সহজ হচ্ছে বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব খোলার পদ্ধতি। ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে সহজে বিও হিসাব খেলার উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এ পদ্ধতিতে বিও হিসাব খোলার মাধ্যমে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়বে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, বিনিয়োগকারীরা যাতে সহজে বিও হিসাব খোলতে পারেন, সে বিষয়ে সম্প্রতি নির্দেশনা দেয় বিএসইসির চেয়ারম্যান অধ্যাপক শিবলী রুবাইয়াত-উল-ইসলাম। এরপর দ্রুত এ বিষয়ে কাজ শুরু করে কমিশন। ইতিমধ্যে ট্রেকহোল্ডারদের সঙ্গে একাধিক বৈঠক হয়েছে। বৈঠকে বিএসইসির কমিশনার ড. শেখ সামসুদ্দিন আহমেদের সভাপতিত্বে সেন্ট্রাল ডিপজিটরি বাংলাদেশ লিমিটেড (সিডিবিএল), ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই), চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই) এবং বিএসইসির কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। সেখানে অনলাইনে বিও হিসাব খোলার সুবিধা অসুবিধা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়। একই সঙ্গে যেসব অসুবিধার কথা আলোচনায় উঠেছে সেগুলো কিভাবে সমাধান করে বিনিয়োগকারীদের সহজে বিও হিসাব খোলার ব্যবস্থা করা যায় তা নিয়ে কাজ করছে কমিশন।
বিএসইসির তথ্যমতে, বিদ্যমান ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে বিও হিসাব খোলতে বিশাল কয়েক পৃষ্ঠার ফরম পূরণ করতে হয়। এক সঙ্গে অনেকগুলো সাপোর্টিং ডকুমেন্টে দিতে হয়। তাই কেন্দ্রীয়ভাবে সিডিবিএল অনলাইনে বিও হিসাব খোলার বিষয়টি দেখভাল করার দায়িত্ব নিতে পারে। তাদের ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে বিনিয়োগকারীরা তাদের পছন্দমতো ডিপজিটরি পার্টিসিপেন্ট (ডিপি) সিলেক্ট করতে পারবেন। এরপর প্রয়োজনীয় সাধারণ তথ্য অনলাইনে পূরণ করবেন। সেখানে জাতীয় পরিচয়পত্র ইনপুট দেওয়ার ব্যবস্থা থাকবে। আর জাতীয় পরিচয়পত্র ইনপুট দিলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে বেশকিছু তথ্য আপডেট হয়ে যাবে। পরবর্তীতে ব্যাংকিং তথ্য দিতে হবে এবং সব ঠিক থাকলে বিনিয়োগকারীরা একটা কনফার্মেশন মেসেজ পাবেন। অর্থাৎ বিনিয়োগকারীরা যা ম্যানুয়েলি পূরণ করতো তা অনলাইনে অটোমেটিক ফিলাপ হয়ে যাবে- সেই ব্যবস্থা করার বিষয়টি ভাবছে কমিশন।
তাছাড়া অন্যান্য তথ্য পর্যায়ক্রমে পূরণ করে ক্রেডিট কার্ড বা অন্য কোনো ডিজিটাল উপায়ে ফি জমা দেওয়ার মাধ্যমে যাতে সহজে বিও হিসাব খোলা যায় তা নিয়ে দ্রুত কাজ চলছে। কাজ শেষ হলে কমিশন একটি নির্দেশনা জারি করবেন। এর ফলে ঘরে বসে একজন বিনিয়োগকারী অনলাইনে বিও হিসাব খোলতে পারবেন। এতে বিদ্যমান ব্যবস্থায় ব্রোকারেজ হাউজে গিয়ে ফরম পূরণ করে বিও হিসাব খোলতে যে সময় অপচয় হতো তা হবে না। ফলে বিনিয়োগকারীরা বাজারে আসতে উৎসাহিত হবে। বাজারে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়বে।
এ সম্পর্কে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম রাইজিংবিডিকে বলেন, বিও হিসাব খোলা সহজ করতে ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করার বিষয়টি নিয়ে কাজ করছে কমিশন। কাজ শেষ হলে এ বিষয়ে জানাবে বিএসইসি। এ পদ্ধতিতে চালুর মাধ্যমে বিও হিসাব খোলা বিনিয়োগকারীদের জন্য সহজ হবে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, পুঁজিবাজারে বিনিয়োগের পূর্ব শর্ত বিনিয়োগকারীর বেনিফিশিয়ারি ওনার্স (বিও) হিসাব থাকা। আর বিও হিসাব খোলতে একজন বিনিয়োগকারী বিদ্যমান পদ্ধতিতে অনেক সময় লাগে। এতে বিরক্তির কারণে অনেকেই বিও হিসাব খোলতে চায় না। এতে বাজারে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ আশানুরূপ হচ্ছে না। বিএসইসি ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারের মাধ্যমে বিও হিসাব খোলার যে উদ্যোগ নিয়েছে তা বাস্তবায়ন হলে পুঁজিবাজারে বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ বাড়বে। এতে বাজার গতিশীল হতে ভূমিকা রাখবে।
প্রসঙ্গত, নিয়মানুযায়ী ব্রোকারেজ হাউজ বিও হিসাব খোলার আবেদন ফরম সংগ্রহ করতে হয়। আর তা যথাযথভাবে পূরণ করে আবেদনকারীর পাসপোর্ট সাইজের দুই কপি ছবি, আবেদনকারী এবং নমিনির জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি, নমিনির ছবি, ব্যাংক স্টেটমেন্ট বা ব্যাংক চেকের কপি, যৌথ হিসাবের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় দ্বিতীয় আবেদনকারীর পাসপোর্ট সাইজের দুই কপি ছবি এবং ফি জমা দিতে হয়।