যুর বিপরীতে বাংলাদেশে মৃত্যুর হার আক্রান্তের ১.৪৩%। অর্থাৎ দেড় জনেরও কম।
তাহলে সরকার ও উচ্চমহল সেকেন্ড ওয়েভ বা দ্বিতীয় ঢেউয়ের কথা উচ্চ স্বরে বলছেন কেন? কারণ তারা জনবিচ্ছিন্ন। তারা বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কথা শুনছে এবং বেদবাক্য মনে করছে। দৃষ্টিটা বাংলাদেশের প্রতি ফেরান। জনগণের দিকে তাকান। ডিসেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে এই লেখাটা লিখেছি। এরই মধ্যে দুটি স্বল্পকালীন শৈত্যপ্রবাহ প্রবাহিত হয়েছে। করোনার সেকেন্ড ওয়েভের বিন্দুমাত্র চিহ্ন কোথাও নেই। এই সপ্তাহে প্রতিদিন আক্রান্তের হার কমছে। মৃত্যুহার নিম্ন পর্যায়ে। আক্রান্তের হার দিনে হাজারের নিচে নেমে গেছে। উচ্চ মহল এখন বলছেন, নতুন বছরের জানুয়ারির শেষে বা ফেব্রুয়ারির প্রথমে দ্বিতীয় ঢেউ আসবে। প্রথমে ভাবলাম, কোনো জ্যোতির্বিদ বলেছেন নাকি? খুঁজতে খুঁজতে পেয়ে গেলাম। জ্যোতির্বিদ নন। ভবিষ্যদ্বাণীটি করেছে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা। ইউরোপ- আমেরিকা স্টাডি করেই হয়তো কথা বলেছেন। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার কথা অমৃত সমান। আমাদের বিজ্ঞজনেরা সেকথাই আওড়ালেন। সেকেন্ড ওয়েভ আসবে না, এমন কথা তো বলতে পারি না। তবে তেমন কোনো আলামত নেই। আলামত রয়েছে করোনা সংকোচনের। সাবধানতা ভালো। কিন্তু অহেতুক ভীতি ছড়ানো নিষ্প্রয়োজন।
মান্যজনেরা কিন্তু অহেতুক কথা বলেননি। হেতু আছে বৈকি! তবে হেতুটা করোনা নয়। করোনার জুজু দেখিয়ে আবার কিছু টাকা হাতিয়ে নেওয়া যায় কিনা। এটি হলো করোনার অর্থনীতি! করোনার দ্বিতীয় ঢেউয়ের ‘আশঙ্কা ‘ প্রকাশ করে আবার কিছু অর্থের বরাদ্দ রাখার কথা বলা হচ্ছে। প্রথম বরাদ্দের টাকার সিংহভাগ যে শীর্ষ চক্রটি পেয়েছে, তারাই তাথাকথিত দ্বিতীয় ঢেউয়ের প্রলাপ বকে দ্বিতীয় ধাপের বরাদ্দটি করিয়ে নিতে চাইছেন। সরকারের ভেতরের সরকার তো তারাই। পেরেও যেতে পারে। একবার বরাদ্দটা করাতে পারলে, সেকেন্ড ওয়েভ আসুক আর না আসুক, টাকার ভাগ-বাটোয়ারা করে ফেলা যাবে।
করোনার অর্থনীতির ভাগ-বাটোয়ারার দিকটা তুলে ধরা হলো। এটি ঠেকানো প্রয়োজন। এনাফ ইজ এনাফ! ভাগ-বাটোয়ারা বন্ধ করে নজর দিতে হবে যারা নিঃস্ব হয়েছে, তাদের পুনরুদ্ধারে। করোনার আগে নিঃস্ব ছিল ২০% নাগরিক। বছর শেষে নিঃস্বের সংখ্যা ৩৯%-এ দাঁড়িয়েছে। অর্থাৎ শুধু করোনার কারণে ১৯% মানুষ নিঃস্ব হয়েছে। এরাই প্রকৃত ক্ষতিগ্রস্ত। এই ১৯% নিঃস্ব মানুষের জন্য বরাদ্দ রাখতে হবে নতুন বছরে। সেই সঙ্গে পূর্বেকার ২০% দরিদ্র এখন হতদরিদ্রে পরিণত হয়েছে। তাদের অতিদারিদ্র্যের অবস্থা থেকে মুক্ত করতে হবে।

২০২১ সালে ২০% নাগরিককে অতিদারিদ্র্যের কশাঘাত থেকে মুক্ত করা এবং আরও ১৯% নাগরিকের দারিদ্র্য অবস্থা থেকে উদ্ধার করার নীতিগত অবস্থান হবে করোনার অর্থনীতি। বাস্তবায়নের কর্মকাণ্ড হবে ২০২১ সালের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড। তবে বছরের প্রথমেই নিয়ত ঠিক করতে হবে। সরকারের লক্ষ্য কি কমবেশি ৪০% নাগরিকের দিকে থাকবে, নাকি ধনী চক্রের ৫% ভাগ্যবানের মেদ বৃদ্ধির দিকে থাকবে। সরকার দোদুল্যমান থাকবে, নাকি জনস্বার্থে লক্ষ্য নির্দিষ্ট করতে পারবে, এর ওপর নির্ভর করবে নতুন বছরের করোনার অর্থনীতি।
করোনার কল্যাণে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শীর্ষ ধনীদের ধনসম্পদ বৃদ্ধি পেয়েছে। দরিদ্র আরও দরিদ্র হয়েছে। এই হলো ক্রনিক্যাপিটালিজম বা চরম পুঁজিবাদের ফসল। বাংলাদেশ তো বঙ্গবন্ধুর ‘কল্যাণ অর্থনীতি’ বিসর্জন দিয়ে এখন চরম পুঁজিবাদের পূজারি সেজেছে। এখানেও করোনার কল্যাণে শীর্ষ ধনীরা আরও ধনবান হচ্ছেন এবং হবেন। কঙ্কালসার হতে থাকবেন দরিদ্রগোষ্ঠী। সরকার কি নতুন বছরে ধনিক শ্রেণিকে আরও সুবিধাদি প্রদান থেকে বিরত থেকে জনগণের পাশে দাঁড়াতে সক্ষম হবে? প্রশ্নবোধক চিহ্নটাই থাকুক। নতুন বছরের প্রতিটি দিন এ প্রশ্নের জবাব দিয়ে যাবে। সূত্র: দৈনিক সমকাল

খোন্দকার ইব্রাহিম খালেদ

ফেসবুকের মাধ্যমে আপনার মতামত জানান:

ভালো লাগলে শেয়ার করবেন...

এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ