প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসের শুরুতে খুবই নাজুক অবস্থায় ছিল পুঁজিবাজার। এ সময় বিনিয়োগকারী শূন্য হওয়ার পাশাপাশি লেনদেনে খরা দেখা যায়। একযোগে কমতে থাকে সব ধরনের কোম্পানির শেয়ারদর। মূল মার্কেটে লেনদেন নেমে আসে ৪০ কোটির টাকার নিচে। করোনার ভয়াল তাণ্ডব ঠেকাতে তখন অন্যান্য প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে পুঁজিবাজার ৬৬ দিন বন্ধ থাকে। পরবর্তী সময়ে ৩১ মে আবারও লেনদেন চালু হয়। এরপরই লেনদেনের পাশাপাশি সূচক বাড়তে থাকে।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, করোনা মহামারির সময়ে (জুন থেকে) ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই) থেকে সরকারের রাজস্ব আদায় হয়েছে ১১৬ কোটি টাকা। অর্থাৎ প্রতি মাসে গড়ে রাজস্ব আদায় হয়েছে ১৯ কোটি টাকার বেশি। চলতি বছরের জুন থেকে নভেম্বর পর্যন্ত ৬ মাসে সরকারের রাজস্ব আদায় হয়েছে।
ডিএসই সূত্র জানায়, চলতি ২০২০ সালের করোনাকালীন (জুন থেকে নভেম্বর) এই ছয় মাসে বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ার ও ইউনিট লেনদেন থেকে ৮৬ কোটি টাকা এবং উদ্যোক্তা পরিচালক বা প্লেসমেন্ট শেয়ার বিক্রি থেকে ৩০ কোটি টাকার বেশি রাজস্ব আদায় হয়।
পুঁজিবাজার বিশ্লেষকদের মতে, দীর্ঘ ৯ বছর পর চলতি বছরের মে মাসে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশনে (বিএসইসি) পরিবর্তন আসার পর বাজার ঘুরে দাঁড়িয়েছে। কারণ আগের কমিশন অনেকগুলো দুর্বল কোম্পানির অনুমোদন দিয়ে বিতর্কের মুখে পড়েন। যে কারণে বাজারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ কমে যায়।
অন্যদিকে বিএসইসির নতুন চেয়ারম্যান দায়িত্ব নেয়ার পর ভালো কিছু কোম্পানির আইপিও অনুমোদন, দুর্বল কোম্পানির আইপিও আবেদন বাতিলসহ বেশকিছু পদক্ষেপ নেয়া হয়। ফলে বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আস্থা ফিরতে শুরু করে। এতে পুঁজিবাজারে আর্থিক ও শেয়ার লেনদেন বেড়ে যায়। লেনদেন বেড়ে যাওয়ায় সরকারের রাজস্ব আদায়ও বেড়ে যায়।
এ ব্যাপারে ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, এখন বাজার ভালো। বিএসইসির নেয়া কিছু সিদ্ধান্তের কারণে বাজারের এ পরিস্থিতি হয়েছে। এখানে নতুন বিনিয়োগকারী আসছেন। অন্যদিকে ধারাবাহিক স্থিতিশীলতার কারণে বাড়ছে লেনদেন, যার জের ধরে রাজস্ব আদায় বাড়ছে।
তিনি বলেন, ডিএসইর লেনদেন আগে যেখানে ২০০ থেকে ৩০০ কোটি টাকা হতো, বর্তমানে তা হাজার কোটি টাকা ছাড়াচ্ছে। লেনদেন বেড়ে যাওয়ায় এ খাত থেকে সরকারের রাজস্বও বাড়ছে। এটা পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্ট সবার জন্য ভালো।
উল্লেখ্য, বর্তমানে পুঁজিবাজার থেকে সরকার দুই ধরনের রাজস্ব আদায় করে থাকে। প্রথমটি হচ্ছেÑস্টক এক্সচেঞ্জে লেনদেনের ওপর উৎসে আয়কর বাবদ রাজস্ব আদায়। অন্যটি হলোÑপরিচালক, উদ্যোক্তা শেয়ারহোল্ডার ও প্লেসমেন্ট শেয়ারহোল্ডারধারীদের শেয়ার বিক্রি বাবদ মূলধনি মুনাফা থেকে রাজস্ব আদায় করা হয়। তবে গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের রোগী শনাক্ত হওয়ার পর মার্চ মাসের শেষ সপ্তাহ থেকে মে মাস পর্যন্ত পুঁজিবাজারে লেনদেন বন্ধ ছিল। ফলে গত এপ্রিল ও মে মাসে পুঁজিবাজার থেকে কোনো রাজস্ব আদায় হয়নি। গত জুন থেকে পুঁজিবাজারে রাজস্ব আদায় বাড়তে শুরু করে। এ ধারা অব্যাহত থাকলে আগামীতে রাজস্ব আদায় আরও বাড়বে বলে মনে করেন পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্টরা।