আস্থা সংকট আর মহামারি করোনাভাইরাসের প্রকোপে নিস্তেজ হয়ে পড়া দেশের পুঁজিবাজার আবার চাঙা হয়ে উঠেছে। করোনার প্রথম দিকে বাজার নিম্নমুখী থাকলেও পরবর্তী সময়ে তা ঘুরে দাঁড়াতে সক্ষম হয়। এরপর আবারও কিছুদিন ছন্দপতন হয়। পরে আবারও স্বরূপে ফিরেছে বাজার। ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে মূল্যসূচক ও লেনদেন। পাশাপাশি নিয়মিতই বাড়ছে বাজার মূলধন।
সাম্প্রতিক বাজারচিত্র লক্ষ্য করলে দেখা যায়, প্রতিদিন গড়ে দুই হাজার কোটি টাকা করে বাড়ছে ডিএসইতে তালিকাভুক্ত কোম্পানি ও মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটদর। এক পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত পাঁচ কার্যদিবসে ডিএসইতে বাজার মূলধন বেড়েছে প্রায় ১০ হাজার কোটি টাকা। পাঁচ কার্যদিবস আগে বাজার মূলধন ছিল ৩ লাখ ৯০ হাজার কোটি টাকা। গতকাল তা স্থির হয় তিন লাখ ৯৯ হাজার ২৭৮ কোটি টাকায়। অর্থাৎ প্রতিদিন গড়ে প্রায় দুই হাজার কোটি টাকা করে বাড়ছে বাজার মূলধন। পাশাপাশি এ সময় ডিএসইর প্রধান সূচক বাড়তে দেখা যায় ৯৩ পয়েন্ট। পাঁচ কার্যদিবস আগে ডিএসইর সূচক ছিল চার হাজার ৮৮১ পয়েন্টে, গতকাল দিন শেষে যা স্থির হয় চার হাজার ৯৭৪ পয়েন্টে।
গত ৮ মার্চ বাংলাদেশে করোনাভাইরাস শনাক্ত হওয়ার পর পুঁজিবাজারে লেনদেন সচল থাকবে কি থাকবে না তা নিয়ে দ্বিধাদ্বন্দ্ব দেখা দেয়। এর মধ্যেও প্রায় বিনিয়োগকারী শূন্য অবস্থায় পুঁজিবাজারে লেনদেন চলতে থাকে। পরবর্তী সময়ে ২৬ মার্চ থেকে করোনা মহামারির কথা চিন্তা করে সারা দেশে সাধারণ ছুটি ঘোষণা করা হলে পুঁজিবাজারেও লেনদেন বন্ধ রাখা হয়। দীর্ঘ ৬৬ দিন পর ৩১ মে থেকে আবারও লেনদেন শুরু হয়। এরপর থেকে ধীরে ধীরে গতি পেতে থাকে পুঁজিবাজার। পরবর্তী সময়ে দেখা যায় ধারাবাহিক ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতা।
বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে পুঁজিবাজার-সংশ্লিষ্টরা বলেন, বাজার এখন ধারাবাহিকভাবে ঊর্ধ্বমুখী প্রবণতায় রয়েছে। পাশাপাশি বাজারে প্রতিদিনই নতুন নতুন বিনিয়োগকারী যোগ হচ্ছে। ফলে লেনদেন ও সূচক বৃদ্ধির পাশাপাশি তালিকাভুক্ত সিংহভাগ প্রতিষ্ঠানের শেয়ারদরও বাড়ছে, যার জের ধরে বাড়ছে বাজার মূলধন। ভবিষ্যতে বাজার মূলধন আরও বাড়বে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তারা।
এ প্রসঙ্গে ডিএসইর পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, ‘আমাদের পুঁজিবাজারের অবস্থা বর্তমানে অনেক দেশের চেয়ে ভালো রয়েছে। আশার করছি এ ধারা অব্যাহত থাকবে। বাজার স্থিতিশীল থেকে বাজার মূলধন বাড়ে সেটাকে স্বাভাবিক বলা যায়। সবার আগে দরকার ধারাবাহিক স্থিতিশীলতা।’
বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) পুঁজিবাজারে সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে বেশকিছু ইতিবাচক পদক্ষেপ নিয়েছে। বেশ কিছু দুর্বল কোম্পানির প্রাথমিক গণপ্রস্তাব (আইপিও) বাতিল করে দেয়া হয়েছে। অনুমোদন দেয়া হয়েছে কিছু ভালো মানের কোম্পানির অনুমোদন। এছাড়া অনিয়মের অভিযোগে বেশকিছু ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হয়েছে। তালিকাচ্যুত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে আরও কয়েকটি কোম্পানি। নিয়ন্ত্রক সংস্থার এমন ভূমিকার কারণে
বাজারের ওপর বিনিয়োগকারীদের আস্থা বেড়েছে। বাজারে এখন এসবের ইতিবাচক প্রভাব দেখা যাচ্ছে।
তারা বলছেন, এখন যেহেতু পুঁজিবাজার পতন কাটিয়ে উঠছে তাই বিনিয়োগকারীদের সতর্কতার সঙ্গে বিনিয়োগ করতে হবে। হুজুগে বা গুজবে বিনিয়োগ করা উচিত হবে না। কোনোভাবেই বিনিয়োগকারীদের প্যানিক সেল (হুজগে বিক্রি) করা যাবে না। আবার গুজবে পড়ে অতিরিক্ত লাভের আশায় দুর্বল কোম্পানির শেয়ারে বিনিয়োগ করা ঠিক হবে না। বিনিয়োগকারীদের ভালো কোম্পানি বাছাই করে মৌলভিত্তিসম্পন্ন কোম্পানিতে বিনিয়োগ করতে হবে।
বিষয়টি নিয়ে কথা বললে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা ড. এ বি মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম বলেন, বর্তমানে পুঁজিবাজারের সার্বিক অবস্থা ভালো রয়েছে। তবে বাজারের অবস্থা যেমনই থাকুন বিনিয়োগকারীদের উচিত সতর্ক বিনিয়োগ করা। কোম্পানির আর্থিক অবস্থা দেখে বিনিয়োগ করা।