বাংলাদেশে ব্যবসার পরিবেশ ও ট্যাক্স জটিলতা নিয়ে অর্থমন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামালের সঙ্গে বৈঠক করেছে জাপানের রাষ্ট্রদূত নাওকি ইতোর নেতৃত্বে দেশটির একটি প্রতিনিধি দল। শনিবার (১৬ নভেম্বর) বেলা ১১টা থেকে কয়েক ঘণ্টা ধরে এ বৈঠক চলে।
বৈঠকের পর দুপুর আড়াইটার দিকে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী ও বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত জাপানি কোম্পানিগুলোর বাংলাদেশে বড় বিনিয়োগে আসার ইঙ্গিত দেন।
সংবাদ সম্মেলনে অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল বলেন, ‘নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারে জাপানিদের জন্য বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চল হচ্ছে। সেটার কার্যক্রম নির্ধারিত আছে। প্রধানমন্ত্রীর অফিস থেকে সেটা সম্পর্কে নির্দেশনা আমরা মাঝে মাঝেই পাই। এটা অগ্রাধিকার প্রকল্প। আমরা আশা করছি, আড়াইহাজারের অর্থনৈতিক অঞ্চলে জাপানিদের কাছ থেকে বড় বিনিয়োগ আসছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আমরা অনেক বড় আকারের বিনিয়োগ জাপানের কাছ থেকে প্রত্যাশা করি। জাপানের রাষ্ট্রদূত বলেছেন, আমাদের সব অবকাঠামো ঠিক আছে। প্রধানমন্ত্রী নিজেও প্রো-অ্যাক্টিভলি কাজ করছেন। জাপানের বিনিয়োগ এ দেশে বাড়ানোর জন্য প্রধানমন্ত্রী একাধিকবার জাপান সরকারের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। আমি আশা করি, প্রত্যাশিতভাবে আগামীতে এ দেশে জাপানের বিনিয়োগ বাড়বে। জাপানের প্রধানমন্ত্রী যখন বাংলাদেশে আসবেন কিংবা বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী যখন জাপানে যাবেন, কী পরিমাণ বিনিয়োগ হবে তখন তা নির্ধারিত হবে।’
জাপানি কোম্পানিগুলো বাংলাদেশে যে ট্যাক্স-সংক্রান্ত সমস্যায় পড়েছে, তা সমাধানে এ সময় আশ্বাস দেন অর্থমন্ত্রী।
রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ যে সুবিধা দিতে যাচ্ছে, তাতে এ দেশের ওপর নেতিবাচক প্রভাব ফেলতে পারে কি-না, জানতে চাইলে জাপানের রাষ্ট্রদূত বলেন, ‘এ সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন হলে জাপানি কোম্পানিগুলো ভালো ব্যবসায়িক পরিবেশ পাবে। সব বিদেশি কোম্পানিই এ সুবিধা পাবে। এতে জাপানি কোম্পানিসহ সব বিদেশি কোম্পানি তাদের ব্যবসা বাংলাদেশে সম্প্রসারিত করবে, বাংলাদেশের রফতানি আয় ও রাজস্ব আদায়ও বাড়বে। একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে।’
তিনি বলেন, ‘আমি মনে করি, আমাদের উদ্দেশ্য এক যে, কীভাবে বাংলাদেশের অর্থনীতিকে শক্তিশালী করা যায়, কীভাবে ব্যবসার পরিবেশ উন্নত করা যায়।’ আজকের এ আলোচনা থেকে ইতিবাচক ফল পাব- আশা প্রকাশ করেন জাপানের রাষ্ট্রদূত।
অর্থমন্ত্রী মুস্তফা কামাল বলেন, ‘কিছু কিছু জায়গায় ভ্যাট ও রয়ালিটি নিয়ে তাদের অভিযোগ আছে। এগুলো সময় মতো তারা অনেক জায়গায় ক্লেইম (অভিযোগ) করেননি। সময়মতো ক্লেইম না করায় এগুলো ঝুলন্ত অবস্থায় আছে। এনবিআরের চেয়ারম্যান আশ্বস্ত করেছেন, তাদের নিয়ে আরেক দিন বসলেই বিষয়গুলো সুরাহা হয়ে যাবে।’
‘এছাড়া গুরুতর যেসব সমস্যা আছে, সেগুলোও প্রসিডিউরাল (প্রক্রিয়াগত)। এতে আইনি কোনো জটিলতা নাই’ বলেও জানান অর্থমন্ত্রী। বলেন, ‘যেহেতু আইনি জটিলতা নাই, আমাদের জায়গা থেকে সেগুলো সমাধান করতে পারব। এখান থেকে আমরা যে সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আগামী দিনগুলোতে যেন একই রকম সমস্যা না হয়, সেগুলো আমরা যতটা সম্ভব চিহ্নিত করতে পেরেছি।’
এছাড়া জাপানিদের অন্য প্রকল্পগুলোতেও যেসব ছোটখাটো সমস্যা আছে, সেখানে তাদের করণীয় ও আমাদের করণীয় কী এবং সেগুলো কীভাবে সমাধান করা যায়, সেজন্য আজ বসেছিলাম- যোগ করেন তিনি। বলেন, ‘জাপানের সঙ্গে যে প্রকল্পগুলো আছে, সবগুলোই সুন্দরভাবে চলছে। কাজ এগিয়ে যাচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি, যে সময় নির্দিষ্ট আছে, সেই সময়ের মধ্যেই প্রকল্পের কাজ শেষ হবে। মাতারবাড়ি, মেট্রোরেলসহ সব প্রকল্পেই তারা সন্তুষ্ট।’
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মোশাররফ হোসেন ভূঁইয়া, অর্থ মন্ত্রণালয়ের আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সিনিয়র সচিব আসাদুল ইসলাম, বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর আহমেদ জামাল ও মনিরুজ্জামান।
এছাড়া বৈঠকে জাপান কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিজ অ্যাসোসিয়েশন ইন ঢাকা, সুমিতোমো করপোরেশন, মেরুবেনি ও অন্যান্য কোম্পানি, নিপ্পন সিগন্যাল, টেকেন, মাতারবাড়ি প্রকল্প, ওমেরা গ্যাস ওয়ান, জেট্রো, মারুহিসা, ক্যাট গার্মেন্টের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
শেয়ারবার্তা / হামিদ