দেশের লাইফ ও নন-লাইফ বীমা ব্যবসার প্রসারে ‘ব্যাংকাস্যুরেন্স’ চালু করতে যাচ্ছে সরকার। এ লক্ষ্যে এরইমধ্যে ব্যাংকাস্যুরেন্স নীতিমালার একটি খসড়া প্রস্তুত করেছে রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান বীমা উন্নয়ন ও নিয়ন্ত্রণ কর্তৃপক্ষ (আইডিআরএ) ।
আজ মঙ্গলবার কর্তৃপক্ষের ওয়েবসাইটে খসড়া নীতিমালাটি প্রকাশ করা হয়েছে।
উক্ত বিষয়ে আগামী ৭ কার্যদিবসের মধ্যে বীমা কোম্পানিগুলোকে মতামত পাঠাতে বলা হয়েছে। মতামত পাঠাতে হবে ই-মেইলে সফটকপি (মাইক্রোসফট ওয়ার্ডে) ও হার্ডকপি (পিডিএফ) আকারে।
বিশেষজ্ঞদের পাশাপাশি সাধারণ মানুষও খসড়া বিষয়ে মতামত প্রদান করতে পারবে বলে জানিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা আইডিআরএ।
নীতিমালার খসড়া অনুসারে, বাংলাদেশ ব্যাংক দ্বারা প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষাভাবে নিয়ন্ত্রিত যেকোন প্রতিষ্ঠান বা সংস্থা এবং আর্থিক প্রতিষ্ঠান ব্যাংকাস্যুরেন্স এজেন্ট হওয়ার যোগ্যতা রাখে। এক্ষেত্রে আবেদনকারী ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান মেমোরেন্ডাম অব আন্ডারস্ট্যান্ডিং (এমওইউ) বা অন্য কোন দলিলের মাধ্যমে এজেন্ট হিসেবে লাইসেন্সপ্রাপ্তির পর বীমা ব্যবসা সংগ্রহ করা নিশ্চিত করবে।
কোন ব্যাংকাস্যুরেন্স এজেন্ট নির্দিষ্ট প্রকারের বীমা কোম্পানির তিনের অধিক লাইফ বা নন-লাইফ বীমা কোম্পানির সাথে যুক্ত হতে পারবে না। বীমা কোম্পানিকে এজেন্টের সাথে চুক্তির আগে কর্তৃপক্ষের অনুমোদন নিতে হবে এবং ব্যাংকাস্যুরেন্স এজেন্টকে অনুমোদন নিতে হবে বাংলাদেশ ব্যাংকের।
ব্যাংকের সম্মানীর বিষয়ে নীতিমালায় বলা হয়েছে, করপোরেট বীমা এজেন্ট হিসেবে বীমা ব্যবসা সংগ্রহ ও পরিচালনার জন্য ব্যাংকের সম্মানীর মাত্রা নির্ধারিত হবে তার কর্মদক্ষতার নির্ণায়কের ওপর যাতে বীমাকারী ও ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান একমত হবে। সম্মানীর কাঠামো ও হার ব্যাংকাস্যুরেন্স চুক্তিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ থাকতে হবে।
প্রধান ব্যাংকাস্যুরেন্স নির্বাহীর ক্ষেত্রে কোন স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় বা ইনস্টিটিউট থেকে স্নাতক বা সমমানের পরীক্ষায় পাসের যোগ্যতা থাকতে হবে। প্রত্যেক প্রধান ব্যাংকাস্যুরেন্স নির্বাহী এবং নির্দিষ্ট ব্যক্তির প্রত্যেককে বীমা আইন ২০১০ এর ধারা ১২৫(২) এবং ১২৪(৪) এর অধীন নির্দিষ্ট কোন অযোগ্যতা থাকতে পারবে না। এ ছাড়াও প্রয়োজন কর্তৃপক্ষ কর্তৃক সময়ে সময়ে নির্ধারিত অন্য কোন যোগ্যতা।
তাছাড়া আবেদনকারী একটি ব্যাংকাস্যুরেন্স প্রাতিষ্ঠানিক এজেন্ট নিয়োগকারী হিসেবে কাজ করার লাইসেন্স পেতে চাইলে নির্ধারিত ফরমের সাথে ২০০০ টাকাসহ কর্তৃপক্ষের নিকট আবেদন করতে হবে। আবেদনকারীকে বিবেচনা করার সময় কর্তৃপক্ষ আবেদনকারী বা তার প্রবর্তকদের বা শেয়ারহোল্ডারদের দ্বারা বীমা পরিকল্ বিতরণের ওপর প্রবাব ফেলার সমস্ত বিষয় বিবেচনায় রাখবে।
ব্যাংকাস্যুরেন্সের জন্য প্রদত্ত লাইসেন্সটি ৩ বছরের জন্য প্রদান করা হবে। একই লাইসেন্স পরবর্তীতে ৩ বছর করে নবায়ন করা যাবে। প্রত্যেক ব্যাংকাস্যুরেন্স এজেন্ট ১০০০ টাকা প্রদান সাপেক্ষে নির্ধারিত ফরমে নবায়নের আবেদন করবে এবং লাইসেন্সের মেয়াদ পূর্তির ৩০ দিন পূর্বে কর্তৃপক্ষ বরাবরে আবেদন করবে।
এদিকে নবায়নের আবেদনের সাথে প্রধান ব্যাংকাস্যুরেন্স এজেন্ট নির্বাহীসহ শাখায় কর্মরত এজেন্ট বা এজেন্টগণের বাধ্যতামূলকভাবে বাংলাদেশ ইন্স্যুরেন্স একাডেমির ২ সপ্তাহ ট্রেনিংয়ের সার্টিফিকেটের কপি জমা দিতে হবে। কোন লাইসেন্স স্থগিত করা হলে কর্তৃপক্ষের নিকট ১০০০ টাকা ফিসহ আবেদনের প্রেক্ষিতে কর্তৃপক্ষ সন্তুষ্ট হলে পুনরায় লাইসেন্স প্রদান করতে পারবে।
এছাড়া চুক্তির ভিত্তি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে, কোন ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান বীমাকারীর পক্ষে বীমা পরিকল্পসমূহ এমনভাবে বিক্রি করবে যাতে অবশ্যই প্রতীয়মান হয় যে, সম্ভাব্য ক্রয়কারী বীমা চক্তিতে আবদ্ধ হওয়ার জন্য আবেদনপত্রে স্বাক্ষরের মাধ্যমে, নিজস্ব ই-মেইলের মাধ্যমে অথবা অনলাইনে আবেদনের মাধ্যমে একটি প্রস্তাব করবে এবং বীমাকারীর পক্ষ থেকে ব্যাংক বা আর্থিক প্রতিষ্ঠান তা গ্রহণ করবে অথবা বীমাকারী নিজেই তা সরাসরি গ্রহণ করবে। প্রস্তাব ও তা গ্রহণের প্রমাণাদি ব্যতিরেকে কোন বীমা বিক্রি সম্পন্ন হবে না এবং বীমা চুক্তি হয়নি বলে গণ্য হবে।