পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেডের পরিচালনা পর্ষদ গত ২৪ অক্টোবর অনুষ্ঠিত ১১৩তম বোর্ড সভায় শেফার্ড জিন্স লিমিটেড নামে একই গ্রুপভুক্ত নতুন একটি কোম্পানির ১ কোটি ৫৫ লাখ শেয়ার কেনার সিদ্ধান্ত নেয়। ১০ টাকা অভিহিত মূল্যে মোট শেয়ারমূল্য ধরা হয় ১৫ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এর মাধ্যমে মূলত শেফার্ড জিন্সের জমি, ফ্যাক্টরি বিল্ডিং ও যন্ত্রাংশ কেনার কথা ছিল কোম্পানিটির। কিন্তু বেশকিছু তথ্যে গরমিল পাওয়ায় সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ অধ্যাদেশের ২০(এ) ধারা অনুযায়ী শেফার্ড জিন্সের শেয়ার কেনা ও সম্পদ হস্তান্তর করা থেকে বিরত থাকতে ইস্যুয়ার কোম্পানি শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজকে নির্দেশ দিয়েছে নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)।
গত বৃহস্পতিবার রাতে পাঠানো কমিশনের নির্দেশনায় বলা হয়, শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালনা পর্ষদ তাদের ১১৩তম পর্ষদ সভায় জমি, ভবন ও যন্ত্রাংশের যে ভ্যালুয়েশন করেছে তাতে কমিশনের ২০১৩ সালের ১৮ আগস্টের বিজ্ঞপ্তির ব্যত্যয় ঘটেছে। শেফার্ড জিন্স লিমিটেড নামক কোম্পানিটির ট্যাক্স আইডেন্টিফিকেশন নাম্বার (টিআইএন), ট্রেড লাইসেন্স, ইমপোর্ট রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট (আইআরসি), এক্সপোর্ট রেজিস্ট্রেশন সার্টিফিকেট (ইআরসি), বন্ডেড ওয়্যারহাউজ লাইসেন্স, ভ্যাট রেজিস্ট্রেশন নাম্বার, বিজিএমইএ মেম্বারশিপ নাম্বার, ইপিবি লাইসেন্স নাম্বার, ফ্যাক্টরি লাইসেন্স নাম্বার, ফায়ার লাইসেন্স নাম্বার ও এনভায়রনমেন্ট ক্লিয়ারেন্স সার্টিফিকেট এখনো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
নির্দেশনায় বলা হয়, শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজ ও শেফার্ড জিন্স উভয় কোম্পানিরই নিবন্ধিত কার্যালয় ও ফ্যাক্টরি ঠিকানা একই। তার মানে শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজেরই ঠিকানা ব্যবহার করছে নতুন শেফার্ড জিন্স। অন্যদিকে, শেফার্ড জিন্সের পরিচালক মাত্র দুজন, যারা একই সঙ্গে শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজের চেয়ারম্যান ও ব্যবস্থাপনা পরিচালক। তার মানে ট্রান্সফারর ও ট্রান্সফারি উভয়ই রিলেটেড পার্টি। সম্পদ হস্তান্তর ও শেয়ার অধিগ্রহণ বিষয়ে উভয় কোম্পানির পর্ষদ সভাও অনুষ্ঠিত হয় একই দিনে।
নির্দেশনায় আরো বলা হয়, শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পর্ষদ সভায় গ্রাউন্ড ফ্লোরসহ শেফার্ড জিন্সের তিনতলা ভবন ক্রয়ের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গৃহীত হলেও জমাকৃত নকশায় দেখা যায়, ভবনটি গ্রাউন্ড ফ্লোরসহ চারতলা। আর্টিস্টিক প্রপার্টিজ লিমিটেডের পক্ষে ইস্যু করা ১৪ আগস্ট ২০১৮ তারিখের কার্যাদেশে দেখা যায়, ভবনটির মূল্য ৮ কোটি ২০ লাখ টাকা। কিন্তু ২৪ অক্টোবরের পর্ষদ সভায় জমিসহ ফ্যাক্টরি ভবনের মূল্য দেখানো হয় ৮ কোটি ৭ লাখ টাকা।
শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজের কোম্পানি সচিব মোহাম্মদ আবু জাফর এ বিষয়ে বলেন, চূড়ান্তভাবে শেয়ার ক্রয়ের আগে অবশ্যই থার্ড পার্টির মাধ্যমে শেয়ারের ভ্যালুয়েশন করা হতো। কমবেশি হলে নগদের মাধ্যমে তা মধ্যস্থতা করা হতো। দুটি কোম্পানির একই ঠিকানা এবং ট্রান্সফারার ও ট্রান্সফারি একই হওয়ার বিষয়ে তিনি বলেন, শেফার্ডের সবগুলো সহযোগী প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা একই জায়গায়। আর দুটি কোম্পানির উদ্যোক্তা একই হওয়ায় ট্রান্সফারার ও ট্রান্সফারি একই।
তিনি ভবনের আকার ও মূল্যের গরমিলের বিষয়ে বলেন, ভবনটির তিনতলা পর্যন্ত শেফার্ড জিন্সকে প্রদানের পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়েছিল। সে কারণেই মূল্যের ক্ষেত্রেও পার্থক্য তৈরি হয়েছে। বিএসইসির নির্দেশনার পরিপ্রেক্ষিতে কোম্পানির পরবর্তী করণীয় বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আজ আলোচনার মাধ্যমে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হবে।
এদিকে ৩০ জুন সমাপ্ত ২০১৯ হিসাব বছরের জন্য শেয়ারহোল্ডারদের ১০ শতাংশ লভ্যাংশ প্রদানের সুপারিশ করেছে শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজের পরিচালনা পর্ষদ। ঘোষিত লভ্যাংশ ও অন্যান্য বিষয়ে পর্যালোচনার জন্য ২৬ ডিসেম্বর বার্ষিক সাধারণ সভা (এজিএম) আহ্বান করা হয়েছে। এ-সংক্রান্ত রেকর্ড ডেট নির্ধারণ করা হয়েছে ২৫ নভেম্বর। সমাপ্ত হিসাব বছরে কোম্পানির শেয়ারপ্রতি আয় (ইপিএস) হয়েছে ৯০ পয়সা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১ টাকা ১৫ পয়সা। ৩০ জুন কোম্পানির শেয়ারপ্রতি নিট সম্পদমূল্য দাঁড়িয়েছে ১৭ টাকা ৮৩ পয়সা।
সর্বশেষ অনিরীক্ষিত আর্থিক প্রতিবেদন অনুসারে, চলতি হিসাব বছরের প্রথম প্রান্তিকে (জুলাই-সেপ্টেম্বর) কোম্পানির ইপিএস হয়েছে ২৪ পয়সা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ৪২ পয়সা। ৩০ সেপ্টেম্বর কোম্পানিটির এনএভিপিএস দাঁড়িয়েছে ১৭ টাকা ৭৮ পয়সা, যা আগের বছরের একই সময়ে ছিল ১৮ টাকা ২৪ পয়সা।
২০১৭ সালে তালিকাভুক্ত শেফার্ড ইন্ডাস্ট্রিজের মোট শেয়ার সংখ্যা ১৩ কোটি ৬৬ লাখ ২৬ হাজার ৫৮৫। এর মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের হাতে রয়েছে ৫১ দশমিক ৪৮ শতাংশ। প্রতিষ্ঠান ১৮ দশমিক ৪৯ শতাংশ, বিদেশী ১৯ দশমিক ৮৪ শতাংশ ও সাধারণ বিনিয়োগকারীদের হাতে রয়েছে ১০ দশমিক ১৯ শতাংশ শেয়ার। কোম্পানির অনুমোদিত মূলধন ১৯০ কোটি টাকা ও পরিশোধিত মূলধন ১৩৬ কোটি ৬৩ লাখ টাকা।
শেয়ারবার্তা / আনিস