বিনিয়োগকারীদের হাহাকার আর দীর্ঘশ্বাস নিয়ে বছরটি শুরুই হয়েছিল। সূচক কমছিল ধারাবাহিকভাবে। শেয়ারের দাম নেমে এসেছিল তলানিতে। এক কাপ চায়ের দামের চেয়েও সস্তায় পাওয়া যেত অনেক কোম্পানির শেয়ার। পুঁজি হারিয়ে নি:স্ব বিনিয়োগকারীদের নামতে হয় রাস্তায়। পতন ঠেকাতে বেঁধে দেওয়া হলো শেয়ারের সর্বনিম্ন মূল্যস্তর বা ফ্লোরপ্রাইস।
এরপর করোনার হানায় ৬৬ দিন লেনদেন বন্ধ। পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) পুনর্গঠন। বিনিয়োগকারীদের আস্থা ফেরাতে বেশ কিছু পদক্ষেপ নেয় সরকার ও পুনর্গঠিত কমিশন। তাতে বছরের শেষ ভাগে এসে চাঙ্গা পুঁজিবাজার। করোনার বছরটি দুশ্চিন্তা ও দীর্ঘশ্বাস নিয়ে শুরু করেছিলেন পুঁজিবাজারের বিনিয়োগকারীরা, শেষটা ছিল ফুরফুরে মেজাজের।
দীর্ঘশ্বাস থেকে ফুরফুরে মেজাজে ফেরার এই পরিক্রমায় বড় ভূমিকা রেখেছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসির নেতৃত্ব বদল। করোনার কারণে পুঁজিবাজার বন্ধের মধ্যেই মে মাসে বিএসইসি পুনর্গঠন হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত উল ইসলামের নেতৃত্বে। এর আগে নেতৃত্বে ছিলেন একই বিশ্ববিদ্যালয়ের এম খাইরুল হোসেন।আইন লঙ্ঘন করে টানা মেয়াদে প্রায় ১০ বছর বিএসইসির চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তিনি তাঁর সময়ে সবচেয়ে খারাপ অবস্থায় ছিল পুঁজিবাজার। নিয়ন্ত্রক সংস্থার ওপরই ছিল বিনিয়োগকারীদের সবচেয়ে বেশি অনাস্থা। তাই বিএসইসির নেতৃত্ব বদলেই যেন স্বস্তি ফিরে পান বিনিয়োগকারীরা। যার প্রতিফলনও দেখা যায় বাজারে।
খাইরুল হোসেনের নেতৃত্বাধীন কমিশন পুঁজিবাজারের পতন ঠেকাতে শেয়ারের সর্বনিম্ন মূল্যস্তর বেঁধে দেয় ১৯ মার্চ।ওই মাসেই প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় দেশে। তখনও কেউ ভাবতে পারেননি ২০২০ সালে এসে পুঁজিবাজার ৬৬ দিনের জন্য বন্ধ হয়ে যাবে। করোনায় সাধারণ ছুটির মধ্যে ব্যাংক খোলা থাকলেও বন্ধ ছিল কেবল পুঁজিবাজার।বিশ্বের কোনো পুঁজিবাজার এ করোনা সংকটে এত দীর্ঘ সময় লেনদেনবিহীন ছিল না। ফলে সেদিক থেকে বিশ্ব পুঁজিবাজারে নতুন করে ইতিহাস তৈরি করল বাংলাদেশ।
নতুন কমিশন দায়িত্ব নেয় মে মাসের মাঝামাঝি সময়ে। ৩১ মে থেকে পুনরায় চালু হয় বন্ধ পুঁজিবাজারের লেনদেন। ওইদিনই অর্ধশত পয়েন্ট সূচক বাড়ে প্রধান পুঁজিবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জে(ডিএসই)। তবে লেনদেন ছিল একেবারে তলানিতে। মাত্র ১৪৩ কোটি টাকার লেনদেন হয়। ওই সময় ডিএসইর প্রধান সূচকটি ছিল ৪ হাজার পয়েন্টের ঘরে। এরপর জুনে ২০১৯–২০ অর্থবছর শেষ হয়। জুলাই থেকে শুরু হয় নতুন অর্থবছর। পুঁজিবাজার চাঙা করতে কালোটাকা বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হয়।সরকারের পাশাপাশি বিএসইসির পক্ষ থেকেও বেশ কিছু পদক্ষেপ নেওয়া হয়। তার আগে এপ্রিল থেকে ব্যাংকের আমানতের সুদ হার কমে নেমে আসে ৫ শতাংশের নিচে। যার ফলে ব্যাংকের বদলে বিকল্প সঞ্চয়ের পথ হিসেবে বেশি মুনাফার আশায় অনেকে পুঁজিবাজারমুখী হন। এসব পদক্ষেপের ইতিবাচক প্রতিফলন দেখা যায় বাজারে। তাতে জুলাইয়ের প্রথম ভাগ থেকে বাজারে একটু একটু করে গতিসঞ্চার হয়। আর বছরের শেষ ভাগে এসে বেশ চাঙ্গাভাব দেখা যায় বাজারে।
৪ হাজার পয়েন্টের নিচে নেমে যাওয়া ডিএসইর প্রধান সূচকটি সাত মাসের ব্যবধানে বেড়েছে ১ হাজার ৩০০ পয়েন্ট বা ৩০ শতাংশের বেশি। আর ১৫০ কোটির নিচে নেমে যাওয়া লেনদেন ছাড়িয়েছে দেড় হাজার কোটি টাকা। এর মধ্যে বছরের একবারে শেষে এসে গত ২৪ ডিসেম্বর থেকে পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরু হয় দেশের দ্বিতীয় রবি আজিয়াটার। ২০০৯ সালে গ্রামীণফোনের তালিকাভুক্তির প্রায় এক যুগ পর এসে এ বহুজাতিক কোম্পানিটি যুক্ত হয় পুঁজিবাজারে।