পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত গ্রামীণফোনের (জিপি) থেকে ২৬৬১ কোটি টাকারও বেশি সম্পদ রয়েছে আরেক মোবাইল অপারেটর কোম্পানি রবি আজিয়াটার। তারপরেও কোম্পানিটিকে দীর্ঘ ২৫ বছরের পথচলার পরে এসে মুনাফা করতে হিমশিম খেতে হচ্ছে। জিপি যেখানে বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা মুনাফা করছে, সেখানে রবিকে লোকসানের হাত থেকে রক্ষা পেতে লড়াই করতে হচ্ছে।
কোম্পানি দুটির ২০১৯ সালের আর্থিক হিসাব বিশ্লেষনে এমন তথ্য পাওয়া গেছে।
প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, রবি আজিয়াটার ২০১৯ সালের ৩১ ডিসেম্বর স্থায়ী সম্পদের পরিমাণ দাড়াঁয় ১৫ হাজার ৪৩৪ কোটি ৭১ লাখ টাকায়। যার পরিমাণ গ্রামীণফোনে ছিল ১২ হাজার ৭৭৩ কোটি ৫৩ লাখ টাকা। এ হিসাবে রবি এগিয়ে ২ হাজার ৬৬১ কোটি ১৮ লাখ টাকা বা ২১ শতাংশ।
এসত্ত্বেও ২০১৯ সালে রবির মুনাফা হয়েছে ১৬ কোটি ৯১ লাখ টাকা। যার পরিমাণ জিপির ছিল ৩ হাজার ৪৫১ কোটি ৬৮ লাখ টাকা।
এদিকে ব্যবসার মন্দাবস্থা নিয়ে রবি আজিয়াটার ব্যবস্থাপনা পরিচালক ও সিইও মাহতাব উদ্দিন আহমেদ বলেন, ২০১৯ সালে অতিরিক্ত কর আরোপের কারনে ৯৫ শতাংশ সঞ্চিতি গঠন করতে হয়েছে। ওই বছরে টার্নওভার ট্যাক্স ০.৭৫ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ২ শতাংশ করায় এমনটি করতে হয়েছে। আমরা আইপিও’র শর্ত হিসেবে এই টার্নওভার ট্যাক্স কমিয়ে অন্যান্যদের সমান করার কথা বলেছি।
তবে রবির কর সঞ্চিতি শতভাগ বাদ দিলেও আহামরি কোন উন্নতি হচ্ছে না। দেখা গেছে, কোম্পানিটির ২০১৯ সালে করপূর্ব মুনাফা হয়েছিল ৩৭৮ কোটি ৯০ লাখ ৭ হাজার টাকা। যা শেয়ারপ্রতি হিসেবে হয় ৮০ পয়সা।
আর স্বাভাবিক কর হার ৪৫ শতাংশ (টার্নওভার ট্যাক্স ছাড়াই) বিবেচনায় মুনাফা হয় ২০৮ কোটি ৩৯ লাখ ৫৩ হাজার টাকা বা ইপিএস ৪৪ পয়সা। আর তালিকাভুক্ত গ্রামীণফোনের ন্যায় ৪০ শতাংশ কর হার বিবেচনায় মুনাফা হয় ২২৭ কোটি ৩৪ লাখ ৪ হাজার টাকা বা ইপিএস ৪৮ পয়সা।
গ্রামীণফোনের কাছে গত ৩১ ডিসেম্বর নিট সম্পদের (দায় বাদে) পরিমাণ ছিল ৩ হাজার ৮৩৪ কোটি ৭৪ লাখ টাকার। একইসময়ে রবির কাছে ছিল ৫ হাজার ৯৫৮ কোটি ৮৯ লাখ টাকা। এক্ষেত্রে রবি ২ হাজার ১২৪ কোটি ১৫ লাখ টাকার বেশি নিট সম্পদ ছিল। তারপরেও কোম্পানিটি টার্নওভার হয় জিপির অর্ধেক। এক্ষেত্রে অর্ধেক হলেও মুনাফা হয়েছিল মাত্র ০.৪৯ শতাংশ।
তাছাড়া এক শীর্ষস্থানীয় মার্চেন্ট ব্যাংকের প্রধান নির্বাহি কর্মকর্তা (সিইও) বলেন, রবির সম্পদের তুলনায় মুনাফা করতে এখনো লড়াই করাটা অস্বাভাবিক এবং হতাশার। জিপির থেকে ২ হাজার কোটি টাকার বেশি সম্পদ নিয়েও বর্তমান পরিস্থিতি জন্য ম্যানেজমেন্টের অদক্ষতা দায়ী।
এছাড়া অভ্যন্তরীন অন্য কোন বিষয় থাকতে পারে, যা প্রকাশ করছে না। তাই বলে ট্যাক্সের হার বেশি বলে নামমাত্র মুনাফা হওয়ার যে ব্যাখ্যা দেয়, তা গ্রহণযোগ্য না। কারন কোম্পানিটির ট্যাক্স প্রভিশনিং পূর্ব মুনাফাই দূর্বল।
সম্পদের তুলনায় রবি টার্নওভারে অনেক পিছিয়ে রয়েছে। মোবাইল অপারেটর শিল্পের সম্পদের সমপরিমাণ টার্নওভার হলেও রবির তা ৪৭ শতাংশ। এছাড়া সম্পদ ব্যবহারের তুলনায় মুনাফার হার শিল্পের ক্ষেত্রে ২৪ শতাংশ হলেও রবির মাত্র ০.১১ শতাংশ।
এই শিল্পের অপারেটিং প্রফিট রেশিও যেখানে ৪৬ শতাংশ, সেখানে রবির হার ১১.৫৭ শতাংশ। আর নিট প্রফিট রেশিও শিল্পের ২৪ শতাংশ হলেও রবির মাত্র ০.২৩ শতাংশ।
এছাড়া ইক্যুইটি বা নিট সম্পদ ব্যবহারের তুলনায় শিল্পের মুনাফার হার ৯২ শতাংশ হলেও রবির মাত্র ০.২৮ শতাংশ।
অন্যদিকে মোবাইল অপারেটর শিল্পের শেয়ারপ্রতি নিট নগদ প্রবাহ যেখানে ৪২.৫০ টাকা, সেখানে রবির মাত্র ৬.১০ টাকা।
তথ্যানুযায়ী, রবি সম্পদে এগিয়ে থাকলেও নগদ টাকায় পিছিয়ে। এ কোম্পানিটির হাতে ৩১ ডিসেম্বর নগদ টাকা ছিল ৪৫১ কোটি ৭০ লাখ টাকা এবং স্বল্পমেয়াদি এফডিআর ছিল ৩৫ কোটি ৩৬ লাখ টাকা। আর জিপির কাছে একইসময় নগদ টাকা ছিল ১ হাজার ৩৭৬ কোটি ৭ লাখ টাকা। যে কারনে বিনিয়োগসহ যেকোন প্রয়োজনে রবির চেয়ে জিপির কাজ করাটা সহজ।