কয়েকটি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দর বৃদ্ধির কারণ অনুসন্ধানে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এন্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি) কর্তৃক তদন্ত কমিটি গঠনে প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন বিনিয়োগকারীরা। তদন্ত কমিটি গঠনের এই উদ্যোগে তারা চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন। তারা বলছেন, নিয়ন্ত্রক সংস্থার এই আচরণ একপেশে ও স্থিতিশীল বাজারের পরিপন্থী।
বিনিয়োগকারীদের যুক্তি হলো-মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতে দর বেড়েছে ফ্লোর প্রাইস থেকে সর্বোচ্চ ১২০ শতাংশ। অথচ ইন্সুরেন্স খাতে দর বেড়েছে ফ্লোর প্রাইস থেকে ৩০০ শতাংশ থেকে ৫০০ শতাংশ। কিন্তু সেখানে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কোন মাথাব্যথা নেই।
তারা বলছেন, মিউচ্যুয়াল ফান্ড খাতে এখনো বেশিরভাগ দর ফান্ডের দর অভিহিত মূল্যের নিচে। ফান্ডগুলো কেবল অভিহিত মূল্য অতিক্রম করার দিকে অগ্রসর হচ্ছে। এমনি অবস্থায় নিয়ন্ত্রক সংস্থার এই পদক্ষেপ মিউচ্যুয়াল ফান্ডের গতিকে রুদ্ধ করে দেবে।
বিনিয়েগকারীরা বলছেন, সরকারের নানা উদ্যেগের ফলে দীর্ঘ মন্দাভাব কাটিয়ে পুঁজিবাজার কেবল স্থিতিশীলতার পথে হাঁটতে শুরু করেছে। পুঁজিবাজারে কিছুটা চাঙ্গাভাব দেখা দেয়ায় মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোর সম্পদ মূল্যেও গতি দেখা দিয়েছে। এছাড়া, চলতি অর্থবছরের জুলাই-সেপ্টেম্বর প্রান্তিকে মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলো আশাতীত মুনাফা করেছে। মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলো যেখানে অনেকদিন লোকসানে আটকে ছিল, সেখানে ৩৭টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৩২টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডই মুনাফায় ফিরেছে এবং ফান্ডগুলোর সম্পদ মুল্যও ক্রয় মূল্যের তুলনায় অনেক বেড়েছে। অনেক ফান্ডের বাজার মূল্যের ভিত্তিতে সম্পদ মূল্য ইতোমধ্যে ক্রয় মূ্ল্য অতিক্রম করেছে। এ কারণে মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোর দরেও গতি ফিরতে শুরু করেছে।
এদিকে, মিউচ্যুয়াল ফান্ডকে ভাইব্রেন্ট বা চাঙ্গা করতে খোদ নিয়ন্ত্রক সংস্থার চেয়ারম্যান, সদস্যরা এবং কমিশনের কর্মকর্তারা বিভিন্ন সভা-অনুষ্ঠানে অবিরত নানা সংস্কারের কথা বলে আসছেন। নীতি-নির্ধারকদের উৎসাহব্যঞ্জক নানা বক্তব্য, মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোর অর্জিত মুনাফা এবং সম্পদ মূল্য বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে মিউচ্যুয়াল ফান্ডগুলোর দরও বাড়তে শুরু করেছে। তারপরও এখনো ৩৭টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে বেশিরভাগ ফান্ড অভিহিত মূল্যের নিচে রয়েছে। যখন ফান্ডগুলো অভিহিত মূল্য অতি্ক্রম করার পথে অগ্রসর হচ্ছে, তখন হঠাৎ করে নিয়ন্ত্রক সংস্থা কর্তৃক ৫টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দর খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠনের উদ্যোগ খাতটির অগ্রসর হওয়ার পথে নি:সন্দেহে বড় প্রতিবন্ধকতা তৈরি করবে।
যে ৫টি ফান্ডের দর নিয়ে তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে, সেই ৫টি ফান্ড সম্পর্কে বিনিয়োগকারীরা বলছেন, ফ্লোর প্রাইস থেকে ফান্ডগুলোর দর বেড়েছে সর্বোচ্চ ১২০ শতাংশ। এরমধ্যে ফান্ডগুলোর মুনাফা অর্জনের খবর এসেছে ৩০০ শতাংশ থেকে ৪০০ শতাংশ। এতদিন মিউচ্যুয়াল ফান্ড সম্পর্কে নিয়ন্ত্রক সংস্থার কর্মকর্তারা বিনিয়োগকারীদের নানা সোনালী ভবিষ্যতের স্বপ্ন দেখিয়েছেন। এখন বিনিয়োগকারীদের হঠাৎ করে অন্ধকারের দিকে ঠেলে দিচ্ছেন।
তারা অভিযোগ করছেন, কমিশনের কর্মকর্তাদের সাথে যাদের দহরম-মহরম রয়েছে, তারা তদন্ত কমিটি গঠনের বিষয়টি জানতো বলে গত দুইদিন যাবত তাদের হাতে থাকা মিউচ্যুয়াল ফান্ড তারা বিক্রি করেছে। অথচ সাধারণ বিনিয়োগকারীরা তদন্ত কমিটি গঠনের খবর জানতো না বলে তারা মিউচ্যুয়াল ফান্ড কিনেছেন। যে কারণে আজ মঙ্গলবার (১৭ নভেম্বর) সেল প্রেসারে ৩৭টি মিইচ্যুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৩৬টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডই প্রায় ক্রেতাশুন্য থাকে।
বিনিয়োগকারীরা বলছেন, সাম্প্রতিকালে ইন্সুরেন্স খাতের কোম্পানিগুলোর শেয়ার দর ৪ গুণ থেকে ৬ গুণ বেড়েছে। কিন্তু সেই খবর নিয়ন্ত্রক সংস্থার চোখে পড়েনি। এক্ষেত্রে তারা এশিয়া ইন্সুরেন্স, ইস্টার্ন ইন্সুরেন্স, প্রভাতী ইন্সুরেন্সসহ আরও কয়েকটি ইন্সুরেন্সের নাম উল্লেখ করে। যেগুলোর দর ফ্লোর প্রাইস থেকে প্রায় ৪ থেকে ৬ গুণ বেড়েছে। কিন্তু যে ৫টি মিউচ্যুয়াল ফান্ডের জন্য তদন্ত কমিটি গঠিত হয়েছে, সেগুলোর দর সর্বোচ্চ ১২০ শতাংশ বেড়েছে। এর মধ্যে এনসিসিবিএল মিউচ্যুয়াল ফান্ড মাত্র অভিহিত মূল্য অতিক্রম করছিল।
বিনিয়োগকারীরা অভিযোগ করছেন, মিউচ্যুয়াল ফান্ডের তদন্ত কমিটি গঠনের পেছনে ইন্সুরেন্স খাতের বড় বিনিয়োগকারীদের হাত রয়েছে। কারণ যখন থেকে মিউচ্যুয়াল ফান্ডে গতি ফিরতে শুরু করেছে, তখন থেকে ইন্সুরেন্স খাতের শেয়ার দর নিম্নমুখী হয়েছে। আর যারা ইন্সুরেন্সের শেয়ারদর আকাশচুম্বী করে বিনিয়োগকারীদের কাঁধে চাপাতে পারছিল না, তারা শুরু থেকেই মিউচ্যুয়াল ফান্ডের বিরুদ্ধে আধা-জল খেয়ে নেমে যায়। এখন মিউচ্যুয়াল ফান্ডের দর খতিয়ে দেখতে তদন্ত কমিটি গঠন হওয়াতে তাদের পোয়াবারো। তারা এখন নির্বিঘ্নে ইন্সুরেন্সের শেয়ার সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাঁধে চাপানোর সুযোগ পাবে।